শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১২

এদের ধরা সাধ্য কার



ড. মাহ্বুবউল্লাহ্
বাংলাদেশ রেলওয়েতে এখন বিপুল সংখ্যায় নিয়োগ চলছে। ওয়েম্যান, নাম্বার টিকার, খালাসি, জুনিয়র অডিটরসহ বিভিন্ন পদে সাড়ে ৭ হাজার লোক নিয়োগ চলছে। একটি দৈনিকের রিপোর্টে জানা যায়, ‘এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্য। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হয়। এ ঘুষের টাকা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বণ্টন চলছিল। ওই ঘুষের টাকা সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার ইউসুফ আলী মৃধা ও পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন।’ এই তথ্য কতটুক নির্ভরযোগ্য তা প্রমাণসাপেক্ষ। এদেশে শুধু নিয়োগ বাণিজ্যই হয় না, হয় আরও বহুবিধ ধরনের বাণিজ্য। যেমন—ভর্তি বাণিজ্য ও টেন্ডার বাণিজ্য। বাণিজ্যের প্রকরণের কথা বলতে গেলে আরও কয়েক ধরনের বাণিজ্যের কথা বলা যায়। যারা এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত, তারা হয়তো তাদের এই অপকর্মের যৌক্তিকতা দিতে গিয়ে বলবেন সেই পুরনো প্রবাদবাক্যটি : বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। মহাজনদের অমোঘ বাণী ধারণ করেই তো তারা এগিয়ে চলেছেন। রমরমা এ বাণিজ্যে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও দেশ দ্রুত ধাবমান রসাতলের পথে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। গত কয়েক দশক ধরে রেলওয়ে চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। প্রতি বছর বিশাল লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় অর্থনীতির জন্য একটি বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। নিয়োগ নিয়ে যখন বাণিজ্য হয় তখন যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অবধারিত নিয়তি হলো ধ্বংস ও বিনাশ। কারণ নিয়োগ বাণিজ্যের পথ ধরে যারা নিয়োগ পান তারা যে অযোগ্য-অথর্ব এবং অদক্ষ, এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ আছে? এসব অযোগ্য অথর্ব অদক্ষ লোক আর যাই করতে পারুক আমাদের শ্রীহীন রেলওয়েকে শ্রী নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। তাছাড়া প্রচুর অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়ার পর এদের ধ্যান-জ্ঞান ও চিন্তা হয়ে পড়বে কী করে কত দ্রুত নিয়োগ লাভে ব্যয়িত এই অর্থ পুনরুদ্ধার করা যায়। কখনও কখনও লক্ষ্য থাকে এর দু’চার-দশগুণ টাকা তুলে নেয়ার। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির উত্তরোত্তর দুর্দশায় নিপতিত হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকে না।
বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক দর্শনে পরিচালিত হচ্ছে, তাকে পুঁজিবাদী দর্শনই তো বলতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে একটি অনগ্রসর স্বল্পোন্নত দেশে পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশও উন্নয়নের দ্বার অবারিত করে দিতে পারে। তবে পণ্ডিত ব্যক্তিরা অনেকে মনে করেন—ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্সসহ যেসব দেশে ক্লাসিক্যাল ধারায় পুঁজিবাদের বিকাশ হয়েছে, তারপর অনগ্রসর দেশগুলোতে স্বাধীন পুঁজিবাদের বিকাশ সম্ভব নয়। এসব দেশে যে পুঁজিবাদ গড়ে ওঠে সে পুঁজিবাদকে নির্ভরশীল পুঁজিবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। বিতর্কের জটিলতায় প্রবেশ না করে বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বেশ শক্তিশালী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ভারত, চীন, রাশিয়া ও ব্রাজিলেও পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক বিকাশের প্রাণবন্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক’দিন আগে এ ৪টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের একটি সম্মেলন হয়ে গেল। সম্মেলনটি যে ফলপ্রসূ হয়েছে সে ব্যাপারে ৪টি দেশের নেতারাই সহমত প্রকাশ করেছেন। বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গড়পরতা ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। শত হতাশার মধ্যেও এটি একটি সুসংবাদ। অনেকেই মনে করেন, জাতীয় অর্থনীতির ওপর রাষ্ট্রের আরোপিত শৃঙ্খল শিথিল হওয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্যমের যে জোয়ারের সূচনা হয়েছে, সেই জোয়ারই বাংলাদেশকে উন্নয়নের টেক অফ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধির হার আরও ২ কি ৩ শতাংশ বাড়াতে পারলে অর্থনীতির আকাশ-খেয়াটি ঊর্ধ্ব আকাশে বিচরণ শুরু করবে। এসব ভালো কথা, সুসংবাদও বটে। পুঁজিবাদী বিকাশের জন্য পুঁজির প্রয়োজন। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর যেদিন বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে, সেদিন এদেশের ক’জনের হাতে পুঁজি ছিল? হাতেগোনা দু’চারজন কোটিপাতি হয়তো ছিলেন। কিন্তু এখন হাজার কোটির মালিকের সংখ্যা কত তা কেউ বলতে পারবে না। তবে সংখ্যাটি যে বেশ বিশাল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ অপরাহ্ন থেকেই বাংলাদেশে আমরা একশ্রেণীর লুটেরা গোষ্ঠীর তাণ্ডব লক্ষ্য করি। সেদিন থেকেই অবাঙালিদের বাড়ি-গাড়ি-অর্থকড়ি লুটতরাজের মচ্ছব শুরু হয়। লুটতরাজের মচ্ছব স্বাধীনতার ৪০ বছরেও থেমে যায়নি। দার্শনিকরা বলেন, সব ধরনের সম্পত্তির পেছনে থাকে একটি পাপের অধ্যায়। ফরাসি দার্শনিক প্রুবোঁ বলেন, Property is theft. কারণ সৃষ্টিকর্তা তো আমাদের কাউকে সম্পদ ও সম্পত্তির দলিল হাতে দিয়ে পৃথিবীতে পাঠাননি। তাহলে কীভাবে কেউ হলো বিলিয়নিয়ার, আবার কেউ হলো নিঃস্ব দরিদ্র। এই প্রশ্নের জবাব আমরা সমসাময়িক বাংলাদেশের দিকে তাকালেই খুঁজে পেতে পারি। মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে এদেশে অনেকে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। দুর্নীতি, দুরাচার, চোরাকারবার, মাদক পাচার, কর ফাঁকি, ঋণখেলাপি হওয়া, মানব পাচার, আদম ব্যবসা, শেয়ারবাজারে জালিয়াতি থেকে শুরু করে হরেকরকম বাণিজ্যের পথে একশ্রেণীর মানুষের হাতে অবৈধ অর্থের পাহাড় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তা না পেলে এরকমটি সম্ভব হতো না। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যকে ব্যবহার করে এদেশে খুব বাজে ধরনের পুঁজিবাদ যাকে বলা যায়, Crony Capitalism গড়ে উঠেছে। Crony capitalism-এর প্রক্রিয়ায় যে অর্থাগম হয়, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশে বিনিয়োগ হয় না, দেশেও থাকে না। সেটাই সবচাইতে উদ্বেগের বিষয়। যদি এই অর্থ বিদেশে পাচার না হয়ে দেশে থাকত এবং দেশে বিনিয়োগ হতো তাহলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির চেহারা অনেক বেশি সুশ্রী হতে পারত। সাধারণ মানুষও বিনিয়োগ ও পুঁজিসহায়ক শক্তি হিসেবে কর্মসংস্থান পেত। এর ফলে দারিদ্র্য কিছুটা হলেও ঘুচত ও অর্থনীতিতে একটি উত্পাদনমুখী এবং আরও জোরালো প্রবৃদ্ধিমুখী প্রক্রিয়ার সূচনা হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, রাষ্ট্রক্ষমতা যাদের হাতে তারা শুধু আদিম পুঁজি কীভাবে সঞ্চিত করা যায় সে কথাই ভেবেছে, এর সদ্ব্যবহার ও বিনিয়োগের কথা ভাবেনি। এমনকি জাতীয় অর্থনীতির প্রাণশক্তি বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ানোর নাম করে কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে কুইক মানির কথাই ভেবেছে। তবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের সুবাদে নিয়োগ বাণিজ্যের মতো বহুবিধ অনৈতিক পথে অর্থবিত্ত করাটা এখন এক ধরনের আভিজাত্যে পরিণত হয়েছে। এই শ্রেণীর মানুষের বিত্ত-বৈভব, বাড়ি-গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ, নামিদামি হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানাহার আমরা সমীহের দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু বৈভবের এরকম নোংরা প্রদর্শনীর কোনো প্রতিবাদ হয় না। তরুণ সমাজকেও বিত্তমুখী চিন্তায় আবিষ্ট করে প্রতিবাদের পথ থেকে বিচ্যুত করা হয়েছে।
গত ১০ এপ্রিল একটি নোয়া গাড়িতে রেলমন্ত্রী বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাড়িতে যাওয়ার পথে তার এপিএস ওমর ফারুক এবং পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা গাড়ি চালকের উপস্থিত বুদ্ধির কারণে বিজিবির ৪ নম্বর গেটে ৭০ লাখ টাকাসহ আটক হয়েছেন। এই ঘটনাটি বিশাল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যে পরস্পরবিরোধিতা স্পষ্ট। সবাই চাচ্ছে কিছু একটা ঢাকতে। পত্র-পত্রিকায় যেসব খবর চাউর হয়েছে তা থেকে অনেকেই সন্দেহ করছেন, এই অর্থের গন্তব্যস্থল ছিল খোদ রেলমন্ত্রীর বাসা। কিন্তু বিষয়টি তদন্ত ও প্রমাণসাপেক্ষ। রেলমন্ত্রী পরদিন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বিজিবির হাতে দুই কর্মকর্তা আটক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই টাকার মালিক এপিএস ওমর ফারুক। যদিও গত ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তিনি আমার দেশকে বলেছেন, কিসের টাকা তা আমি জানি না। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, সোমবার গভীর রাতে টাকা নিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় ওমর ফারুকের চালক তাকে অপহরণের চেষ্টা করেন। এসময় ভয়ে জীবন বাঁচাতে তিনি বিজিবির সদর দফতরের ভেতরে প্রবেশ করেন। মন্ত্রী আরও জানান, গাড়ির ভেতরে রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (পূর্বাঞ্চল) ইউসুফ আলী মৃধা ও এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার ছিলেন। তবে এ মুহূর্তে তারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। এত টাকা ওমর ফারুকের কাছে কীভাবে এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজের টাকা নিজের সঙ্গে রাখার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। কারণ তার টাকা তিনি কোথায় রাখবেন, নিজের সঙ্গে রাখবেন নাকি বাসায় রাখবেন, তা তার ব্যাপার। তবে কোনো অন্যায় আছে কি-না, তা তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে। যদি তার অর্থের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু থাকে, তা খতিয়ে দেখবে এনবিআর। এটা আমাদের বিষয় নয়। এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি দু’জনের কথা।’ গভীর রাতে মন্ত্রীর বাসায় তারই মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তার যাওয়া প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমার কাজ শেষ করে বাকি সময় তাদের। তারা কোথায় যায়, কী করে—এটা তাদের নিজেদের ব্যাপার। তাদের শাস্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের অপরাধ নিরূপণের আগে শাস্তি দেয়া ঠিক হবে না। রিপোর্ট পেলে স্পষ্ট হবে, তারা অপরাধী কি-না। এরপরই ব্যবস্থা। ঘটনার আসল সত্য যাই হোক না কেন, দৈনিক প্রথম আলো ১২ এপ্রিল সংবাদের ফার্স্ট লিড করে শিরোনাম করেছে, ‘অভিযোগের তির সুরঞ্জিতের দিকে—টাকার থলে নিয়ে মন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা—এপিএস বরখাস্ত।’ সুরঞ্জিত বাবুর মতো একজন ঝানু পলিটিশিয়ান এই মুহূর্তে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে তার নিজ ও তার দলের ইমেজ কিছুটা হলেও সুরক্ষিত করতে পারেন। এ নিয়ে বিলম্ব করলে অভিযোগের তীর আরও তীব্র ভেদী হবে।
সাম্প্রতিককালে রেলের নিয়োগ বাণিজ্য বেশকিছু মানবিক ট্র্যাজেডির সৃষ্টি করেছে। দৈনিক প্রথম আলো নিয়োগ বাণিজ্য সম্পর্কে ১২ এপ্রিল রিপোর্ট করেছে, ‘অভিযোগ উঠেছে, একেকটি পদের জন্য সর্বনিম্ন আড়াই থেকে সর্বোচ্চ ৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে নিয়োগ কমিটির প্রধান ইউসুফ আলীর মাধ্যমে। আবদুল কাদির নামের এক ব্যক্তি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে জুনিয়র নিরীক্ষক পদে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। এরপর রেলের কর্মকর্তারা তাকে বলেন, ‘৬ লাখ টাকা দিলেই নিয়োগপত্র হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে। নইলে যোগাযোগ করার প্রয়োজন নেই। কাদির জানান, টাকা না দেয়ায় তার চাকরি আর হয়নি। এ কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত ২১ মার্চ প্রতিকার চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠির ভিত্তিতে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। রেলওয়ের নিরীক্ষক ইস্কান্দার আলী হাওলাদারের মেয়ে জুনিয়র নিরীক্ষক পদের প্রার্থী ছিলেন। মেয়ের চাকরির জন্য তার কাছ থেকেও ৬ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিয়ে মেয়ের চাকরি নিতে রাজি ছিলেন না তিনি। পরে আর চাকরি হয়নি।’ এসব করুণ কাহিনী এখন বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। এর কী জবাব আছে? বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী হয়ে রেলওয়ের কালো বিড়ালটি খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, এবার সত্যিই কালো বিড়ালটি ধরা পড়বে। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে বহু পাঠক ৭০ লাখ টাকা ধরা পড়া নিয়ে মন্তব্য করেছেন। একজনের মন্তব্য—‘আচ্ছা, আপনি নিজেই তাহলে সেই কালো বিড়াল। ন্যূনতম লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করুন।’ মন্তব্যটি জনৈক আলী হাসানের। অপর পাঠক আবদুল হালিম মিয়র মন্তব্য—‘রেলমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ চাই। সভ্য সমাজে, সভ্য দেশে এটাই রীতি।’ এদেশে কালো বিড়ালের অনুসন্ধান সত্যিই কঠিন। অজস্র কালো বিড়ালের দেশে অন্যরা অসহায়। যে সমাজ, যে দেশ আদিম পুঁজি সঞ্চয়ের প্রক্রিয়ায় নিক্ষিপ্ত হয়; সে দেশে ও সে সমাজে কালো বিড়ালদের দুধকলা দিয়ে পোষা হয়। এদের ধরা সাধ্য কার?
লেখক : অর্থনীতিবিদ
mahbub.ulla@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন