এ এ জা ফ র ই ক বা ল
বাজারের পাইকাররা এক ডজন ডিমের দাম নিচ্ছেন ১১০ টাকা। পাড়ার মুদি দোকানগুলোতে এক হালি ডিমের দাম এখনও ৪০ টাকা। একটা ডিম উত্পাদনে খরচ কত, ভোক্তাদের সে হিসাবটি সঠিকভাবে যথাসময়ে জানান না দিয়ে মাত্র এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে ৮৫-৯০ টাকা ডজনের ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ভোক্তারা যখন ডিম-মুরগির বাজার নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন তখন টেলিভিশনে টক শো করে বোঝানো হয়েছে, চারটি ডিম সমান এক লিটার দুধ; মিল্ক ভিটার এক লিটার দুধ বিক্রি করা হচ্ছে ৬২ টাকায়। সুতরাং এক পিস ডিমের দাম তো ১৫ টাকা হওয়া উচিত।
কথার চাতুরীতে পোল্ট্রি খামারি এবং ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের নিয়ে যে খেলা খেলেছেন তাতে তারা হেরেছেন। পুরো কূটকৌশলটিই হয়ে গেছে বুমেরাং।
সরকার দৈনিক গড়ে ছয় লাখ পিস ভারতীয় ডিম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে খামারি পর্যায়ে প্রতিডজন ডিমের দাম কমেছে ২০ আর ভোক্তাপর্যায়ে ১০ টাকা। যদিও জুলাই পর্যন্ত ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে সরকার বাধ্য হবে ছয় লাখের জায়গায় দৈনিক ১৮ লাখ ডিম আমদানি করতে। আগস্টে রোজা থাকবে, সুতরাং এ মাসেও খোলা রাখতে হবে ডিম আমদানির দরজা।
এখন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে ভিন্ন সুর। লাখো টাকা খরচ করে সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে তারা বলছেন, ভারতে বার্ড ফ্লু আছে, তাই সেখান থেকে ডিম আমদানি করা উচিত নয়। ভারতীয় ডিমের গুণগত মান ভালো নয়, আকারে ছোট। এভাবে ডিম আমদানি অব্যাহত থাকলে সব পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হবে লাখো লোক এবং ক্ষতি হবে হাজারো কোটি টাকা। শুধু ভারত থেকে ডিম আমদানি বন্ধ করলেই চলবে না, বিদেশের কোনো বড় কোম্পানিকেও এদেশে পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলতে দেওয়া যাবে না। কারণ তারা তাদের দেশের ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে এদেশে যে মুনাফা করবে তা-ও নিয়ে যাবে তাদের দেশে। এতে করে দেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচানোর প্রয়োজনে সরকারকে শতকরা ৫.৫০ হারে নতুন আরোপিত কর রেয়াত দিতে হবে এবং কৃষিঋণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদেরও ব্যাংকঋণের সুদের হার কমাতে হবে।
দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচানোর তাগিদে সরকার এসব দাবি পূরণে সহানুভূতিশীল হলে কেউ আপত্তি করবে না। তবে এক্ষেত্রে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী এবং খামারিদের অঙ্গীকার করতে হবে-সময় এবং সুযোগ বুঝে তারা যেন ভোক্তাদের এবারকার মতো জিম্মি বানিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির অপকৌশল গ্রহণ না করেন। কোনো বড় বিদেশি কোম্পানি যদি তাদের দেশের পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্প গড়তে আসে তাহলে দেশের স্বার্থেই তাদের স্বাগত জানানো প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আনা না গেলে এ শিল্পের উন্নয়ন চিন্তা অবান্তর। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গেও বাজার প্রতিযোগিতায় থাকতে হবে। মাত্র মাস তিনেক আগেও টেকনাফ থেকে মংডুতে প্রচুর ডিম যেত। দাম বেড়ে যাওয়ায় সেখানে ডিম পাঠানো যাচ্ছে না। এতে কার কতটুকু ক্ষতি হয়েছে খামারি এবং ব্যবসায়ীরা নিশ্চয়ই তা বিবেচনায় নেবেন।
খামারিরা যে ডিম বিক্রি করছে পিসপ্রতি সাড়ে সাত টাকা ভোক্তাকে কেন সে ডিম ১০ টাকায় কিনতে হবে? শুধু সরকারকে নয়, খামারিদেরও বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যবসায় আড়তদারের মতো মধ্যস্বত্বভোগী থাকতেই পারে কিন্তু তাদের ওপরও দৃশ্যমান এবং পরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।
দেশে যেখানে ডিমের ঘাটতি দৈনিক ২০ থেকে ২৫ লাখ সেখানে কেন ছয় লাখ পিস আমদানির অনুমতি দেওয়া হল? ভারতীয় ডিম ঢাকা পর্যন্ত আসতে নাকি খরচ হয় পিসপ্রতি সাড়ে ছয় টাকা। বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় কোনো ডিমই তো সাড়ে সাত কিংবা আট টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায় না। সঙ্গত কারণেই বলতে হয়, চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভোক্তাদের কম দামে ডিম সরবরাহের জন্য কিংবা ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ডিম আমদানি করা হচ্ছে না। চাহিদা ঘাটতির সুযোগে তৃতীয় পক্ষকে অস্বচ্ছ ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ অস্বচ্ছতাগুলো চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এগুলো অপসারণ কিংবা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেননি কেউ। দেশে এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অবস্থা বিরাজমান তাকে না বলা যায় ভোক্তাবান্ধব, না বলা যায় উত্পাদনবান্ধব। যে বিশেষণটি এক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রয়োজন হতে পারে-ভোক্তাদের গলায় গামছা পেঁচিয়ে পয়সা আদায়ের চেষ্টা মাত্র।
সারা মুসলিম বিশ্বে রমজান এলে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম কমায়। বাংলাদেশে সেটি ঠিক তার উল্টো। রমজান আসতে না আসতেই বেড়ে চলেছে পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, রসুন, হলুদ, শুকনা মরিচের দাম। এসব পণ্য বিপণনে সরকার শতকরা ১০ ভাগের বেশি মুনাফা না করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ধরনের পরামর্শ ও নির্দেশ অতীতে কেউ মানেননি, ভবিষ্যতেও কেউ মানবেন না। কারণ মানানোর মন্ত্র সরকারের জানা নেই। তা ছাড়া রাজনৈতিক সরকার যদি জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় না নিয়ে দলের লোককে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করাতে চায় এবং করার সুযোগ তৈরিতে সব সময় যত্নবান থাকে তাহলে অবধারিতভাবেই জনস্বার্থ উপেক্ষিত হবে।
এবার টিসিবির ডিলারশিপ কারা পেয়েছে? এমন লোকও নাকি আছে যাদের দোকান কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নেই। ইতোমধ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গণমাধ্যমে। টিসিবি কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি এ প্রশ্নটি আমলে নেয়নি। চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা, খেজুরসহ অনেক পণ্য আমদানি এবং বিপণনের দায় এবার টিসিবির কাঁধে। তারা যদি এ দায় দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর ন্যস্ত করে অতীতের মতো নিরাপদ থাকতে চায় তাহলে সরকারের বারটা বাজাতে আর কারো প্রয়োজন হবে না।
সময় বাঁচানো, অর্থ বাঁচানো এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকার সোচ্চার হলেও এক্ষেত্রে টিসিবি এবং ট্যারিফ কমিশনের কী করা প্রয়োজন তা বোধ হয় এ দুটি প্রতিষ্ঠান বোঝে না। এমনকি সরকারকে সহযোগিতা করার কৌশল নির্ণয়েও তারা উদাসীন। টিসিবি এবং ট্যারিফ কমিশনের দুটি ওয়েবসাইট আছে। টিসিবির ওয়েবসাইট সম্পর্কে মানুষ জানে কিন্তু ট্যারিফ কমিশনের ওয়েবসাইট সম্পর্কে কেউ কিছু জানেই না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যা আমাদের আমদানি করে আনতে হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে সেসব পণ্যের দাম কোথায় কত, সেগুলো সঠিকভাবে এ ওয়েবসাইটগুলোতে নেই কেন? থাকলে কী হতো? ভোক্তারা দাম না বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারত। গত ছয় মাসে ভোজ্যতেলের দাম কতবার বেড়েছে? ব্যবসায়ীরা কার অনুমতি নিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াচ্ছেন? যারা সিন্ডিকেট করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ান তাদের বিরুদ্ধে ট্যারিফ কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে? অচিরেই জনগণ এগুলো জানতে চাইবে, কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতার প্রশ্নে জনগণ আগের চেয়ে বেশি সজাগ এবং সোচ্চার। প্রতিষ্ঠান আছে কি নেই সেটাই যখন বোঝা যায় না তখন সে প্রতিষ্ঠান রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা গুণে কী লাভ?
অবশ্য আজকাল রাজনৈতিক প্রশাসনে একটি নতুন ও আজব ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের মুখে-লিখিত অভিযোগ থাকতে হবে। গত সাড়ে তিন বছরে যে বিষয়ে ভোক্তারা লিখিত অভিযোগ করেননি, আগামী দেড় বছরেও করবেন না কিন্তু তারপর যে জবাবটি দেবে তা সামাল দেওয়াটা হয়ে উঠবে কঠিন।
নুনের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। দেশি নুন দিয়ে বাজার চাহিদার ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না বলে বিদেশ থেকে প্যাকেটজাত লবণ আমদানির সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তথাপি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বাজারে ২০ টাকার এক কেজি নুন কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। তবে টাকা হলে নুন পেতে অসুবিধা হয় না। নুন নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন কেলেঙ্কারি হবে কে জানে। প্রবীণদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে নূরুল আমিন সরকারের নুন কাহিনী। দুই আনার নুনের দাম যখন আট টাকায় পৌঁছেছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হাইকোর্ট মোড়ে তত্কালীন প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী মানিকগঞ্জের আবদুল লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গে কী আচরণ করেছিল তা অনেকের জানা থাকতে পারে।
ব্যবসায়ী এবং উত্পাদকরা সুযোগ পেলেই পণ্য ঘাটতি তৈরি করে জিম্মি বানায় ভোক্তাদের। ব্যবসায়ীদের এই কারসাজি চলে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে সব সময়ের সব সরকার। কিন্তু লক্ষ করা গেছে, একটা সময় সরকারি শাসনযন্ত্র এবং সরকার ভোক্তার প্রয়োজনে অঙ্গীকারটি আমলে না নিয়ে সমঝোতা করছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এতে সাময়িকভাবে হয়তোবা কারও কিছু লাভ হচ্ছে কিন্তু জনঅধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ। কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে এই অস্বচ্ছতা প্রত্যাশা করে না জনগণ।
আর ১০টি অনুন্নত পণ্য ঘাটতির দেশের মতো আমাদের দেশেও রয়েছে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি। চাহিদার তুলনায় উত্পাদন কম হওয়ায় যে স্বাভাবিক পণ্য ঘাটতি, তা পূরণে পরিকল্পিত আমদানি সম্পর্কে সব সময় সতর্ক থাকতে হয় নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ করে সরকারকে। কোথা থেকে, কখন কোন পণ্য আনা প্রয়োজন-এগুলো নির্ধারিত নিয়মে যথাসময়ে সঠিকভাবে করা হলে সমস্যা সৃষ্টির ঝুঁকি থাকে কম। হঠাত্ সৃষ্ট কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় এমন অবস্থাও ঘটে যেগুলো সামাল দেওয়া নিয়ন্ত্রণকারী, বিশেষ করে সরকারের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তারপরও সব দায় বহন করতে হয় সরকারকে এবং এ সঙ্কট নিরসনে প্রস্তুতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই প্রয়োজন দেশে একটি সুষ্ঠু বাণিজ্যনীতি।
আমাদের কোনো জাতীয় বাণিজ্যনীতি নেই। দেশের বয়স দুই কুড়ি অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা বাণিজ্যনীতির প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। বাণিজ্যনীতি না থাকার কারণেই সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ী, উত্পাদক এবং আমদানিকারকরা। এটা দূর হওয়া এবং দূর করা অত্যন্ত জরুরি। জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারা কাজটা যত সহজ ততটা সহজ নয় বিকল্প কোনো প্রশাসনের দ্বারা। এজন্য প্রয়োজন উদ্যোগ। কেন সে উদ্যোগ অনুপস্থিত সে ব্যাখ্যা কে দেবে?
গ্রীষ্ম এবং বর্ষায় ডিম উত্পাদনে কতটা ঘাটতি থাকবে এবং কখন ডিম আমদানি করা হলে বাজার ব্যবস্থার ওপর মূল্যবৃদ্ধির কৌশল ঘটাতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা, সেটা জানা থাকতে হবে কর্তৃপক্ষের। তাদের অজ্ঞতা জনভোগান্তির সৃষ্টি করলে দায় নিতে হবে সরকারকে। এখন নিতেও হচ্ছে। ডিম, নুন, তেলসহ অধিকাংশ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সরকারকে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণের আইন সব দেশেই থাকে। কিন্তু আইন প্রয়োগের সঠিক কৌশল জানা না থাকলে আইন করে লাভ হয় না। আমাদের দেশে সে কৌশলটি খুঁজে বের করার আদৌ তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। পয়সা হলে সবকিছুই পাওয়া যায়। অর্থাত্ সরবরাহ পরিমিত। পরিমিত সরবরাহ থাকার পর কেন পণ্যের দাম বাড়ছে সেটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না কেউ। এটা চলতে পারে না কিংবা চলতে দেওয়া উচিতও নয়।
পণ্যবাজার যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, ন্যায্যমূল্যে সঠিক সময়ে ভোক্তাকে পরিমিত পণ্য সরবরাহ যদি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে কখনোই অর্থনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অর্থনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে রাজনীতিতেও সুস্থতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ডিম, নুন এবং তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে না। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পর্যায়ের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে যদি দ্রব্যমূল্যের সমন্বয় না থাকে তাহলে সব ক্ষেত্রেই বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।
লেখক : সাবেক ব্যাংকার
বাজারের পাইকাররা এক ডজন ডিমের দাম নিচ্ছেন ১১০ টাকা। পাড়ার মুদি দোকানগুলোতে এক হালি ডিমের দাম এখনও ৪০ টাকা। একটা ডিম উত্পাদনে খরচ কত, ভোক্তাদের সে হিসাবটি সঠিকভাবে যথাসময়ে জানান না দিয়ে মাত্র এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে ৮৫-৯০ টাকা ডজনের ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ভোক্তারা যখন ডিম-মুরগির বাজার নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন তখন টেলিভিশনে টক শো করে বোঝানো হয়েছে, চারটি ডিম সমান এক লিটার দুধ; মিল্ক ভিটার এক লিটার দুধ বিক্রি করা হচ্ছে ৬২ টাকায়। সুতরাং এক পিস ডিমের দাম তো ১৫ টাকা হওয়া উচিত।
কথার চাতুরীতে পোল্ট্রি খামারি এবং ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের নিয়ে যে খেলা খেলেছেন তাতে তারা হেরেছেন। পুরো কূটকৌশলটিই হয়ে গেছে বুমেরাং।
সরকার দৈনিক গড়ে ছয় লাখ পিস ভারতীয় ডিম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে খামারি পর্যায়ে প্রতিডজন ডিমের দাম কমেছে ২০ আর ভোক্তাপর্যায়ে ১০ টাকা। যদিও জুলাই পর্যন্ত ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে সরকার বাধ্য হবে ছয় লাখের জায়গায় দৈনিক ১৮ লাখ ডিম আমদানি করতে। আগস্টে রোজা থাকবে, সুতরাং এ মাসেও খোলা রাখতে হবে ডিম আমদানির দরজা।
এখন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে ভিন্ন সুর। লাখো টাকা খরচ করে সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে তারা বলছেন, ভারতে বার্ড ফ্লু আছে, তাই সেখান থেকে ডিম আমদানি করা উচিত নয়। ভারতীয় ডিমের গুণগত মান ভালো নয়, আকারে ছোট। এভাবে ডিম আমদানি অব্যাহত থাকলে সব পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হবে লাখো লোক এবং ক্ষতি হবে হাজারো কোটি টাকা। শুধু ভারত থেকে ডিম আমদানি বন্ধ করলেই চলবে না, বিদেশের কোনো বড় কোম্পানিকেও এদেশে পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলতে দেওয়া যাবে না। কারণ তারা তাদের দেশের ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে এদেশে যে মুনাফা করবে তা-ও নিয়ে যাবে তাদের দেশে। এতে করে দেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচানোর প্রয়োজনে সরকারকে শতকরা ৫.৫০ হারে নতুন আরোপিত কর রেয়াত দিতে হবে এবং কৃষিঋণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদেরও ব্যাংকঋণের সুদের হার কমাতে হবে।
দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচানোর তাগিদে সরকার এসব দাবি পূরণে সহানুভূতিশীল হলে কেউ আপত্তি করবে না। তবে এক্ষেত্রে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী এবং খামারিদের অঙ্গীকার করতে হবে-সময় এবং সুযোগ বুঝে তারা যেন ভোক্তাদের এবারকার মতো জিম্মি বানিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির অপকৌশল গ্রহণ না করেন। কোনো বড় বিদেশি কোম্পানি যদি তাদের দেশের পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্প গড়তে আসে তাহলে দেশের স্বার্থেই তাদের স্বাগত জানানো প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আনা না গেলে এ শিল্পের উন্নয়ন চিন্তা অবান্তর। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গেও বাজার প্রতিযোগিতায় থাকতে হবে। মাত্র মাস তিনেক আগেও টেকনাফ থেকে মংডুতে প্রচুর ডিম যেত। দাম বেড়ে যাওয়ায় সেখানে ডিম পাঠানো যাচ্ছে না। এতে কার কতটুকু ক্ষতি হয়েছে খামারি এবং ব্যবসায়ীরা নিশ্চয়ই তা বিবেচনায় নেবেন।
খামারিরা যে ডিম বিক্রি করছে পিসপ্রতি সাড়ে সাত টাকা ভোক্তাকে কেন সে ডিম ১০ টাকায় কিনতে হবে? শুধু সরকারকে নয়, খামারিদেরও বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যবসায় আড়তদারের মতো মধ্যস্বত্বভোগী থাকতেই পারে কিন্তু তাদের ওপরও দৃশ্যমান এবং পরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।
দেশে যেখানে ডিমের ঘাটতি দৈনিক ২০ থেকে ২৫ লাখ সেখানে কেন ছয় লাখ পিস আমদানির অনুমতি দেওয়া হল? ভারতীয় ডিম ঢাকা পর্যন্ত আসতে নাকি খরচ হয় পিসপ্রতি সাড়ে ছয় টাকা। বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় কোনো ডিমই তো সাড়ে সাত কিংবা আট টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায় না। সঙ্গত কারণেই বলতে হয়, চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভোক্তাদের কম দামে ডিম সরবরাহের জন্য কিংবা ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ডিম আমদানি করা হচ্ছে না। চাহিদা ঘাটতির সুযোগে তৃতীয় পক্ষকে অস্বচ্ছ ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ অস্বচ্ছতাগুলো চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এগুলো অপসারণ কিংবা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেননি কেউ। দেশে এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অবস্থা বিরাজমান তাকে না বলা যায় ভোক্তাবান্ধব, না বলা যায় উত্পাদনবান্ধব। যে বিশেষণটি এক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রয়োজন হতে পারে-ভোক্তাদের গলায় গামছা পেঁচিয়ে পয়সা আদায়ের চেষ্টা মাত্র।
সারা মুসলিম বিশ্বে রমজান এলে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম কমায়। বাংলাদেশে সেটি ঠিক তার উল্টো। রমজান আসতে না আসতেই বেড়ে চলেছে পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, রসুন, হলুদ, শুকনা মরিচের দাম। এসব পণ্য বিপণনে সরকার শতকরা ১০ ভাগের বেশি মুনাফা না করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ধরনের পরামর্শ ও নির্দেশ অতীতে কেউ মানেননি, ভবিষ্যতেও কেউ মানবেন না। কারণ মানানোর মন্ত্র সরকারের জানা নেই। তা ছাড়া রাজনৈতিক সরকার যদি জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় না নিয়ে দলের লোককে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করাতে চায় এবং করার সুযোগ তৈরিতে সব সময় যত্নবান থাকে তাহলে অবধারিতভাবেই জনস্বার্থ উপেক্ষিত হবে।
এবার টিসিবির ডিলারশিপ কারা পেয়েছে? এমন লোকও নাকি আছে যাদের দোকান কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নেই। ইতোমধ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গণমাধ্যমে। টিসিবি কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি এ প্রশ্নটি আমলে নেয়নি। চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা, খেজুরসহ অনেক পণ্য আমদানি এবং বিপণনের দায় এবার টিসিবির কাঁধে। তারা যদি এ দায় দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর ন্যস্ত করে অতীতের মতো নিরাপদ থাকতে চায় তাহলে সরকারের বারটা বাজাতে আর কারো প্রয়োজন হবে না।
সময় বাঁচানো, অর্থ বাঁচানো এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকার সোচ্চার হলেও এক্ষেত্রে টিসিবি এবং ট্যারিফ কমিশনের কী করা প্রয়োজন তা বোধ হয় এ দুটি প্রতিষ্ঠান বোঝে না। এমনকি সরকারকে সহযোগিতা করার কৌশল নির্ণয়েও তারা উদাসীন। টিসিবি এবং ট্যারিফ কমিশনের দুটি ওয়েবসাইট আছে। টিসিবির ওয়েবসাইট সম্পর্কে মানুষ জানে কিন্তু ট্যারিফ কমিশনের ওয়েবসাইট সম্পর্কে কেউ কিছু জানেই না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যা আমাদের আমদানি করে আনতে হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে সেসব পণ্যের দাম কোথায় কত, সেগুলো সঠিকভাবে এ ওয়েবসাইটগুলোতে নেই কেন? থাকলে কী হতো? ভোক্তারা দাম না বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারত। গত ছয় মাসে ভোজ্যতেলের দাম কতবার বেড়েছে? ব্যবসায়ীরা কার অনুমতি নিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াচ্ছেন? যারা সিন্ডিকেট করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ান তাদের বিরুদ্ধে ট্যারিফ কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে? অচিরেই জনগণ এগুলো জানতে চাইবে, কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতার প্রশ্নে জনগণ আগের চেয়ে বেশি সজাগ এবং সোচ্চার। প্রতিষ্ঠান আছে কি নেই সেটাই যখন বোঝা যায় না তখন সে প্রতিষ্ঠান রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা গুণে কী লাভ?
অবশ্য আজকাল রাজনৈতিক প্রশাসনে একটি নতুন ও আজব ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের মুখে-লিখিত অভিযোগ থাকতে হবে। গত সাড়ে তিন বছরে যে বিষয়ে ভোক্তারা লিখিত অভিযোগ করেননি, আগামী দেড় বছরেও করবেন না কিন্তু তারপর যে জবাবটি দেবে তা সামাল দেওয়াটা হয়ে উঠবে কঠিন।
নুনের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। দেশি নুন দিয়ে বাজার চাহিদার ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না বলে বিদেশ থেকে প্যাকেটজাত লবণ আমদানির সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তথাপি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বাজারে ২০ টাকার এক কেজি নুন কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। তবে টাকা হলে নুন পেতে অসুবিধা হয় না। নুন নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন কেলেঙ্কারি হবে কে জানে। প্রবীণদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে নূরুল আমিন সরকারের নুন কাহিনী। দুই আনার নুনের দাম যখন আট টাকায় পৌঁছেছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হাইকোর্ট মোড়ে তত্কালীন প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী মানিকগঞ্জের আবদুল লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গে কী আচরণ করেছিল তা অনেকের জানা থাকতে পারে।
ব্যবসায়ী এবং উত্পাদকরা সুযোগ পেলেই পণ্য ঘাটতি তৈরি করে জিম্মি বানায় ভোক্তাদের। ব্যবসায়ীদের এই কারসাজি চলে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে সব সময়ের সব সরকার। কিন্তু লক্ষ করা গেছে, একটা সময় সরকারি শাসনযন্ত্র এবং সরকার ভোক্তার প্রয়োজনে অঙ্গীকারটি আমলে না নিয়ে সমঝোতা করছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এতে সাময়িকভাবে হয়তোবা কারও কিছু লাভ হচ্ছে কিন্তু জনঅধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ। কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে এই অস্বচ্ছতা প্রত্যাশা করে না জনগণ।
আর ১০টি অনুন্নত পণ্য ঘাটতির দেশের মতো আমাদের দেশেও রয়েছে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি। চাহিদার তুলনায় উত্পাদন কম হওয়ায় যে স্বাভাবিক পণ্য ঘাটতি, তা পূরণে পরিকল্পিত আমদানি সম্পর্কে সব সময় সতর্ক থাকতে হয় নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ করে সরকারকে। কোথা থেকে, কখন কোন পণ্য আনা প্রয়োজন-এগুলো নির্ধারিত নিয়মে যথাসময়ে সঠিকভাবে করা হলে সমস্যা সৃষ্টির ঝুঁকি থাকে কম। হঠাত্ সৃষ্ট কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় এমন অবস্থাও ঘটে যেগুলো সামাল দেওয়া নিয়ন্ত্রণকারী, বিশেষ করে সরকারের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তারপরও সব দায় বহন করতে হয় সরকারকে এবং এ সঙ্কট নিরসনে প্রস্তুতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই প্রয়োজন দেশে একটি সুষ্ঠু বাণিজ্যনীতি।
আমাদের কোনো জাতীয় বাণিজ্যনীতি নেই। দেশের বয়স দুই কুড়ি অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা বাণিজ্যনীতির প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। বাণিজ্যনীতি না থাকার কারণেই সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ী, উত্পাদক এবং আমদানিকারকরা। এটা দূর হওয়া এবং দূর করা অত্যন্ত জরুরি। জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারা কাজটা যত সহজ ততটা সহজ নয় বিকল্প কোনো প্রশাসনের দ্বারা। এজন্য প্রয়োজন উদ্যোগ। কেন সে উদ্যোগ অনুপস্থিত সে ব্যাখ্যা কে দেবে?
গ্রীষ্ম এবং বর্ষায় ডিম উত্পাদনে কতটা ঘাটতি থাকবে এবং কখন ডিম আমদানি করা হলে বাজার ব্যবস্থার ওপর মূল্যবৃদ্ধির কৌশল ঘটাতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা, সেটা জানা থাকতে হবে কর্তৃপক্ষের। তাদের অজ্ঞতা জনভোগান্তির সৃষ্টি করলে দায় নিতে হবে সরকারকে। এখন নিতেও হচ্ছে। ডিম, নুন, তেলসহ অধিকাংশ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সরকারকে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণের আইন সব দেশেই থাকে। কিন্তু আইন প্রয়োগের সঠিক কৌশল জানা না থাকলে আইন করে লাভ হয় না। আমাদের দেশে সে কৌশলটি খুঁজে বের করার আদৌ তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। পয়সা হলে সবকিছুই পাওয়া যায়। অর্থাত্ সরবরাহ পরিমিত। পরিমিত সরবরাহ থাকার পর কেন পণ্যের দাম বাড়ছে সেটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না কেউ। এটা চলতে পারে না কিংবা চলতে দেওয়া উচিতও নয়।
পণ্যবাজার যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, ন্যায্যমূল্যে সঠিক সময়ে ভোক্তাকে পরিমিত পণ্য সরবরাহ যদি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে কখনোই অর্থনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অর্থনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে রাজনীতিতেও সুস্থতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ডিম, নুন এবং তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে না। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পর্যায়ের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে যদি দ্রব্যমূল্যের সমন্বয় না থাকে তাহলে সব ক্ষেত্রেই বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।
লেখক : সাবেক ব্যাংকার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন