রবিবার, ১ জুলাই, ২০১২

দেশে গরিবের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে



 মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম  
‘যখন আমি কোনো গরিবকে খেতে দেই, তখন সবাই বলে যে, আমি নাকি একজন দয়ালু মহাপুরুষ। আর যখন আমি প্রশ্ন তুলি যে, গরিবের ঘরে খাওয়া থাকে না কেন, তখন আমাকে বলা হয় যে, আমি নাকি একজন কমিউনিস্ট।’ বেশ কয়েকদিন ধরে ইন্টারনেটের ফেইসবুকে পোস্ট হওয়া একটি ইংরেজি বার্তার বাংলা অনুবাদ অনেকটা এরকম।
গরিব কে? দারিদ্র্য কি? প্রথম দৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও এসব প্রশ্নের জবাব খুব সোজা-সরল নয়। এ বিষয় নিয়ে দার্শনিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ইত্যাদি নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা যেতে পারে। হালকা চালে কিম্বা বেশ গভীরতা নিয়েও তা নিয়ে কথাবার্তা বলা যায়। বিষয়টি নিয়ে একটি বিস্তৃত আলোচনায় যাওয়ার চেষ্টা এখানে আজ আমি করবো না। এদেশের দারিদ্র্য সমস্যা নিয়ে কেবল দু’চারটি প্রসঙ্গের অবতারণা করবো মাত্র।
শুরুতেই আমি পাঠককে সেই প্রাচীন প্রস্তরযুগের গুহাবাসী আদিম মানব সমাজের একজন রূপে নিজেকে কল্পনা করতে চেষ্টা করার অনুরোধ করবো। বর্তমান যুগের তুলনায় সেই আদিম সমাজে মানুষের খাওয়া-পরা-বেঁচে থাকা ইত্যাদি আয়োজনের সুযোগ ছিল কল্পনাতীত পরিমাণে সীমিত। সেই সমাজে ছিল না এখনকার মতো উন্নত জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উত্পাদন উপকরণের সমাহার। ছিল না বর্তমান সময়ের মতো ভোগ্যপণ্যের এতোটা বিস্তৃত প্রাপ্তির উপায়। ছিল না জীবন-জীবিকার উপকরণ ও সুযোগের এ রকম ব্যাপ্তি।
এখনকার সমাজে অবশ্য অনেকেই জীবন-জীবিকার এসব উন্নত উপকরণ ও প্রাচুর্যের অনেক কিছুই পায় না। তথাপি একথা সত্য যে, বর্তমানের সে সব ‘অনেক কিছুই পায় না’ ধরনের দরিদ্রতম মানুষের অবস্থার চেয়েও সেই আদিম যুগের গুহাবাসী সব মানুষেরই অবস্থা ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক-অনেক খারাপ। কিন্তু সে সমাজে সবাই ছিল সমানভাবে ‘সম্পদশালী’, তা সে ‘সম্পদের’ পরিমাণ যতো সামান্যই হোক না কেন। সে সমাজে কোনো ‘গরিব’ ছিল না। সমাজে কোনো ‘ধনী’ না থাকলে সেখানকার কোনো মানুষের পক্ষে কি নিজেকে ‘গরিব’ বলে অনুভব করা সম্ভব? জীবন সংগ্রামের প্রচণ্ড কষ্টকে তারা অনুভব করলেও দারিদ্র্যের কোনো উপলব্ধি তাদের মাঝে মোটেও ছিল না। সেই উপলব্ধি জন্ম নেয়ার সুযোগ কেবল তখনই সৃষ্টি হয়েছে যখন সমাজে উদ্ভব হয়েছে ধন-বৈষম্য ও শ্রেণী-বৈষম্য।
‘আমি গরিব’ এরূপ ধারণা জন্মাতে পারে তখনই যখন সমাজে ‘আমার চেয়ে ধনী’ ব্যক্তির অস্তিত্ব থাকে। গরিব হওয়ার বিষয়টি তাই সমসাময়িক আপেক্ষিকতার ওপর নির্ভরশীল। পারিপার্শ্বিক অথবা কল্পনার জগতের তুলনামূলক মানদণ্ডেই কেবল ‘গরিব’-এর কোনো অর্থপূর্ণ তাত্পর্য থাকতে পারে। আদিম মানব সমাজ ছিল সাম্যের সমাজ। সেখানে ছিল না ভোগ বা সম্পদের কোনো বৈষম্য। সম্পদ কম থাকলেও তা সকলের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হতো। উত্পাদনের উপকরণ, উত্পাদিত সম্পদ ইত্যাদি সবকিছুই ছিল সমাজের সাধারণ যৌথ মালিকানায়। এ সবের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বলে কিছু ছিল না। ব্যক্তি মালিকানা কিম্বা সে সম্পর্কিত কোনো ধারণা জন্ম নেয়ার মতো অবস্থা তখনো সৃষ্টি হয়নি।
আদিম যুগে সমাজে সম্পদ ছিল কম, কিন্তু সেখানে কোনো ‘গরিব’ ছিল না। অথচ, বর্তমানে সেই তুলনায় সম্পদ লক্ষ-কোটি গুণ বাড়লেও ‘গরিব’ ও গরিবি সম্পর্কে উপলব্ধি শুধু তীব্রভাবে বিরাজই করে না, তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই একথা বলা সংগত যে, মানুষ তার সম্পদের স্বল্পতার কারণে গরিব হয় না। সে ‘গরিব’ হয় বৈষম্যের উপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে।
ধন-বৈষম্য ও শ্রেণী-বৈষম্য মানুষের স্বাভাবিক, প্রকৃতি জাত, আদি, অকৃত্রিম, সনাতন চিরস্থায়ী কোনো বৈশিষ্ট্য নয়। আদি যুগ ছিল সাম্যবাদের যুগ। কাল পরিক্রমায় উত্পাদিকা শক্তির বিকাশের প্রক্রিয়াতেই বৈষম্যের উদ্ভব হয়েছিল। তার পর যুগ যুগ ধরে শোষণ ও বৈষম্যের সমাজ চলেছে। মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সমাজে ‘বৈষম্য’ ও ‘ধনী-গরিবের’ অস্তিত্ব স্বাভাবিক ও অনিবার্য। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য বলা হয়,—ধনী-গরিব তো থাকবেই, হাতের পাঁচ আঙ্গুল কি কখনো সমান হয়? হায়রে ভণ্ডর দল! হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান হয় না ঠিকই। কিন্তু ছোট-বড় সব আঙ্গুলে কি একই রক্ত চাপে, একই লাল রক্ত প্রবাহিত হয় না? একজনের ৩২নং আর আরেকজনের ৩৬ নং-এর গেঞ্জি গায়ে ফিট করতে পারে। কিন্তু সাইজের তারতম্যের জন্য কি প্রত্যেকের গায়ে গেঞ্জি চাপানোর অধিকার ও সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্যকে যুক্তিসংগত বলে মেনে নেয়া যেতে পারে?
সুতরাং বলা যায় যে, ধন-বৈষম্য ও শ্রেণী-বৈষম্য মানব সমাজের জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত বা প্রকৃতিগত কোনো বৈশিষ্ট্য নয়। যেহেতু দারিদ্র্য হলো বৈষম্যের উপজাত,  সে কারণে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য। অর্থাত্ বৈষম্যই দারিদ্র্যের উত্স। নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষায় ‘দারিদ্র্য কোনো আরোপিত দুর্ঘটনা নয়। দাসত্ব ও বর্ণবাদের মতো তা মানুষের দ্বারাই সৃষ্ট। তাই মানুষের দ্বারাই তা অপসারণ করা সম্ভব।’
বৃটিশ ও পাকিস্তানি জামানার দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে বৈষম্য ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করাটাই ছিল রাষ্ট্রীয় নীতির অঙ্গীভূত। একাত্তরের পর রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য-দারিদ্র্য দূর করার অনুকূলে প্রগতিশীল সাম্য-অভিমুখী নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নীতি অনুসারে যে ভাবে যে সব কাজ করা প্রয়োজন ছিল সেভাবে তা করা হয়নি। পঁচাত্তরে সেই রাষ্ট্রীয় নীতিও পরিত্যাগ করা হয়েছিল। পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতির নামে বৈষম্য ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির পাকিস্তানি ব্যবস্থার ধারায় দেশকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল। এখনো বাংলাদেশ সেই পথেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে যা হাবার তাই ঘটছে। সমাজে বৈষম্য ও দারিদ্র্য বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশে ধন বৈষম্য-শ্রেণী বৈষম্য এখন অতি কুিসত রূপ ও আকার ধারণ করেছে। জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় কিছু পরিমাণে বাড়লেও, সম্পদের বণ্টন হয়ে পড়েছে আরো অসম। ধনী-গরিবের ফারাক প্রশস্ততর হয়েছে। উল্লম্বিক সামাজিক স্থানান্তর (vertical social mobility)-এর সুযোগ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। শরীরের ৯৯ ভাগ অংশের প্রায় সব রক্ত মুখমণ্ডলে নাসিকার চতুর্দিকের ১ ভাগের মধ্যে এসে জমা হওয়ায় সমাজ এক লাল-মুখো কুিসত জন্তুর রূপ লাভ করেছে।
চরম দারিদ্র্যের হার ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি দেশের লুটেরা ধনিকদের বিলাসিতায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা। যুক্তি দেয়া হয় যে, বিদেশ থেকে ব্যবসা পাওয়ার জন্য ও দেশের স্ট্যাটাস বড় করে তুলে ধরে বিদেশিদের আকর্ষণ করার জন্য বিদেশি বিলিয়নিয়ারদের সাথে তাল রেখে তাদেরকে এসব বিলাসিতা করতে হয়। ছেলেমেয়ের বিয়েতে ১০-২০ কোটি টাকা খরচ করা, বিদেশ থেকে পান-সুপারিসহ সবকিছু কেনাকাটা করা, মায় প্যারিস থেকে পানীয় জলের বোতল কিনে আনা, মাসে মাসে হীরার গয়নাসহ দামি জুয়েলারি কিনে লকার ভরাট করা, অনুষ্ঠানাদির জন্য চীনের কুনমিং শহর থেকে বিমান যোগে তাজা ফুল নিয়ে আসা—লাল-মুখোদের সমাজে চলছে এসব। ইটালিয়ান পাথর ও বেলজিয়াম-সুইজারল্যান্ডের ক্রিস্টাল সামগ্রী দিয়ে সুসজ্জিত তাদের একটি বিলাসী টয়েলেটের পেছনে তারা খরচ করছে ৭০-৮০ লক্ষ টাকা। এদিকে, টয়েলেটের জন্য খরচ করা তাদের এই টাকার লক্ষ ভাগের এক ভাগ অর্থ, মাত্র ৭০-৮০ টাকার অষুধের অভাবে হতদরিদ্র পিতার অসুস্থ শিশুপুত্রকে অসহায়ভাবে মরতে হয়। কি নিষ্ঠুর ও অমানবিক এক বাস্তবতা আজ দেশে বিরাজ করছে! সংখ্যাতত্ত্বের মারপ্যাঁচে দারিদ্র্যের ক্রমবর্ধমান এই বীভত্সতা আড়াল করার চেষ্টা বৃথা।
বাঁচার উপায় আর না পেয়ে গ্রাম থেকে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকায় ভাসমান নিরন্ন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে হাজারে হাজার। আর পাশাপাশি শহরে ঢুকছে কোটি টাকার বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বিএমডব্লিউ, পোর্শে ইত্যাদিসহ নানা কোম্পানির প্রাইভেট গাড়ির বহর। দেশের গরিব মানুষদের দিন চলা যতোই কষ্টকর হয়ে উঠছে, ততোই বেড়ে চলেছে ধনীদের চোখ ধাঁধানো বিলাসিতার জৌলুস। দেশে দরিদ্র বাড়ছে না কমছে, তার হিসাব করতে হবে এই বাস্তবতার চিত্র থেকে।
সমাজে আয় বৈষম্য পরিমাপের বহুল-ব্যবহূত একটি সূচক হলো ‘গিনি সহগ’ (gini coefficient)। এই সহগের মান শূন্য থেকে এক পর্যন্ত হতে পারে, তার বেশি বা কম হতে পারে না। এই সহগের মান বাড়ায় ঘটনা প্রমাণ করে যে, সমাজে বৈষম্য বেড়েছে। এই মান ০.৫ অতিক্রম করলেই বুঝতে হয় যে, বৈষম্য বিপজ্জনক অতি উচ্চ মাত্রায় পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে যেখানে ‘গিনি সহগ’ ছিল ০.২৮, ২০০৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ০.৪৭-এ। ২০১০ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা জরিপে এই সহগের মান ০.৪৬৫ বলে দেখা গেছে। অর্থাত্ সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবেও বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁঁছে গেছে।
১৯৭০-৭১ সালে পাকিস্তানে ছিল ২২টি কোটিপতি পরিবার। তাদের মধ্যে মাত্র ২টি পরিবার ছিল পূর্ব পাকিস্তানের আধিবাসী। ২০১১ সালের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ব্যাংকে রক্ষিত টাকার ভিত্তিতে দেশে কোটিপতির সংখ্যা এখন ২২,২৩২ জন। আসলে কিন্তু এদেশে কোটিপতির সংখ্যা আরো অনেক বেশি। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে, এদেশে প্রদর্শিত আয় (সাদা টাকা)-এর পরিমাণ, যা দেশে অপ্রদর্শিত আয় (কালো টাকা)-এর পরিমাণ তার ৪০ শতাংশের কম তো হবেই না, সেটা তার ৮৩ শতাংশেরও বেশি হতে পারে। ধারণা করা যায় যে, সব কালো টাকার মালিকদের যুক্ত করলে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ৫০ হাজারের কম হবে না।
মুষ্টিমেয় ব্যক্তি ও পরিবারের হাতে অবিশ্বাস্য পরিমাণ সহায়-সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটে চলেছে। তাদের প্রকৃত সংখ্যা ও সম্পদের পরিমাণ অজানা রয়ে গেছে। একদিকে কালো অর্থনীতির সবটাই তাদের হাতে। তাই তার বিবরণ অজানা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া দৃশ্যমান অর্থনীতির সিংহভাগও তাদেরই হাতে। সেটার কথা অবশ্য সব সময় গোপন রাখা তাদের পক্ষে কষ্টকর হয়। তথাপি হিসাবের এদিক-ওদিক করে নানাভাবে সেই তথ্যও আড়াল করার চেষ্টা করা হয়। অধিকাংশ গবেষকের অনুমান হচ্ছে দেশের সম্পদের প্রায় বারো আনাই আজ কেন্দ্রীভূত রয়েছে দেশের ১ শতাংশ ‘ভাগ্যবানদের’ হাতে।
অন্যদিকে, দেশে রয়েছে ৯৯ শতাংশ ‘ভাগ্যাহত’ দারিদ্র্য ও নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের দল। সেই দরিদ্র মানুষের প্রকৃত সংখ্যাও কম করে দেখানোর প্রচেষ্টা চলে। সরকার ও বিশেষ কিছু সংস্থা সংখ্যাতত্ত্বের ব্যবহারে নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়ে এক ধরনের ভুল চিত্র হাজির করার চেষ্টা করে। পণ্ডিতদের মাঝে বহুল প্রচারিত একটি কথা হলো, ‘সত্য আড়াল করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো সংখ্যাতত্ত্ব।’ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, শিশুর মৃত্যুর হার, দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারীদের হার, চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের হার, মূল্যস্ফীতির হার ইত্যাদি কম করে দেখানো; আর প্রবৃদ্ধির হার, সাক্ষরতার হার, গড় প্রত্যাশিত আয়ু ইত্যাদি বেশি করে দেখানোর জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হয়। বিদেশে ও দেশের মানুষের মাঝে সরকারের মেকি সাফল্যের চিত্র তুলে ধরার জন্যই এই পথ অবলম্বন করা হয়।
২০০৫ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ বলে জানানো হয়েছিল। ২০১০ সালে খানা জরিপে দেখানো হয়েছে যে সেই হার এখন কমে ৩১.৫ শতাংশ হয়েছে। মারহাবা! কিন্তু এই তথ্য কি বিশ্বাসযোগ্য? পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের মোট জনসংখ্যা সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে সেটাকেই তো সে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারেনি। প্রায় ২ কোটি মানুষ গণনাকারীদের ফাঁকিবাজির শিকার হয়ে হিসেবের বাইরে রয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধারণা করাটা খুবই স্বাভাবিক যে, দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী মানুষের ক্ষেত্রে তেমনটাই আরো বেশি করে হয়েছে।
তাছাড়া দারিদ্র্যের হিসাব কিসের ভিত্তিতে করা হবে তা নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। দারিদ্র্যের সংজ্ঞায়ন এদিক-ওদিক করলেই তার হার উঠিয়ে-নামিয়ে দেখানো যায়। সংখ্যাতত্ত্বের এসব মারপ্যাঁচ এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দেশের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য গঠিত ‘প্যানেল অব ইকনমিস্টস’ সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তাদের সেই সন্দেহ নিরসনের কোনো ব্যবস্থা এখনো করা হয়নি।
বেসরকারি একটি গবেষণা সংস্থার হিসেবে দেখা গেছে যে, ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের মার্চ, অর্থাত্ এই ৩৯ মাসে দেশের প্রায় আড়াই লাখ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। সে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অভ্যন্তরীণ গবেষণার হিসেবে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৩ শতাংশ হয়েছে। কোন্ হিসাবকে তাহলে আমরা বিশ্বাস করবো? পরিসংখ্যান ব্যুরোর, নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের? নাকি নির্ভর করবো চারদিকে স্বচক্ষে যা দেখছি, পর্যবেক্ষণ করছি, অনুভব করছি—তার ওপর? নাকি এই সহজ বিবেচনার ওপর যে, বৈষম্য বাড়লে দারিদ্র্য বাড়তে বাধ্য। কারণ, দরিদ্র তো বৈষম্যেরই উপজাত!
[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি]
E-mail : selimcpb@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন