বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১২

ইনুর বক্তব্য :রাজনৈতিক না সীমালংঘন?



 এ্যাড. তৈমূর আলম খন্দকার  
প্রা ক মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে যারা বেঈমান, মুনাফেক বলে বক্তৃতা করতো এবং যারা তাঁর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর ঘোষণা দিয়েছিল সেই জাসদ/বাছাই এখন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার নৌকায় চড়ে কিছু কিছু বক্তব্য রাখছেন, যা শুধু অবান্তর নয়, বরং কার স্বার্থে তারা এগুলো বলছেন তা নিবিড় পর্যালোচনার দাবি রাখে। জাসদ এক সময় সশস্ত্র বিপ্লবের কথা বলে গণবাহিনী তৈরি করেছিল। সে গণবাহিনীর ৪০ হাজার সদস্যকে মুজিব সরকারের রক্ষীবাহিনী খুন করেছে বলেও জাসদ দীর্ঘদিন যাবত্ দাবি করে আসছে। ১/১১-এর হটকারী সরকার দেশে আবির্ভূত হলে তারাই সেই সরকারের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করে; ইয়াজউদ্দিন-ফকরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনদের সাথে সুর মিলিয়ে মাইনাস-টু-ফর্রমুলাকে সমর্থনে বক্তব্য রাখে। সম্প্রতি হাসানুল হক ইনু দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে মাইনাস ওয়ান করার ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণা অনেক অর্থ বহন করে। ইনু কি বলতে চান সে বিষয়টি জনসমক্ষে স্পষ্ট হওয়া দরকার। ইনুর কথা কিসের আভাস-ইংগিত বহন করে তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। পৃথিবীর অনেক দেশেই গণঅভ্যুত্থান বা সাময়িক বিদ্রোহ হয়েছে। কিন্তু সে বিদ্রোহ হয় সরকারের বিরুদ্ধে। বিরোধী দলের নেত্রীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হওয়ার কোন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নাই। তবে ইনু দেশনেত্রীকে মাইনাস করতে চান কোন পদ্ধতিতে। আর ইনু যদি দেশনেত্রীকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মাইনাস করতে চান তবে তাকে স্বাগত জানিয়েই এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম। ইনুর মনে রাখা দরকার— দেশনেত্রী খালেদা জিয়াই একমাত্র নেতা যিনি সবসময় যতগুলো আসনে দাঁড়িয়েছেন ততগুলো আসনেই নির্বাচিত হয়েছেন, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য কারো ভাগ্যে জুটে নাই। ইনু সাহেবরা যতই বিজ্ঞ কথা বলেন না কেন, এদেশের গণমানুষ তাদের রাজনীতি গ্রহণ করে নাই। যার প্রমাণ ইনু সাহেবরা নৌকায় না উঠলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ইনু সাহেবরা কথায় কথায় তারা মৌলবাদের গন্ধ খোঁজেন।
 সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে আমাদের আবার সৃষ্টিকর্তার নিকট ফিরে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে—একথাগুলোই ইসলাম ধর্মের প্রচারকরা বলেন। একথাগুলোর বিরোধিতা করার জন্য পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই যুগে যুগে অনেক ইনুর সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ধর্মের প্রয়োজনীয়তার ব্যত্যয় যেখানে কেউ ঘটাতে পারে নাই, সেখানে বর্তমান ইনু সাহেবরা “ছাই” মাত্র। তাদের জিজ্ঞাসা করি—যাদের বিরুদ্ধে ৪০ হাজার জাসদ কর্মী হত্যার অভিযোগ এনেছেন তাদের নৌকায় উঠলেন কেন? এ সম্পর্কে আপনারা আপনাদের জবাব পরিষ্কার করুন। আপনারা কি জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে? ৪০ হাজার জাসদ কর্মীর হত্যার অভিযোগের পরও তাদের নৌকায়  আপনাদের আরোহণের বিষয়টি জনসমক্ষে পরিষ্কার হওয়া দরকার; নতুবা আপনাদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবি উঠবে। বিচারের কোন সময়সীমা নির্ধারণ নাই—এটাতো আপনারাই প্রমাণ করেছেন।
 বিএনপি’র আন্দোলনকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রতিহত করার আন্দোলন বলে জনগণের সামনে প্রচার করছেন। বিএনপি কি মুক্তিযোদ্ধার দল নয়? স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান—একথাটি মিথ্যা প্রমাণের জন্য আইন-আদালত দিয়ে চেষ্টা করেছেন— পেরেছেন কি? সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঠেকানো যায় না।
আবুল মুনসুর আহাম্মদ তার লেখা “ফুড কনফারেন্স” বইতে (পৃঃ ১২৪) লিখেছেন—“মিথ্যা কথার প্রচার দরকার নাই। কারণ মিথ্যা কথা নিজেই প্রচারিত হয়, বিশ্বাসও তা করে সকলেই এবং খুব সহজেই, সত্য কথা যদি সহজ হয় ব্যাপারটি আরো মুশকিল হয়ে যায়।” মিথ্যা প্রচার করা যত সহজ, প্রতিষ্ঠা করা তত সহজ নয়। আপনারা অনেক মিথ্যা প্রচার করেছেন যার যার স্বার্থে। কিন্তু সত্য উন্মোচিত হয়েছে। সত্যই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এবং এটাই শাশ্বত সত্য।
দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার এবারের আন্দোলন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের আন্দোলন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সময়ের দাবি ছিল। ইনু সাহেবরা তখন এ আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু এ ইনু সাহেবরা এখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ন্যায্য দাবিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছেন কেন? কারণ একটাই, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া ইনু ও তার প্রভুরা জয়লাভ করতে পারবেন না। তাই এতো জ্বালা, এতো ব্যথা।
দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে ইনু যে কথা বলছেন তা রাজনৈতিক স্কেলে পরিমাপ করা যাচ্ছে না। তার বক্তব্য সীমালংঘন, যা আল্লাহপাক পছন্দ করেন না। সীমালংঘনকে সাধারণ গণমানুষ ঘৃণার চোখে দেখে। বর্ণচোরা রাজনীতিবিদদের শুভ চিন্তার উদ্ভব হোক—এটাই কাম্য। নতুবা তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।
লেখক:রাজনীতিক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন