॥ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ॥
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১৪১৯ বাংলা বছরের সূচনাটা খুব একটা ভালো ঠেকছে না। কী যে হয় এ নিয়ে সবাই চিন্তিত। ১৬ এপ্রিল সোমবার এপিএস ও রেলপথ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বোঝা মাথায় নিয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ রেলমন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। ৩০ ঘণ্টা পার না হতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ঠিকানাবিহীন খামাখা মন্ত্রী বানিয়ে মনে হয় তার রাজনৈতিক জীবনটাই ধ্বংস করে দিলেন। জনগণের ধারণা কোনো বিচার-আচার, নিরপে তদন্ত কিছুই হবে না। তবুও পদত্যাগ করে একটা আস্থার সঞ্চার তিনি করেছিলেন; কিন্তু তা সম্পূর্ণ ধুলোয় মিশে গেছে। এ সম্পর্কে আমি এক জায়গায় লিখেছি, শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিচার-আচার তদন্তে যদি কোনো দিন পূতপবিত্র নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেরিয়ে আসার ীণ সম্ভাবনাকে দায়িত্বহীন ঠিকানাবিহীন মন্ত্রী বানিয়ে তার রাজনৈতিক গুলে টোকা মেরে খতম করে দিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের অনেক পাঠকের হয়তো ‘গুল’ সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। তাই ব্যাপারটা বুঝতে একটু অসুবিধা হতে পারে। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে গ্রামগঞ্জের বৃদ্ধ মানুষ রস বাতের কারণে হাঁটুর নিচে গুল দিত। গুলের পদ্ধতিও ছিল খুবই সরল সোজা। একটা গরম লোহা দিয়ে হাঁটুর নিচে ছ্যাকা দিলেই যে ফোসকা পড়ে ত হতো, সেখানে একটা নিমের ডালের গুলি ব্যান্ডেজ করে রাখলে তা দিয়ে রস ঝরত। তস্থান কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখলে সারা দিন ব্যান্ডেজে যে রস ঝরত তা পরিষ্কার করে নতুন ব্যান্ডেজ করত। আবার সারা রাত যা ঝরত সকালে পরিষ্কার করত। বৃদ্ধ মানুষের এ ছিল প্রতিদিনের নিয়মিত কাজ। এ করে তারা সত্যিই কিছুটা কষ্ট লাঘব করতে পারত। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করায় রাজনৈতিক দুর্নীতির রস ঝরে যেটুকু হালকা হওয়ার কথা ছিল, তা বরং ঝরা বন্ধ হয়ে আরো ভারী হয়েছে। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কোনোমতেই দফতরবিহীন মন্ত্রী বলা চলে না। তিনি যে মুহূর্তে পদত্যাগ করে পতাকাহীন গাড়িতে রেলভবন থেকে বাড়ি ফিরেছেন, সেইমাত্র তার মন্ত্রীর এবং মন্ত্রগুপ্তির শপথ দুটোই ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। তাই তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী রাখতে হলেও আবার শপথবাক্য পাঠ করতে হবে। যতণ হবে না, ততণ তিনি মন্ত্রী না, গায়ের জোরে মন্ত্রী বললেই সেটা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাবে না। এ জন্য ভবিষ্যতে কাউকে না কাউকে জবাবদিহি করতে হতে পারে। কোনো দিন যদি এ দেশে প্রকৃত আইনের শাসনের প্রচলন হয়, শাসকেরা রাগ-অনুরাগের ঊর্ধ্বে উঠে সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন বা করতে পারেন, সেদিন নিশ্চয়ই এসব অসাংবিধানিক কাজকর্মের জবাব দিতে হবে। ’৮৬ সালেও একবার চরম সংবিধানপরিপন্থী কাজ করা হয়েছিল। ’৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধী দল সংসদে যায়নি। তারা সংসদের বাইরে আলাদা সংসদ বসিয়েছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদ একটাই। কোনোমতেই দুটো সংসদ হতে পারে না। সেটারও জবাব দেয়া হয়নি। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে দিতে হবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রেল মন্ত্রণালয়ে সাত হাজার চাকরির দুর্নীতি নিয়ে যখন বাতাসে কান পাতা যাচ্ছিল না, তখন হঠাৎ করেই একজন উদীয়মান রাজনৈতিক যুবনেতা উধাও হয়ে গেলেন। ইলিয়াস আলী দু-দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি। এ রকম একজন রাজনৈতিক মানুষ হারিয়ে যাবেন, তাকে পাওয়া যাবে নাÑ এটা কোনোমতেই মেনে নেয়া যায় না। অথচ বাস্তবতা হলোÑ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় তার ড্রাইভার আনসার আলীসহ তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিয়াস আলীর পরিবার-পরিজনকে সহানুভূতি জানাতে তার বনানীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার একমাত্র মেয়েকে দেখে আমরা স্বামী-স্ত্রী চোখে পানি রাখতে পারিনি। এ রকম অবস্থা যেন শত্র“রও না হয়। কেউ যেন ও রকম অবুঝ শিশুর চোখের পানির মুখোমুখি না হয়। বিবেকবান মানুষের কাছে ওটা কামানের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর চেয়েও কঠিন। সরকার উদাসীন, বিরোধী দল হরতাল দিয়েই খালাস। মানুষ একেবারে দিশেহারা। একজন আরেকজনের ওপর দোষ চাপাতে বড় সিদ্ধহস্ত। দেশের একটা কাকপী হারিয়ে গেলে, গুম হলে যে দায়ভার সরকারের, কেন যেন সরকার এটা কিছুতেই মানতে চায় না। গত শনিবার ২১ এপ্রিল ইলিয়াস আলীর বাড়ি থেকে বেরোনোর পথে সংবাদমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার চাপাচাপিতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলাম। তা ছিলÑ ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ায় আমরা নিন্দা জানাই। তার পরিবার-পরিজনদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভারকে কেন্দ্র করে যে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে, যদিও আমার দল অপ্রয়োজনীয় হরতাল সমর্থন করে না, তবুও ইলিয়াস আলীর খোঁজের জন্য আহূত হরতালকে সমর্থন না করে পারি না। বলেছিলাম, এ হরতাল আমার জন্য, আমার সন্তান-সন্ততির জন্য, সর্বোপরি ১৬ কোটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য। তাই একে সমর্থন না করে আমরা দূরে থাকতে পারি না। বিএনপি আহূত প্রথম দিন হরতাল শেষে আবার দ্বিতীয় দিন হরতাল ডাকা হলে আমরা কিছুটা স্তম্ভিত হই। ভেবেছিলাম বিরোধী দল অন্য কোনো পথে যাবে। কিন্তু আবার তৃতীয় দিন হরতাল ডাকা হলো। সারা দেশে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেল। কিন্তু কুম্ভকর্ণের মতো সরকার ঘুমিয়ে রইল। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প থেকে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম, বিরোধী দলকে হরতালের বিকল্প পথ খুঁজতে, সরকারকে সরকারের মতো দায়িত্বশীল আচরণ করতে আহ্বান জানাব। সেই মতো সমমনা কয়েকটি দলের সাথে কিছু কিছু আলোচনাও হলো। সিদ্ধান্ত অনুসারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ২৪ এপ্রিল মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জীবনে প্রথম সস্ত্রীক পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়েছিলাম। আমি দোজখ দেখিনি। দোজখের যে বিবরণ পড়েছি ও শুনেছি তাতে আমার সেখানে দোজখের আলামত মনে হয়েছে। অসংখ্য পুলিশের মাঝে লোহার দরজা ঠেলে বিএনপি অফিসে ঢোকার পথে পেছন থেকে ছোঁ মেরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ১০-১২ জন নেতাকর্মীকে পুলিশভ্যানে তুলে পল্টন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পেছন ফিরে নেতাকর্মীদের নিয়ে যেতে দেখে আমি যখন পুলিশকে বলি গ্রেফতার করতে হলে আমাকেও করা হোক, আমাকেও নিয়ে চলুন। এতে সামনের দু-তিনজনকে ছেড়ে দিয়ে কিছু পুলিশ সরে যায়। সস্ত্রীক নেতৃবৃন্দসহ বিএনপি অফিসে আন্দোলনকারী নেতাদের সাথে কথা হয়। জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তাদের হরতালের বিকল্প খুঁজতে বলি। বিএনপির প থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনি আমাদের মুরব্বি, আমাদের অভিভাবক, জাতির এই দুঃসময়ে আপনি আমাদের পথ দেখান। জাতীয় এই অরাজকতা দূর করতে ভূমিকা নিন। আমরা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আন্দোলনরত জোটের কাছে হরতালের বিকল্প খুঁজতে পরামর্শ দিতে গিয়েছিলাম। ও রকম সময় সরকারের প থেকে কাউকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হবেÑ এটা কল্পনাও করিনি। আর এটা সত্য, একসাথে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, কিছু নেতাকর্মীকে জেলে রেখে দাঁত কেলিয়ে বাড়ি ফিরতে মন সায় দিচ্ছিল না। তাই সহকর্মীদের ছেড়ে দেয়ার জন্য শর্ত হিসেবে পল্টনের রাজপথে চিরসঙ্গী গামছা বিছিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হাসিনার সরকার ওরচেয়ে বেশি আর কী-ই বা করতে পারে। যে দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, সেই দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সবাই যে আমাকে অথবা মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান করবে, সেটা এখন আর আশা করি না। পুলিশ বা পুলিশদের গুপ্তচরদের মুখ থেকে যেমন আজেবাজে কথা শুনেছি, তেমনি ভালো কথাও শুনেছি। এ-ও শুনেছিÑ ঊর্ধ্বতন দু-একজন পুলিশ কর্মকর্তা খুবই বিরক্ত হয়েছেন। উপযাচক হয়ে কারো কারো বাড়াবাড়ি করার কারণে। রাতেই শুনেছি ঘটনাটি শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাকি যারপরনাই বিরক্ত হয়েছেন এবং আমার সাথে নাকি ও ধরনের বেয়াদবি না করতে হুঁশিয়ার করেছেন। হতে পারে। আবার লেখালেখি করি বলে তার কিছু নেংটি ইঁদুর লাফালাফি করে, তাও হতে পারে। এখন কোনটা সত্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন। আমি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিএনপির অফিসে গিয়েছিলাম বিবেকের তাগিদে। জাসদের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু তাদের সাথে কথা বলেছি। বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর মান্নান, সভাপতি প্রখ্যাত চিকিৎসক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও আরো কারো কারো সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কাউকে পেয়েছি কাউকে পাইনি। আওয়ামী লীগের অফিসে নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলার জন্য ব্যক্তিগতভাবে মাহবুব-উল আলম হানিফকে ফোন করেছি, ধরতে পারিনি। বাহাউদ্দিন নাসিমকে করেছি ব্যস্ত থাকায় ধরতে পারিনি। আওয়ামী লীগ নেত্রীর ধানমন্ডি অফিসে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে কথা বলেছি। এসব করে আমি সেখানে গেছি। এ রকম অবস্থায় কোনো মেহমানকে গ্রেফতার বাঙালির সভ্যতার মধ্যে পড়ে না। আমি পুলিশের কোনো দোষ দিই না। আমার মনে হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের আইনকানুন সম্পর্কে তেমন কোনো ট্রেনিং দেয়া হয়নি। তাদের শুধু লাঠিয়াল বানানো হয়েছে। দিন-রাত রোদ-বৃষ্টির মধ্যে অত পরিশ্রম করে অসহায় নিম্নপদস্থ আইনশৃঙ্খলা রাকারী কর্মী পুলিশ, বিডিআর, আর্মড পুলিশÑ এদের কোনো বিবেক বিবেচনা থাকে না। শুধু বাঁধ বেটা বাঁধ খসা বেটা খসা। তার পরও এত উৎকণ্ঠার মধ্যে যেটুকু করে তাতে তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত। আমার কর্মীদের ছেড়ে দিয়েছে, আমি পল্টনের গামছা বিছানো রাজপথ থেকে চলে এসেছি। না ছাড়লে আসতাম না এটা তারাও ভালো করে জানে। এখন আর নিপীড়কদের কাছে মানসম্মান আর জীবনের মায়া করি না। দেশের জন্য যদি কোনো কাজেই আসতে না পারলাম, তাহলে আর ভাত ধ্বংস করে লাভ কী? কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কর্মীদের ছেড়ে দেয়ায় আমার পরম প্রভু দয়ালু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে রাস্তার ওপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছি। পত্রিকায় এসেছে বিএনপি অফিস থেকে জায়নামাজ এনে নামাজ পড়েছি। আসলে তা নয়। গত ৪০ বছর ধরেই আমার গাড়িতে জায়নামাজ থাকে, চকলেট থাকে। পানির বোতল থাকে। আর থাকে গামছা। তবে কোনো মদের বোতল থাকে না। জীবনে একটা সিগারেটও ধরতে পারিনি। আমি অন্যদের চেয়ে পানি পান করি বেশি। স্বাধীনতার পর ফাক্স রাখতাম। ঠুনকো জিনিস দু-এক দিনেই ভেঙে যেত। তখন বোতল নিয়ে ভয় হতো। ’৯০ সালে দেশে ফিরে দেখি দুধের চেয়ে পানির দাম বেশি। সবাই বোতল নিয়ে ঘোরে। তাই আমার গাড়িতেও সব সময় পানির বোতল থাকে। আমার স্পন্ডিলাইটিসের অসুবিধা থাকায় মাথার নিচে বালিশ হিসেবে কিছু দেয়ার জন্য বিএনপি অফিসের সোফার ফোম চেয়েছিলাম। সেই সময় কোনো এক কর্মী গাড়ি থেকে দু’টি জায়নামাজ এনে ভাঁজ করে আমার মাথার নিচে দিয়েছিল। আমি জায়নামাজ মাথার নিচে দিয়ে কখনো শুয়ে থাকিনি। পল্টনের রাজপথে জায়নামাজ মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে বড় তৃপ্তি পেয়েছি। অনেকেই অনেক কিছু লুকায়। আমি তেমন লুকাতে চাই না। হজ থেকে ফিরে এই জায়নামাজ দু’টির একটি দিয়েছিল সখীপুরের আবদুল হাই; অন্যটি দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ আরো অনেক হামলা মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। বাবর মন্ত্রী থাকতে প্রায় সব সময় জেসমিন টি, মক্কার খেজুর ও আবে জমজমের পানি নিয়মিত দিতো। তাই আমি আমার জায়নামাজে দাঁড়িয়েই শোকরানা নামাজ আদায় করেছি। যেতে চেয়েছিলাম আওয়ামী লীগ অফিসে। ওর পরে আর সমীচীন মনে হয়নি, তাই যাইনি।
এবার আসি সোহেল তাজ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। এখন দেখছি শুধু বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন বাপের বেটা নন, সোহেল তাজও বাপের বেটা। তাজউদ্দীন আহমদের মতো দৃঢ়চেতা না হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের অত ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবেলা করতে পারতাম না। তাকে অসম্মান করে রাজনীতি থেকে সরানো হয়েছে। গতবার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোহেল তাজের চাচা আফসার উদ্দীনকেও প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। তাকেও বলির পাঁঠা করা হয়েছে। বঙ্গতাজ তাজউদ্দীনের স্ত্রী মৃত আওয়ামী লীগকে জীবিত করেছিলেন। তাকে অবহেলা করতে করতে স্বগৃহে নির্বাসন দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ সোহেল তাজের ঘটনা। মন্ত্রীর মতো মন্ত্রিত্ব করতে না পেরে পদত্যাগ করেছে। ৩৩ মাসেও পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে কৈফিয়ত তলব করেছে। প্রতিমন্ত্রীর বেতন-ভাতা স্বার না করার পরও তার নামে ব্যাংকে পাঠানোয় প্রতিবাদ জানিয়ে টাকা ফেরত নিতে বলেছে। বহু দিন পরে হুট করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে শেষ পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের য়িষ্ণু রাজনীতিতে যে নৈতিকতার নজির স্থাপন করেছে সোহেল তাজ এ জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের রাজনীতিসচেতন পুত্র হিসেবে এসব করে সুদূর আমেরিকায় থাকায় তাকে শত ভাগ অভিনন্দন জানাতে পারিনি। ভাতিজা সোহেল তাজ কিছু মনে কোরো না। আমি আমার বিরুদ্ধেও কথা বলতে শিখেছি। ঘুষ, দুর্নীতি, দুঃশাসনের এই পঙ্কিল আবদ্ধ জাতিকে সামান্য হলেও খেদমত করতে তুমি যদি এখন আমাদের পাশে তথা জাতির পাশে থাকতে, তাহলে তোমাকে শত ভাগ নম্বর দিতে পারতাম। তোমার এই নৈতিক দৃঢ়তা তোমাকে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় নিয়ে যেত, যদি সশরীরে দেশের মাটিতে থাকতে। তোমাকে আমেরিকায় দেখে দরিদ্র দেশবাসীর কোনো লাভ নেই। এই দুঃসময়ে তোমাকে তাদের পাশে দরকার। চিন্তা করে দেখো।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১৪১৯ বাংলা বছরের সূচনাটা খুব একটা ভালো ঠেকছে না। কী যে হয় এ নিয়ে সবাই চিন্তিত। ১৬ এপ্রিল সোমবার এপিএস ও রেলপথ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বোঝা মাথায় নিয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ রেলমন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। ৩০ ঘণ্টা পার না হতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ঠিকানাবিহীন খামাখা মন্ত্রী বানিয়ে মনে হয় তার রাজনৈতিক জীবনটাই ধ্বংস করে দিলেন। জনগণের ধারণা কোনো বিচার-আচার, নিরপে তদন্ত কিছুই হবে না। তবুও পদত্যাগ করে একটা আস্থার সঞ্চার তিনি করেছিলেন; কিন্তু তা সম্পূর্ণ ধুলোয় মিশে গেছে। এ সম্পর্কে আমি এক জায়গায় লিখেছি, শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিচার-আচার তদন্তে যদি কোনো দিন পূতপবিত্র নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেরিয়ে আসার ীণ সম্ভাবনাকে দায়িত্বহীন ঠিকানাবিহীন মন্ত্রী বানিয়ে তার রাজনৈতিক গুলে টোকা মেরে খতম করে দিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের অনেক পাঠকের হয়তো ‘গুল’ সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। তাই ব্যাপারটা বুঝতে একটু অসুবিধা হতে পারে। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে গ্রামগঞ্জের বৃদ্ধ মানুষ রস বাতের কারণে হাঁটুর নিচে গুল দিত। গুলের পদ্ধতিও ছিল খুবই সরল সোজা। একটা গরম লোহা দিয়ে হাঁটুর নিচে ছ্যাকা দিলেই যে ফোসকা পড়ে ত হতো, সেখানে একটা নিমের ডালের গুলি ব্যান্ডেজ করে রাখলে তা দিয়ে রস ঝরত। তস্থান কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখলে সারা দিন ব্যান্ডেজে যে রস ঝরত তা পরিষ্কার করে নতুন ব্যান্ডেজ করত। আবার সারা রাত যা ঝরত সকালে পরিষ্কার করত। বৃদ্ধ মানুষের এ ছিল প্রতিদিনের নিয়মিত কাজ। এ করে তারা সত্যিই কিছুটা কষ্ট লাঘব করতে পারত। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করায় রাজনৈতিক দুর্নীতির রস ঝরে যেটুকু হালকা হওয়ার কথা ছিল, তা বরং ঝরা বন্ধ হয়ে আরো ভারী হয়েছে। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কোনোমতেই দফতরবিহীন মন্ত্রী বলা চলে না। তিনি যে মুহূর্তে পদত্যাগ করে পতাকাহীন গাড়িতে রেলভবন থেকে বাড়ি ফিরেছেন, সেইমাত্র তার মন্ত্রীর এবং মন্ত্রগুপ্তির শপথ দুটোই ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। তাই তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী রাখতে হলেও আবার শপথবাক্য পাঠ করতে হবে। যতণ হবে না, ততণ তিনি মন্ত্রী না, গায়ের জোরে মন্ত্রী বললেই সেটা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাবে না। এ জন্য ভবিষ্যতে কাউকে না কাউকে জবাবদিহি করতে হতে পারে। কোনো দিন যদি এ দেশে প্রকৃত আইনের শাসনের প্রচলন হয়, শাসকেরা রাগ-অনুরাগের ঊর্ধ্বে উঠে সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন বা করতে পারেন, সেদিন নিশ্চয়ই এসব অসাংবিধানিক কাজকর্মের জবাব দিতে হবে। ’৮৬ সালেও একবার চরম সংবিধানপরিপন্থী কাজ করা হয়েছিল। ’৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধী দল সংসদে যায়নি। তারা সংসদের বাইরে আলাদা সংসদ বসিয়েছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদ একটাই। কোনোমতেই দুটো সংসদ হতে পারে না। সেটারও জবাব দেয়া হয়নি। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে দিতে হবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রেল মন্ত্রণালয়ে সাত হাজার চাকরির দুর্নীতি নিয়ে যখন বাতাসে কান পাতা যাচ্ছিল না, তখন হঠাৎ করেই একজন উদীয়মান রাজনৈতিক যুবনেতা উধাও হয়ে গেলেন। ইলিয়াস আলী দু-দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি। এ রকম একজন রাজনৈতিক মানুষ হারিয়ে যাবেন, তাকে পাওয়া যাবে নাÑ এটা কোনোমতেই মেনে নেয়া যায় না। অথচ বাস্তবতা হলোÑ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় তার ড্রাইভার আনসার আলীসহ তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিয়াস আলীর পরিবার-পরিজনকে সহানুভূতি জানাতে তার বনানীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার একমাত্র মেয়েকে দেখে আমরা স্বামী-স্ত্রী চোখে পানি রাখতে পারিনি। এ রকম অবস্থা যেন শত্র“রও না হয়। কেউ যেন ও রকম অবুঝ শিশুর চোখের পানির মুখোমুখি না হয়। বিবেকবান মানুষের কাছে ওটা কামানের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর চেয়েও কঠিন। সরকার উদাসীন, বিরোধী দল হরতাল দিয়েই খালাস। মানুষ একেবারে দিশেহারা। একজন আরেকজনের ওপর দোষ চাপাতে বড় সিদ্ধহস্ত। দেশের একটা কাকপী হারিয়ে গেলে, গুম হলে যে দায়ভার সরকারের, কেন যেন সরকার এটা কিছুতেই মানতে চায় না। গত শনিবার ২১ এপ্রিল ইলিয়াস আলীর বাড়ি থেকে বেরোনোর পথে সংবাদমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার চাপাচাপিতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলাম। তা ছিলÑ ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ায় আমরা নিন্দা জানাই। তার পরিবার-পরিজনদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভারকে কেন্দ্র করে যে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে, যদিও আমার দল অপ্রয়োজনীয় হরতাল সমর্থন করে না, তবুও ইলিয়াস আলীর খোঁজের জন্য আহূত হরতালকে সমর্থন না করে পারি না। বলেছিলাম, এ হরতাল আমার জন্য, আমার সন্তান-সন্ততির জন্য, সর্বোপরি ১৬ কোটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য। তাই একে সমর্থন না করে আমরা দূরে থাকতে পারি না। বিএনপি আহূত প্রথম দিন হরতাল শেষে আবার দ্বিতীয় দিন হরতাল ডাকা হলে আমরা কিছুটা স্তম্ভিত হই। ভেবেছিলাম বিরোধী দল অন্য কোনো পথে যাবে। কিন্তু আবার তৃতীয় দিন হরতাল ডাকা হলো। সারা দেশে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেল। কিন্তু কুম্ভকর্ণের মতো সরকার ঘুমিয়ে রইল। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প থেকে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম, বিরোধী দলকে হরতালের বিকল্প পথ খুঁজতে, সরকারকে সরকারের মতো দায়িত্বশীল আচরণ করতে আহ্বান জানাব। সেই মতো সমমনা কয়েকটি দলের সাথে কিছু কিছু আলোচনাও হলো। সিদ্ধান্ত অনুসারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ২৪ এপ্রিল মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জীবনে প্রথম সস্ত্রীক পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়েছিলাম। আমি দোজখ দেখিনি। দোজখের যে বিবরণ পড়েছি ও শুনেছি তাতে আমার সেখানে দোজখের আলামত মনে হয়েছে। অসংখ্য পুলিশের মাঝে লোহার দরজা ঠেলে বিএনপি অফিসে ঢোকার পথে পেছন থেকে ছোঁ মেরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ১০-১২ জন নেতাকর্মীকে পুলিশভ্যানে তুলে পল্টন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পেছন ফিরে নেতাকর্মীদের নিয়ে যেতে দেখে আমি যখন পুলিশকে বলি গ্রেফতার করতে হলে আমাকেও করা হোক, আমাকেও নিয়ে চলুন। এতে সামনের দু-তিনজনকে ছেড়ে দিয়ে কিছু পুলিশ সরে যায়। সস্ত্রীক নেতৃবৃন্দসহ বিএনপি অফিসে আন্দোলনকারী নেতাদের সাথে কথা হয়। জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তাদের হরতালের বিকল্প খুঁজতে বলি। বিএনপির প থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনি আমাদের মুরব্বি, আমাদের অভিভাবক, জাতির এই দুঃসময়ে আপনি আমাদের পথ দেখান। জাতীয় এই অরাজকতা দূর করতে ভূমিকা নিন। আমরা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আন্দোলনরত জোটের কাছে হরতালের বিকল্প খুঁজতে পরামর্শ দিতে গিয়েছিলাম। ও রকম সময় সরকারের প থেকে কাউকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হবেÑ এটা কল্পনাও করিনি। আর এটা সত্য, একসাথে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, কিছু নেতাকর্মীকে জেলে রেখে দাঁত কেলিয়ে বাড়ি ফিরতে মন সায় দিচ্ছিল না। তাই সহকর্মীদের ছেড়ে দেয়ার জন্য শর্ত হিসেবে পল্টনের রাজপথে চিরসঙ্গী গামছা বিছিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হাসিনার সরকার ওরচেয়ে বেশি আর কী-ই বা করতে পারে। যে দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, সেই দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সবাই যে আমাকে অথবা মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান করবে, সেটা এখন আর আশা করি না। পুলিশ বা পুলিশদের গুপ্তচরদের মুখ থেকে যেমন আজেবাজে কথা শুনেছি, তেমনি ভালো কথাও শুনেছি। এ-ও শুনেছিÑ ঊর্ধ্বতন দু-একজন পুলিশ কর্মকর্তা খুবই বিরক্ত হয়েছেন। উপযাচক হয়ে কারো কারো বাড়াবাড়ি করার কারণে। রাতেই শুনেছি ঘটনাটি শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাকি যারপরনাই বিরক্ত হয়েছেন এবং আমার সাথে নাকি ও ধরনের বেয়াদবি না করতে হুঁশিয়ার করেছেন। হতে পারে। আবার লেখালেখি করি বলে তার কিছু নেংটি ইঁদুর লাফালাফি করে, তাও হতে পারে। এখন কোনটা সত্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন। আমি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিএনপির অফিসে গিয়েছিলাম বিবেকের তাগিদে। জাসদের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু তাদের সাথে কথা বলেছি। বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর মান্নান, সভাপতি প্রখ্যাত চিকিৎসক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও আরো কারো কারো সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কাউকে পেয়েছি কাউকে পাইনি। আওয়ামী লীগের অফিসে নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলার জন্য ব্যক্তিগতভাবে মাহবুব-উল আলম হানিফকে ফোন করেছি, ধরতে পারিনি। বাহাউদ্দিন নাসিমকে করেছি ব্যস্ত থাকায় ধরতে পারিনি। আওয়ামী লীগ নেত্রীর ধানমন্ডি অফিসে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে কথা বলেছি। এসব করে আমি সেখানে গেছি। এ রকম অবস্থায় কোনো মেহমানকে গ্রেফতার বাঙালির সভ্যতার মধ্যে পড়ে না। আমি পুলিশের কোনো দোষ দিই না। আমার মনে হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের আইনকানুন সম্পর্কে তেমন কোনো ট্রেনিং দেয়া হয়নি। তাদের শুধু লাঠিয়াল বানানো হয়েছে। দিন-রাত রোদ-বৃষ্টির মধ্যে অত পরিশ্রম করে অসহায় নিম্নপদস্থ আইনশৃঙ্খলা রাকারী কর্মী পুলিশ, বিডিআর, আর্মড পুলিশÑ এদের কোনো বিবেক বিবেচনা থাকে না। শুধু বাঁধ বেটা বাঁধ খসা বেটা খসা। তার পরও এত উৎকণ্ঠার মধ্যে যেটুকু করে তাতে তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত। আমার কর্মীদের ছেড়ে দিয়েছে, আমি পল্টনের গামছা বিছানো রাজপথ থেকে চলে এসেছি। না ছাড়লে আসতাম না এটা তারাও ভালো করে জানে। এখন আর নিপীড়কদের কাছে মানসম্মান আর জীবনের মায়া করি না। দেশের জন্য যদি কোনো কাজেই আসতে না পারলাম, তাহলে আর ভাত ধ্বংস করে লাভ কী? কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কর্মীদের ছেড়ে দেয়ায় আমার পরম প্রভু দয়ালু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে রাস্তার ওপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছি। পত্রিকায় এসেছে বিএনপি অফিস থেকে জায়নামাজ এনে নামাজ পড়েছি। আসলে তা নয়। গত ৪০ বছর ধরেই আমার গাড়িতে জায়নামাজ থাকে, চকলেট থাকে। পানির বোতল থাকে। আর থাকে গামছা। তবে কোনো মদের বোতল থাকে না। জীবনে একটা সিগারেটও ধরতে পারিনি। আমি অন্যদের চেয়ে পানি পান করি বেশি। স্বাধীনতার পর ফাক্স রাখতাম। ঠুনকো জিনিস দু-এক দিনেই ভেঙে যেত। তখন বোতল নিয়ে ভয় হতো। ’৯০ সালে দেশে ফিরে দেখি দুধের চেয়ে পানির দাম বেশি। সবাই বোতল নিয়ে ঘোরে। তাই আমার গাড়িতেও সব সময় পানির বোতল থাকে। আমার স্পন্ডিলাইটিসের অসুবিধা থাকায় মাথার নিচে বালিশ হিসেবে কিছু দেয়ার জন্য বিএনপি অফিসের সোফার ফোম চেয়েছিলাম। সেই সময় কোনো এক কর্মী গাড়ি থেকে দু’টি জায়নামাজ এনে ভাঁজ করে আমার মাথার নিচে দিয়েছিল। আমি জায়নামাজ মাথার নিচে দিয়ে কখনো শুয়ে থাকিনি। পল্টনের রাজপথে জায়নামাজ মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে বড় তৃপ্তি পেয়েছি। অনেকেই অনেক কিছু লুকায়। আমি তেমন লুকাতে চাই না। হজ থেকে ফিরে এই জায়নামাজ দু’টির একটি দিয়েছিল সখীপুরের আবদুল হাই; অন্যটি দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ আরো অনেক হামলা মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। বাবর মন্ত্রী থাকতে প্রায় সব সময় জেসমিন টি, মক্কার খেজুর ও আবে জমজমের পানি নিয়মিত দিতো। তাই আমি আমার জায়নামাজে দাঁড়িয়েই শোকরানা নামাজ আদায় করেছি। যেতে চেয়েছিলাম আওয়ামী লীগ অফিসে। ওর পরে আর সমীচীন মনে হয়নি, তাই যাইনি।
এবার আসি সোহেল তাজ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। এখন দেখছি শুধু বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন বাপের বেটা নন, সোহেল তাজও বাপের বেটা। তাজউদ্দীন আহমদের মতো দৃঢ়চেতা না হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের অত ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবেলা করতে পারতাম না। তাকে অসম্মান করে রাজনীতি থেকে সরানো হয়েছে। গতবার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোহেল তাজের চাচা আফসার উদ্দীনকেও প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। তাকেও বলির পাঁঠা করা হয়েছে। বঙ্গতাজ তাজউদ্দীনের স্ত্রী মৃত আওয়ামী লীগকে জীবিত করেছিলেন। তাকে অবহেলা করতে করতে স্বগৃহে নির্বাসন দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ সোহেল তাজের ঘটনা। মন্ত্রীর মতো মন্ত্রিত্ব করতে না পেরে পদত্যাগ করেছে। ৩৩ মাসেও পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে কৈফিয়ত তলব করেছে। প্রতিমন্ত্রীর বেতন-ভাতা স্বার না করার পরও তার নামে ব্যাংকে পাঠানোয় প্রতিবাদ জানিয়ে টাকা ফেরত নিতে বলেছে। বহু দিন পরে হুট করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে শেষ পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের য়িষ্ণু রাজনীতিতে যে নৈতিকতার নজির স্থাপন করেছে সোহেল তাজ এ জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের রাজনীতিসচেতন পুত্র হিসেবে এসব করে সুদূর আমেরিকায় থাকায় তাকে শত ভাগ অভিনন্দন জানাতে পারিনি। ভাতিজা সোহেল তাজ কিছু মনে কোরো না। আমি আমার বিরুদ্ধেও কথা বলতে শিখেছি। ঘুষ, দুর্নীতি, দুঃশাসনের এই পঙ্কিল আবদ্ধ জাতিকে সামান্য হলেও খেদমত করতে তুমি যদি এখন আমাদের পাশে তথা জাতির পাশে থাকতে, তাহলে তোমাকে শত ভাগ নম্বর দিতে পারতাম। তোমার এই নৈতিক দৃঢ়তা তোমাকে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় নিয়ে যেত, যদি সশরীরে দেশের মাটিতে থাকতে। তোমাকে আমেরিকায় দেখে দরিদ্র দেশবাসীর কোনো লাভ নেই। এই দুঃসময়ে তোমাকে তাদের পাশে দরকার। চিন্তা করে দেখো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন