গোলাম রব্বানী
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ করা হলেও দীর্ঘ দিনেও এর সুফল মিলছে না; নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বেই চলছে বিচার বিভাগ। অভিযোগ উঠেছে যে, উচ্চআদালতও সরকারের অভিপ্রায়ের বাইরে যেতে পারছে না। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার উদ্যোগটি কার্যত সরকারের মর্জির ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিচার বিভাগকে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায় সরকারের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ বলতে প্রশাসনের হাত থেকে বিচারিক মতা নিয়ে নেয়া ছাড়া পাঁচ বছরে আর কিছুই অর্জিত হয়নি বলে জানা গেছে। বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতে, পৃথক সচিবালয় গঠন না হওয়াটাই এ েেত্র সবচেয়ে বড় বাধা। কারণ পৃথক সচিবালয় না থাকায় এ বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কার্যত আইন মন্ত্রণালয় তথা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের হাতেই থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে একটি পৃথক বিচার বিভাগের কথা উল্লেখ আছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।’ সংবিধানে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের বিধান স্পষ্টভাবে থাকলেও রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে কোনো সরকারই এর পৃথকীকরণে কখনো কোনো পদপে নেয়নি।
১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর মাসদার হোসেনসহ ৪৪০ জন বিচারক বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে একটি মামলা দায়ের করেন। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পে ১৯৯৭ সালের ৭ মে এ মামলার রায় হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৯৯৯ সালে তাদের রায় ঘোষণা করেন। কিন্তু এ রায় বাস্তবায়ন করেনি কোনো সরকারই; বরং বিভিন্ন সরকার এর বাস্তবায়নে ২৭-২৮ দফা সময় চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে কেবল সময়পেণ করেছে।। অবশেষে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে পৃথক বলে ঘোষণা দেয়; কিন্তু এ জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে পাঁচটি বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করে তার একটি ছিল স্বাধীন বিচার বিভাগ। এতে বলা হয়Ñ ‘বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরপেতা নিশ্চিত করা হবে।’ কিন্তু মতা গ্রহণের সাড়ে তিন বছর পার হলেও নির্বাচনী সে ইশতেহার এখনো বাস্তবায়ন করেনি আওয়ামী লীগ।
এ ব্যাপারে মাসদার হোসেন মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য পৃথক সচিবালয় খুবই প্রয়োজন। সচিবালয় নির্বাহী বিভাগের কাছে না রেখে বিচার বিভাগের কাছে নিয়ে আসা প্রয়োজন। তবে সে জন্য জনবল দরকার। এ ছাড়া নিয়োগকৃত জনবলকে মনিটরিং করতে কিছু নিয়মকানুনও থাকতে হবে। সংবিধানবিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, এখানে দু’টি বিষয় রয়েছে- একটি হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আরেকটি হচ্ছে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা বলতেÑ রায় দেয়ার েেত্র স্বাধীনতা। সাধারণত এ ব্যাপারে কখনো কোনো প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ বলতেÑ নিজের প্রশাসন নিজে চালানোর উপায়। এটি করতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার ইউনিটকে অনেক বেশি শক্তিশালী করতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় যেসব কাজ করে সেটা এনে পুরোটাই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, অধঃস্তন আদালতের যে কাজ আইন সচিব করেন সেটা প্রধান বিচারপতির অধীনে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের করার কথা; অর্থাৎ সারা দেশে যে বিচার কাজ চলে তার নিয়ন্ত্রণ করবেন সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে এসব কাজ হবে।
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো পদপে নেয়া হচ্ছে না। এটি প্রধান বিচারপতিরও প্রশাসনিক দুর্বলতার লণ। কারণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিচার বিভাগ প্রশাসনিকভাবে পৃথক হয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়নে কোনো পদপে নিচ্ছেন না প্রধান বিচারপতি।’
ড. শাহদীন মালিক আরো বলেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার ইউনিটটিই সচিবালয় হিসেবে কাজ করতে পারে। দরকার কেবল একে শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকারগুলো বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেÑ এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। তবে এ চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে বিচার বিভাগকে। যদি বিচার বিভাগ শক্ত হাতে তা প্রতিহত না করে তবে দোষ সরকারের নয়।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করতে যে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে সব মতা সুপ্রিম কোর্টকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নিম্ন আদালত পরিচালনা একটি বিরাট ব্যাপার। কারণ এর জন্য অবকাঠামো, লোকবল, অর্থ ইত্যাদি দরকার। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা হয়নি। পৃথক সচিবালয় না থাকায় এখনো আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতে বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয় দেখভাল করছে। ফলে বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব রয়েই যাচ্ছে। ভিন্ন সচিবালয় না থাকায় আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে দায়সারা অনুমোদন দেয়া ছাড়া তাদের আর কোনো কিছু করণীয় থাকে না। তিনি বলেন, পৃথক সচিবালয় না থাকার ফলে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও এখানো তা আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন। আইন মন্ত্রণালয়ই এখনো বিচার বিভাগের বদলি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করে যাচ্ছে। এমনও ঘটনা আছে, যেখানে আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন পাওয়া না গেলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গেছে। তাই নিম্ন আদালতগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হলে একে আইন মন্ত্রণালয়ের আওতার বাইরে আনতে হবে এবং এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশনা আছে সেগুলো অবশ্যই অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে; নতুবা বিচার বিভাগ কাগজে কলমে পৃথক হলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে বিচারপ্রার্থী জনগণকে ন্যায়বিচার প্রদান করা যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল বলেন, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর নিম্ন আদালতের নিয়োগ, পোস্টিং, পদোন্নতি, ছুটি ইত্যাদি েেত্র প্রধান বিচারপতির একটি ভূমিকা থাকে। নির্বাহী বিভাগ তার (প্রধান বিচারপতি) মতামতের ভিত্তিতেই কাজ করার কথা। কিন্তু এসব েেত্র যদি প্রধান বিচারপতি তার মতার প্রয়োগ না করেন তাহলে পৃথক সচিবালয় করে কোনো লাভ নেই। তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগ পৃথক ঘোষণার পর নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ হচ্ছেন জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। কিন্তু একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও একটি শর্ত যোগ করে গেছেন। আগে একজন আইন গ্রাজুয়েট সরাসরি জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন পরীায় অংশ নিতে পারতেন। নতুন নিয়ম অনুসারে তাকে অ্যাডভোকেট হিসেবে দুই বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। আর যেহেতু অ্যাডভোকেটশিপের পরীা বার কাউন্সিলের মাধ্যমে হয় এবং সে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তাই একথা বলা যায় যে, নিম্ন আদালতে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সেখানেও দলীয়করণের সুযোগ রেখে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে একটি পৃথক বিচার বিভাগের কথা উল্লেখ আছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।’ সংবিধানে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের বিধান স্পষ্টভাবে থাকলেও রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে কোনো সরকারই এর পৃথকীকরণে কখনো কোনো পদপে নেয়নি।
১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর মাসদার হোসেনসহ ৪৪০ জন বিচারক বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে একটি মামলা দায়ের করেন। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পে ১৯৯৭ সালের ৭ মে এ মামলার রায় হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৯৯৯ সালে তাদের রায় ঘোষণা করেন। কিন্তু এ রায় বাস্তবায়ন করেনি কোনো সরকারই; বরং বিভিন্ন সরকার এর বাস্তবায়নে ২৭-২৮ দফা সময় চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে কেবল সময়পেণ করেছে।। অবশেষে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে পৃথক বলে ঘোষণা দেয়; কিন্তু এ জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে পাঁচটি বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করে তার একটি ছিল স্বাধীন বিচার বিভাগ। এতে বলা হয়Ñ ‘বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরপেতা নিশ্চিত করা হবে।’ কিন্তু মতা গ্রহণের সাড়ে তিন বছর পার হলেও নির্বাচনী সে ইশতেহার এখনো বাস্তবায়ন করেনি আওয়ামী লীগ।
এ ব্যাপারে মাসদার হোসেন মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য পৃথক সচিবালয় খুবই প্রয়োজন। সচিবালয় নির্বাহী বিভাগের কাছে না রেখে বিচার বিভাগের কাছে নিয়ে আসা প্রয়োজন। তবে সে জন্য জনবল দরকার। এ ছাড়া নিয়োগকৃত জনবলকে মনিটরিং করতে কিছু নিয়মকানুনও থাকতে হবে। সংবিধানবিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, এখানে দু’টি বিষয় রয়েছে- একটি হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আরেকটি হচ্ছে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা বলতেÑ রায় দেয়ার েেত্র স্বাধীনতা। সাধারণত এ ব্যাপারে কখনো কোনো প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ বলতেÑ নিজের প্রশাসন নিজে চালানোর উপায়। এটি করতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার ইউনিটকে অনেক বেশি শক্তিশালী করতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় যেসব কাজ করে সেটা এনে পুরোটাই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, অধঃস্তন আদালতের যে কাজ আইন সচিব করেন সেটা প্রধান বিচারপতির অধীনে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের করার কথা; অর্থাৎ সারা দেশে যে বিচার কাজ চলে তার নিয়ন্ত্রণ করবেন সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে এসব কাজ হবে।
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো পদপে নেয়া হচ্ছে না। এটি প্রধান বিচারপতিরও প্রশাসনিক দুর্বলতার লণ। কারণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিচার বিভাগ প্রশাসনিকভাবে পৃথক হয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়নে কোনো পদপে নিচ্ছেন না প্রধান বিচারপতি।’
ড. শাহদীন মালিক আরো বলেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার ইউনিটটিই সচিবালয় হিসেবে কাজ করতে পারে। দরকার কেবল একে শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকারগুলো বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেÑ এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। তবে এ চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে বিচার বিভাগকে। যদি বিচার বিভাগ শক্ত হাতে তা প্রতিহত না করে তবে দোষ সরকারের নয়।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করতে যে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে সব মতা সুপ্রিম কোর্টকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নিম্ন আদালত পরিচালনা একটি বিরাট ব্যাপার। কারণ এর জন্য অবকাঠামো, লোকবল, অর্থ ইত্যাদি দরকার। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা হয়নি। পৃথক সচিবালয় না থাকায় এখনো আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতে বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয় দেখভাল করছে। ফলে বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব রয়েই যাচ্ছে। ভিন্ন সচিবালয় না থাকায় আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে দায়সারা অনুমোদন দেয়া ছাড়া তাদের আর কোনো কিছু করণীয় থাকে না। তিনি বলেন, পৃথক সচিবালয় না থাকার ফলে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও এখানো তা আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন। আইন মন্ত্রণালয়ই এখনো বিচার বিভাগের বদলি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করে যাচ্ছে। এমনও ঘটনা আছে, যেখানে আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন পাওয়া না গেলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গেছে। তাই নিম্ন আদালতগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হলে একে আইন মন্ত্রণালয়ের আওতার বাইরে আনতে হবে এবং এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশনা আছে সেগুলো অবশ্যই অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে; নতুবা বিচার বিভাগ কাগজে কলমে পৃথক হলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে বিচারপ্রার্থী জনগণকে ন্যায়বিচার প্রদান করা যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল বলেন, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর নিম্ন আদালতের নিয়োগ, পোস্টিং, পদোন্নতি, ছুটি ইত্যাদি েেত্র প্রধান বিচারপতির একটি ভূমিকা থাকে। নির্বাহী বিভাগ তার (প্রধান বিচারপতি) মতামতের ভিত্তিতেই কাজ করার কথা। কিন্তু এসব েেত্র যদি প্রধান বিচারপতি তার মতার প্রয়োগ না করেন তাহলে পৃথক সচিবালয় করে কোনো লাভ নেই। তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগ পৃথক ঘোষণার পর নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ হচ্ছেন জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। কিন্তু একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও একটি শর্ত যোগ করে গেছেন। আগে একজন আইন গ্রাজুয়েট সরাসরি জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন পরীায় অংশ নিতে পারতেন। নতুন নিয়ম অনুসারে তাকে অ্যাডভোকেট হিসেবে দুই বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। আর যেহেতু অ্যাডভোকেটশিপের পরীা বার কাউন্সিলের মাধ্যমে হয় এবং সে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তাই একথা বলা যায় যে, নিম্ন আদালতে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সেখানেও দলীয়করণের সুযোগ রেখে দেয়া হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন