রাহাত খান
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক এবং তাকে প্রায় অন্ধভাবে অনুসরণ করা এডিবির অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির ওপর বিশাল এক ধাক্কা। অর্থায়ন না করাটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ এই কারণে যে, এত কম সুদে এবং এত সহজ টার্মে ঋণের টাকা আর কোনো উৎস থেকে পাওয়া যাবে না। আর পদ্মা সেতু নির্মিত হতে না পারলে সেতুর দরুন বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার ৭৫ লাখ কোটি টাকার যে রাজস্ব লাভ করতে পারত নিজস্ব অভ্যন্তরীণ খাত থেকে, সেই দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। খনিজ ও শস্যসমৃদ্ধ উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সহজ সংযোগ ও যোগাযোগ হতে না পারলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ভলিউম বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা লুপ্ত হবে। পদ্মা সেতু নির্মিত হতে না পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও নানা দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাহুল্যবোধে সেসব কিছু উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম।
পদ্মা সেতু নির্মিত না হলে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের ভোট রাজনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সাফল্য দেশের গোটা উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মহাজোট সরকার, বিশেষ করে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের ভোট রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব বিস্তার করতে পারত। পদ্মা সেতু নির্মাণে কারণ যাই থাক, মহাজোট সরকারের ব্যর্থতা হবে ভোট রাজনীতিতে সরকারি জোটের জন্য এক অশনিসংকেত। নির্বাচনের বাকি আছে আর দেড় বছরেরও কম সময়। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের নতুন সমঝোতা ঠিক সময়ে হতে পারলে ভোট রাজনীতির দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার হয়তো অনেকটাই সফলকাম হতে পারবে। এমনকি বিকল্প সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সরকার যদি নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতু নির্মাণে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ সাফল্যও দেখাতে পারে তাহলে আমার বিশ্বাস, ভোট রাজনীতিতে সরকার অনেকটাই জয় পাবে। তবে এসব 'যদি'র ওপর আস্থা রাখাটা এ মুহূর্তে খুব একটা বাস্তবসম্মত নয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন সম্পর্কিত বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, চিঠি চালাচালি এবং কর্মপন্থার দিকে যদি দৃষ্টিপাত করি তাহলে একটু অবাক হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। চুক্তির শর্ত মেনে বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ, শর্ত এবং বিধিবিধান অনুযায়ী কাজ করেছে। গত সোমবার ২ জুলাই সমকালের চতুর্থ পৃষ্ঠায় পদ্মা সেতু সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শ সংক্রান্ত কমিটির একজন সম্মানিত সদস্য জামিলুর রেজা চৌধুরীর লেখা নিবন্ধে সেই ধারণাই পাওয়া যায়। জনাব চৌধুরী পদ্মা সেতু হওয়া না হওয়া নিয়ে কোনোরূপ মন্তব্য করেননি। গত আড়াই-তিন বছরে পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং এর অর্থায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে যে পরামর্শ, মতবিনিময় এবং কর্মপন্থা অনুসৃত হয়েছে জামিলুর রেজা চৌধুরী সেসবেরই আক্ষরিক বিবরণী তার লেখায় তুলে ধরেছেন। তার মন্তব্য না করা নিবন্ধে দেখা যায়, সবই ঠিকমতো চলছিল। বাংলাদেশ শর্ত মানলে কোনো রকম নাহক জেদ বা গোঁয়ার্তুমি দেখায়নি।
হঠাৎ কানাডার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োজিত হওয়া এসএনসি লাভালিন সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়। কানাডা সরকারের তদন্তে সেই দুর্নীতি প্রমাণিত হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক একজন মন্ত্রী, কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর একটি প্রতিষ্ঠান ও কতিপয় আত্মীয়স্বজনের বিপক্ষে প্রক্রিয়াগত দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাময়িক বরখাস্ত কিংবা সরিয়ে দিতে বলে।
বাংলাদেশ সরকার প্রথমটায় এই বক্তব্যে কিছু নিজস্ব অবস্থান নিয়ে বলেছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক, এডিবি কিংবা জাইকা এখন পর্যন্ত কোনো অর্থায়নই করেনি। জমি অধিগ্রহণ, পরিবেশ নিশ্চিতকরণসহ সেতু নির্মাণে এখনাবধি যা কিছু কাজ হয়েছে তা হয়েছে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের অর্থায়নে। সেখানে প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তাহলে বিশ্বব্যাংক সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে কোন যুক্তিতে? পরে অবশ্য বাংলাদেশ সরকার একদিকে দুদককে নির্দেশ দেয় কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের দুর্নীতি চক্রে বাংলাদেশের কারা জড়িত, তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে; অন্যদিকে গরিব উন্নয়নশীল দেশ, সরকার মহাশক্তিধর বিশ্বব্যাংকের মূল শর্ত মেনে নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সেতু বিভাগের সচিবকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া এসব পদক্ষেপকে যথেষ্ট মনে করেনি। বরং তাদের দেওয়া 'দুর্নীতিগ্রস্ত' ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সবাইকে কেন তাদের নির্দেশ মোতাবেক বরখাস্ত ও শাস্তি দেওয়া হলো না, 'সেই অপরাধে' ক্রোধান্বিত হয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে করা পদ্মা সেতু সংক্রান্ত চুক্তিই বাতিল করে দিয়েছে। বাংলাদেশে এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে মিশ্র।
বিএনপি ও জামায়াত বলেছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যে বড় বড় দুর্নীতিতে লিপ্ত তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ছোট-মাঝারি ও বড়মাপের কিছু মিডিয়া বলেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি থেকে বিশ্বব্যাংকের এভাবে সরে যাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ বটে। একটি বড় পত্রিকা প্রথম পৃষ্ঠায় আলাদা হেডলাইনে বলেছে : বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ কোরিয়ান আমেরিকান জিম ইয়ং কিমই এখন ভরসা। পত্রিকাটি আরও লিখেছে, বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিককে বোঝানো না গেলেও অন্তত কিমকে বোঝানো যাবে এই ভাবনা মাথায় রেখে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।
অন্যান্য দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর এতদসংক্রান্ত বিষয়ে দেওয়া প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে একটু পরে আসছি। আগে বলে নিই রবার্ট জোয়েলিকের আমলে ঘটা কিছু উল্টাপাল্টা ঘটনা প্রসঙ্গে। এগুলো স্বকল্পিত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি গবেষণা সূত্র থেকে পাওয়া। একবার বড় একটা ঋণের ব্যাপারে চীনের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে বিশ্বব্যাংক তার চিরাচরিত (বিগ বসের) ভূমিকায় নেমে চুক্তি তদারকির নামে চীনকে নানা কঠিন শর্ত দিতে থাকে। কয়েক মাস বিশ্বব্যাংকের এই বিগ বসসুলভ আচরণ সহ্য করার পর বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ চীন হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বিশ্বব্যাংককে জানায়, তারা বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আর আগ্রহী নয়। বিশ্বব্যাংক চুক্তির ব্যাপারে সংযত ও যৌক্তিক আচরণ না করলে তারা চুক্তি থেকে নিজেরাই বেরিয়ে আসবে। চীনের হুশিয়ারি থেকে বিশ্বব্যাংক তৎক্ষণাৎ ভারি নরম আর আপসকামী হয়ে গিয়েছিল।
রবার্ট জোয়েলিক বিশ্বব্যাংকের প্রধান থাকাকালে ঘটা দুটি ঘটনা উল্লেখ করা যাক। যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং নিতান্তই দরিদ্র দেশ কম্বোডিয়া। দারিদ্র্যের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের প্রয়োজন ছিল অর্থ, প্রযুক্তি ও উন্নত দেশের পৃষ্ঠপোষকতা। তারা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি বড় প্রজেক্টের জন্য ঋণচুক্তি করেছিল। দীর্ঘকাল সময়ক্ষেপণের পর দুর্নীতিসহ নানা অজুহাত তুলে বাংলাদেশের মতোই একটা পয়সা অর্থায়ন না করে বিশ্বব্যাংক চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। ভিয়েতনামের সঙ্গে করা একটা বড় চুক্তিও দুর্নীতির অজুহাত দেখিয়ে বিশ্বব্যাংক দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ শেষে বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম তো ছাড়ার পাত্র নয়। দুর্নীতি হয়েছে এটা প্রমাণের জন্য বিশ্বব্যাংককে তারা চ্যালেঞ্জ দেয়। শেষে দুর্নীতি প্রমাণ করতে না পেরে ভিয়েতনামের সঙ্গে করা ঋণচুক্তিটি বহাল রাখতে বাধ্য হয় বিশ্বব্যাংক। রবাট জোয়েলিক এবং তার আগেও গরিব দেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের নিবর্থক অবান্তর ও নিন্দনীয় বহু ঘটনা ঘটেছে। রবার্ট জোয়েলিকের চাকরির মেয়াদের শেষ দিনে পদ্মা সেতু ঋণচুক্তি বাতিলের আদেশপত্রটি স্বাক্ষরিত। জোয়েলিক চাকরি থেকে বিদায় নেওয়ার শেষ মুহূর্তে চুক্তিটি বাতিল করে যান। বলা যায়, বিগ বসের শেষ নাটকীয় কীর্তি।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন ব্যবসা বিষয়ক খ্যাতনামা সাময়িকী ফোর্বসের বক্তব্য হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত (প্রথম পৃষ্ঠা, দৈনিক সমকাল, ২ জুলাই, ২০১২)। দীর্ঘ এক গবেষণামূলক প্রতিবেদনে ফোর্বস বলেছে :'নিয়ন্ত্রণহীন অতি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী এই প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন লাগামছাড়া হয়ে ক্রমবিস্তৃত প্রায় একটি জাতিরাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। ৫৭ বিলিয়ন ডলারের মজুদ থাকা এই অতিকায় বিশ্বব্যাংকের ওপর তহবিল জোগানদার দেশগুলোর কোনো নজরদারি নেই বললে হয়। দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এই স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মধ্যে আবার রবার্ট জোয়েলিক স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতিগ্রস্ততার বিচারে সর্বযুগের শীর্ষ ব্যক্তি।
যাক রবার্ট জোয়েলিক এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বেচ্ছাচারী এবং অকার্যকর হয়ে পড়ার প্রসঙ্গ। এই বিশ্বব্যাংকের নিয়মনীতি, বিধিবিধান একেক দেশের জন্য একেক রকম। রবার্ট জোয়েলিক তার চাকরির মেয়াদে দেওয়া পদ্মা সেতু সংযুক্তি চুক্তি বাতিলের দলিলে শেষ স্বাক্ষরে সেটা ভালোই বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন।
তবে কুয়োর ব্যাঙের ওপর ঢিল মারা বাচ্চাদের জন্য একটা আমোদ আর খেলা। আর ব্যাঙের জন্য সেটা মরণ দশার শামিল। বাংলাদেশ দিন দিন সমৃদ্ধ হতে থাকা একটি রাষ্ট্র। কুয়োর ব্যাঙের সঙ্গে নতুন ও জাগ্রত বাংলাদেশের তুলনা চলে না। এই বিষয়ে পরে খানিকটা আলোচনা করা যাবে। তার আগে পদ্মা সেতু চুক্তি বাতিলে বিশ্বব্যাংকের বিপক্ষে দেশব্যাপী যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে তার দু'একটি তুলে না ধরলেই নয়।
যেমন বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন। তারা বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতু সংক্রান্ত চুক্তি বাতিলের বিষয়ে বলেছে, এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, অন্যায্য ও অনভিপ্রেত। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের তদন্তে তারা কাজ করে যাচ্ছিল। কানাডিয়ান পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছেও তারা দুর্নীতি সংক্রান্ত কাগজ ও তথ্য চেয়ে চিঠি চালাচালি করছিল। হঠাৎ কোনো বলা-কওয়া নেই, সতর্ক নোটিশ নেই, বিশ্বব্যাংক কর্তৃক চুক্তি বাতিলের ঘটনা। দুদকের প্রধান আইন পরামর্শদাতা আনিসুল হক প্রায় চ্যালেঞ্জের সুরে বলেছেন, সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় কোথায় বিচ্যুতি বা দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে, তা বিশ্বব্যাংক প্রমাণের ঘোষণা দিক।
চুক্তি বাতিলের সবচেয়ে জোরালো প্রতিক্রিয়া এসেছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, এমন ধারায় চুক্তি বাতিল একটি সার্বভৌম দেশকে অপমান করা বৈ কিছু নয়। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাংক নয়, এটা রবার্ট জোয়েলিকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। সংসদে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু চুক্তি বিষয়ে সময়-সময়ান্তরে নেওয়া কর্মপন্থার দীর্ঘ ও বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এও বলেছেন, সেতু চুক্তির ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতায় আসার সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি বলে তিনি বিশ্বাস করেন। বিশ্বব্যাংকের নতুন নেতৃত্ব ও প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল পুনর্বিবেচনার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ করেছিলাম বাংলাদেশ এখন আর কুয়োর ব্যাঙ নয়। বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশটা ওরকমই হয়ে যায় বটে। দেশটাকে কীভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাতারে টেনে নামানো যায়, সে ব্যাপারে ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় খুবই সচেষ্ট ও সক্রিয় থাকে তারা। তবে মহাজোট সরকারের গত সাড়ে তিন বছরে বাহ্যিক অর্থেই বাংলাদেশ এক নতুন ও জাগ্রত দেশে পরিণত হয়েছে। নানা বিষয়ে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে বর্তমান মহাজোট। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দৌরাত্ম্যকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব তো এই সরকারেরই। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর সুগন্ধি চাল বাইরে রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ তা কবে ভাবতে পেরেছিল? সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে বর্তমান মহাজোট সরকার। বিশ্ব সমীক্ষার হিসাবেই দেখা যায়, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে দু'ধাপ অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের।
মহাজোট সরকারের সাফল্যের তালিকা আরও দীর্ঘ। দু'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা ইস্যুর ওপর চাপাবাজি করে মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। যাহোক সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমি শুধু এইমাত্র বলব, জঙ্গিবাদ দমনে শতকরা ১০০ ভাগ সফল যে সরকার, যে বাংলাদেশ, সেই সরকার এবং সেই বাংলাদেশকে বিশেষভাবে প্রয়োজন রয়েছে গোটা পশ্চিমা বিশ্বেরই। এই বাস্তবতা না বোঝার কিছু নেই। আমি মনে করি, বিশ্বব্যাংক বিশ্ব বাস্তবতার বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। বিষয়টি কালবিলম্ব না করে তারা হৃদয়ঙ্গম করবেন। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের এখানেই ইতি টানছি।
রাহাত খান :কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন