সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১২

আন্তঃনদী-সংযোগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

সিরাজুর রহমান

সভ্যতার আদি ধ্যানধারণা অনুপ্রাণিত হয়েছিল শান্তিপূর্ণ পারস্পরিক সহাবস'ানের স্বপ্ন থেকে। তুমি বেঁচে থাকো, আমাকেও বাঁচতে দাও- এটা সভ্য সমাজের খুঁটি। এর ব্যতিক্রম করা হলে অশান্তি ঘটে। আমাকে আক্রমণ করা হলে আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা আঘাত হানার অধিকার আমার থাকবে- এ বিশ্বাস সব সভ্য সমাজের আইনেও স্বীকৃত। দুর্ভাগ্যবশত মানবজাতি সব সময় সুসভ্য আচরণ করেনি, পরের অধিকারকে সম্মান করতে শেখেনি। তার পরিণতি কখনো মানবজাতির জন্য কল্যাণকর হয়নি। জ্ঞাত ইতিহাসের অজস্র হানাহানি আর যুদ্ধবিগ্রহ তারই পরিণতি।
অথচ মানবজাতি সাধারণভাবে শান্তিতে বেঁচে থাকতে চেয়েছে। মানবজাতিকে শান্তির পথে চলতে সাহায্য করার আশায় প্রথম মহাযুদ্ধের পর লিগ অব নেশনস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে সংস'া যথেষ্ট শক্তি সংগ্রহ করতে পারেনি। জাতিগুলো সংস'ার বিধিমালা মেনেও চলেনি। জার্মানি ও ইতালির ফ্যাসিস্ট শক্তি প্রথমে ইউরোপ ও পরে গোটা বিশ্বের ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করতে চেয়েছিল। একপর্যায়ে জাপানও এই উন্মাদ উচ্চাভিলাষে শরিক হয়। কয়েক কোটি লোক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মারা গিয়েছিল, মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা কয়েক যুগ পিছিয়ে গেছে সে যুদ্ধে। জাতিসঙ্ঘের পত্তন হয়েছে সব দেশ ও জাতির গ্রহণযোগ্য বিধিমালা প্রণয়ন করে যুদ্ধবিগ্রহের প্রয়োজনীয়তার অবসান করা এবং বিশ্বশান্তি নিরাপদ করার লক্ষ্যে।
‘পরস্য অপহরণ’- অন্যের যা আছে আমি নেব, অন্যের ভাগটা আমি ভোগ করব, এই প্রলুব্ধতা সর্বকালেই সভ্যতার প্রতি প্রধান হুমকি হয়ে রয়েছে। জাতিসঙ্ঘ সনদের মোটামুটি সাধারণ স্বীকৃতি-সমর্থনের কারণে পরের দেশ দখলের প্রবণতা হ্রাস পেলেও পরের সম্পদ অপহরণের স্পৃহা বরং বেড়েই চলেছে।
এ প্রবণতা সবচেয়ে লক্ষ্যমান নদীর পানির ব্যাপারে। নদীগুলো অনাদিকাল থেকে পাহাড়-পর্বত ও উচ্চভূমি থেকে বহু দেশ পেরিয়ে সমুদ্রে পড়ে। জনবসতি বৃদ্ধি ও প্রযুক্তির বিকাশের ফলে চাষবাসে সেচ এবং পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীর পানির ব্যবহার অভাবনীয় রকম বেড়ে গেছে। উজানের দেশগুলোর অত্যধিক চাহিদার কারণে ভাটির দেশ প্রায়ই তাদের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পানিও পাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বিগত তিন দশক থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন যে, ভবিষ্যতের বড় যুদ্ধগুলোর কারণ হবে নদীর পানির হিস্যা নিয়ে বিরোধ।
জাতিসঙ্ঘ এ দিকেও মনোযোগ দিয়েছে। একাধিক দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদনদী সম্বন্ধে জাতিসঙ্ঘ কনভেনশনের (চুক্তি) পঞ্চম ধারাটি ১৯৯৭ সালের ২১ মে ১০৪-৩ ভোটে গৃহীত হয়েছে। এতে নদীর পানিসম্পদের সুষম ব্যবহার তীরবর্তী দেশগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কনভেনশনের ৭ নম্বর ধারায় নদীতীরবর্তী অন্য দেশগুলোর ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষতি না করার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস'া নেয়া’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নদীর পানি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান স্বার্থের সঙ্ঘাতকে জাতিসঙ্ঘ কনভেনশনের পঞ্চম ও সপ্তম ধারার আলোকে বিবেচনা করতে হবে। ভারত দ্রুত উন্নয়নমুখী দেশ। কৃষির জন্য সেচ, কলকারখানার প্রয়োজন আর পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভারত অভিন্ন নদীগুলোতে অবিরাম বাঁধ নির্মাণ করে চলেছে। অভিন্ন নদীগুলোতে ভারত এযাবৎ ৫০টিরও বেশি বাঁধ তৈরি করেছে। মাত্র গত সপ্তাহে বৃহত্তর সিলেটের ভেতর দিয়ে প্রবহমান সারি নদীর উজানে নতুন তৈরী পানি-বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের (সরকারের নয়) প্রবল প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতির ওপর ভারতের এসব প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া হবে অভাবনীয়। বাংলাদেশ সীমান্তের উজানে গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব বিবেচনা করলেই দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া পরিষ্কার হয়ে যাবে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ষাটের দশক থেকে সাবেক পাকিস্তানের সরকার প্রবল প্রতিবাদ করে আসছিল। সে কারণে বাঁধটি তৈরি হলেও চালু হতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ১৪ দিনের জন্য ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ ফারাক্কা বাঁধ চালু করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রস্তাবে সম্মত হন। কিন' সে ১৪ দিন এখন চিরস'ায়ী হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার সাথে ফারাক্কায় গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি করেন। চুক্তিতে সি'র হয়েছিল যে, খরার মওসুমে বাংলাদেশকে ৩০ হাজার কিউসেক (বাংলাদেশের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম) পানি দেয়া হবে। কিন' সে পরিমাণ পানিও বাংলাদেশ কোনো বছরই পায়নি।


শুকনো পদ্মা আর রবীন্দ্রনাথের কবিতা
পরিণতিতে গঙ্গার বাংলাদেশ অংশ পদ্মার বেশির ভাগ শুকনো মওসুমে স্রোত থাকে না। পলি জমে জমে নদীর তলা উঁচু হয়ে শুকিয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন : ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে/পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি/ দুই ধার উঁচু তার/ ঢালু তার পাড়ি।’ পদ্মা ছোট নদী নয়। প্রমত্তা পদ্মাকে নিয়ে বহু কবিতা, গান ও কাহিনী লেখা হয়েছে। কিন' এখন পদ্মায় সব সময় ‘হাঁটুজলও’ থাকে না। মানুষ, গরু আর গাড়ি অনায়াসে এ নদী পার হয়। পানির অভাবে পঞ্চাশ আর ষাটের দশকে জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে তৈরী গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প অকেজো হয়ে গেছে। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল শুকনো মওসুমে মরুভূমির মতোই উষর। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের নদী মোহনাগুলো পলি জমে জমে উঁচু হয়ে গেছে। জোয়ারে আর সামুদ্রিক বানে বঙ্গোপসাগরের নোনা পানি নদীর উজানে এলে আর নামতে পারে না। লবণাক্ততার কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার একর উর্বর জমি অনাবাদি হয়ে যাচ্ছে।
বর্ষায় ভারতীয়রা তাদের বাঁধ রক্ষার জন্য স্লুইস গেটগুলো খুলে দেয়। বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টি আর স্‌্েরাতের সাথে এই বাড়তি পানি যুক্ত হয়ে ধেয়ে আসে পদ্মা, মেঘনা প্রভৃতি বাংলাদেশের নদীগুলোতে। শুকিয়ে যাওয়া নদীতল সে পানি ধরে রাখতে পারে না। নদীর পার ভাঙে, হাজার হাজার একর উর্বর জমি হারিয়ে যায়। নদীর দুই তীর বন্যায় ডুবে যায়। নদীতল ক্রমেই উঁচু হচ্ছে বলে প্রতি বর্ষায় বন্যা বেশি থেকে আরো বেশি এলাকা ডুবিয়ে দিচ্ছে, সে পানি নেমে যেতেও বেশি থেকে বেশি সময় লাগছে। বন্যায় বার্ষিক ফসল হানি অপরিমেয়। অর্থাৎ ভারতের তৈরী বাঁধগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য শাকের করাত, যেতেও কাটে, আসতেও কাটে। খরা ও বর্ষা- উভয় মওসুমেই বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
এই হচ্ছে একটি নদী-পদ্ধতির মর্মান্তিক দুর্দশা। তিস্তা-পদ্ধতির অবস'াও এখন সমানেই মর্মান্তিক। টিপাইমুখ বাঁধ চালু হলে সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা অঞ্চলও একই রকম ঊষর হয়ে যাবে। শুধু যে ইলিশ মাছ আর আসবে না বাংলাদেশে তাই নয়, বাংলাদেশের পূর্বাংশের পরিবেশ প্রাণী উদ্ভিদ সব কিছু বদলে যাবে।
অর্থাৎ নদীর পানিসম্পদের ‘সুষম ব্যবহার’ করার জন্য জাতিসঙ্ঘ কনভেনশনের পঞ্চম ধারার এবং ‘অন্য দেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি না করার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস'া নেয়ার’ যে বিধান সে কনভেনশনের সপ্তম ধারায় আছে ভারত ইতোমধ্যেই তা অমান্য করে চলেছে। তার ওপর ১৯৮২ সালে ভারত একটা ‘মেগা প্রকল্প’ তৈরি করেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের নদীগুলোকে একটি খাল দিয়ে সংযুক্ত করে সেসব নদীর পানি মধ্য ভারতের ঊষর অঞ্চলে সেচের জন্য নিয়ে যেতে। ভারতের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর মানুষ এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এত বছর পর সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহে সে মামলার চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন। রায়ে মেগা প্রকল্পকে বৈধ ঘোষণা করে পরিবেশ-সংক্রান্ত সব ভারতীয় আপত্তি বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতেই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভারতের আইন ও ভারতের স্বার্থ বিবেচনা করে রায় দিয়েছেন। কিন' সে রায়ে যে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসঙ্ঘ কনভেনশনের পঞ্চম ও সপ্তম ধারার বিরোধিতা করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট সেটা অগ্রাহ্য করেছেন। মেগা প্রকল্পটি নির্মাণ শুরু হলে সেটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণারই শামিল হবে।


ভারত যে কারণে সাহস পায়
কথা হচ্ছে বাংলাদেশ কি বেঁচে থাকতে চায়? এবং বেঁচে থাকতে হলে বাংলাদেশীদের কী করতে হবে? সাদা চোখেই আমরা দেখতে পাচ্ছি- স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই দেশের জীবন-মরণের এ প্রশ্নটি নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি। স্বাধীনতার সময় থেকেই নাগরিকদের একাংশ সুশীলসমাজের ছত্রছায়ায় এবং ভারতীয় দালালদের সহায়তায় বাংলাদেশকে আবারো ভারতের সাথে সংযুক্ত করার প্রস'তি হিসেবে ‘বাঙালি জাতীয়তার’ ধ্বনি তুলেছে। ‘ওপারের বাঙালিরা’ আমাদের যতই পদাঘাত করুক ‘বাঙালি জাতীয়তার’ পূজারীরা সেসব অগ্রাহ্য করে দাদা-দিদিদের পদলেহন করে চলেছে। বাংলাদেশের স্বার্থ সম্যক উপলব্ধি করার সময় ও সুযোগ দেশের মানুষ পায়নি।
অপেক্ষাকৃত সামপ্রতিককালে বড় দল দুটোর একটা বাকশালী স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে এনে গদি চিরস'ায়ী করার উন্মাদ স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। সে লক্ষ্যে তাদের সর্বশক্তি নিয়োজিত হয়েছে এক দিকে সব প্রকারের গণতান্ত্রিক বিরোধিতাকে নির্মূল করা, অন্য দিকে পাশের বড় দেশের অনুগ্রহ লাভের যথাসাধ্য চেষ্টা করা। রাজনৈতিক বিরোধীদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে। দাড়ি ও টুপি পরিহিত কোনো লোক রাজনীতির কথা বললেই তাকে যুদ্ধাপরাধী বলে জেলে পোরা হয়, ঐক্য-সংহতি বলে যে একটা কথা অভিধানে আছে, আজকের বাংলাদেশে এলে সেটা মনে হয় না।
ভারতের অনুগ্রহ লাভের জন্য এমন কিছু নেই, যেটা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার করছে না। আমাদের পররাষ্ট্র-স্বরাষ্ট্র সব নীতি ভারতের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। বিদেশী উসকানি ও সহযোগিতায় বিডিআরে বিদ্রোহ ঘটিয়ে ৫৭ জন উচ্চপদস' সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে, বিডিআরকে অবলুপ্ত করা হয়েছে, এমনকি সেনাবাহিনীর অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিএসএফ এখন খেয়ালখুশিমতো বাংলাদেশীদের হত্যা করছে, বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে আমাদের নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের কৃষকদের ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের রেল, সড়ক ও সমুদ্রবন্দরগুলো ভারতের করিডোর ও বহির্বাণিজ্যের জন্য বিনামূল্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আর ভৌগোলিক এলাকা যেন এখন ভারতের খেলার সামগ্রী। তারা আমাদের নদী-উপনদী আর খালে বাঁধ নির্মাণ করে ১৩৪ চাকার ট্রাক ও ট্রেইলার চালায়। টিপাইমুখে ভারতের বাঁধ তৈরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সাহস বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের নেই।
ভারতের সংযোগ খালটি তৈরি হলে নদীর পানির প্রাপ্যতা আর পরিবেশের ওপর কুপ্রভাবের ভয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগরিকরাই উদ্বিগ্ন। সে জন্যই তারা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল। বাংলাদেশের আশু কর্তব্য জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা, কেননা; আগেই বলেছি, এ রায় জাতিসঙ্ঘের নদীর পানিসংক্রান্ত কনভেনশনের পঞ্চম ও সপ্তম ধারার বিরোধী। কিন' শেখ হাসিনার সরকার সে আপিল করবে কি? মোটেই মনে হয় না। কেন না শেখ হাসিনা আশা করছেন, ভারতের ‘বস্তা বস্তা টাকা আর পরামর্শেই’ তিনি গদি আঁকড়ে থাকতে পারবেন।
প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য
জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সাহায্য চাওয়ার জন্য দুর্ভাগ্যবশত আমাদের পরবর্তী সরকার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দুর্ভাগ্য এ জন্য বলছি যে, ভারতীয়রা সংযোগ খালটি তৈরি করে ‘ফেইট একম্পলি’ (প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা সৃষ্টি) করে ফেললে সেটার পরিবর্তন সব সময়ই কঠিন হয়। কিন' আমাদের বা নাগরিকদেরও অনেক কিছু করণীয় আছে। সরকার নীরব থাকলেও সব গণতান্ত্রিক শক্তি ও বুদ্ধিজীবীদের উচিত ভারতকে এবং বিশ্বসংস'া ও বিশ্বসমাজকে জানিয়ে দেয়া যে, ভারতের পানি আগ্রাসনের দরুন বাংলাদেশের যে পরিমাণ ভূমি চাষাবাদ ও মনুষ্য বসতির অযোগ্য হয়েছে, সে পরিমাণ ভূমি বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে দাবি করবে।
সরকার যখন নিষ্ক্রিয় তখন দেশকে বাঁচানোর, দেশের ভবিষ্যৎকে বাঁচানোর দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিককে হাতে তুলে নিতে হবে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের একখানি ট্রেন, একটি ট্রাক কিংবা একখানি জাহাজও যাতে যেতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা প্রত্যেকটি নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য হবে। আর এক বোতল ফেনসিডিলও যাতে বাংলাদেশে না আসে সে দিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। বাংলাদেশে আজকাল চমৎকার শাড়ি ও জামাকাপড় তৈরি হয়। তার পরও ভারতীয় শাড়ি পরার বিলাসিতা বর্তমান অবস'ায় গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতীয় শাড়ি-কাপড় বর্জন করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী নারীর কর্তব্য হবে। কোনো নারীকে ভারতীয় শাড়ি পরতে দেখা গেলে তাকে সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে।
ইতোমধ্যে অবৈধভাবে যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে বাস করছেন, চাকরি করছেন, পেছনে থেকে আওয়ামী লীগ গুণ্ডাদের উসকানি দিচ্ছেন, এমনকি ভোটও দিচ্ছে আওয়ামী লীগকে, ‘সিটিজেন্স অ্যারেস্ট’ বিধির আওতায় তাদের সবাইকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। আর ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ কথা এর পরেও যারা উচ্চারণ করবে, তাদের ধরে জিজ্ঞেস করতে হবে- শেখ হাসিনা ও দীপুমণির বন্ধু মমতা ব্যানার্জি বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেন কি না, করলে তিনি কেন শুধু সর্বনাশা বর্ষাকালেই বাংলাদেশকে নদীর পানি দেবেন, তিনি কেন বাংলাদেশের পাওনা জমি বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেবেন না? তাতেও যদি কারো চৈতন্যের উদয় না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, তিনি বাংলাদেশকে বিলুপ্ত করে আবারো অখণ্ড ভারত গড়তে চান। তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেয়া সবার অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে।
লন্ডন, ০৫.০৩.১২
serajurrahman@btinternet.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন