শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১২

সাইড নিতেই হবে



সৈয়দ আবুল মকসুদ | 
ফরাসি অস্তিত্ববাদী দার্শনিক জাঁ-পল সার্ত্রে ১৯৮০-তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এক মধ্যরাতে। রাত দেড়টার দিকে। নানা রকম শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ছিলেন অনেক দিন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ যখন সংবাদপত্রের অফিসে আসে তখন পত্রিকার শুধু মেকআপ শেষ নয়, ছাপার কাজ চলছিল। সঙ্গে সঙ্গে প্রথম ও শেষ পাতা নতুন করে মেকআপ করার ব্যবস্থা করা হয়। কালো বর্ডার দেওয়া সব কাগজের প্রথম ও শেষ পাতায় ছিল সার্ত্রের শেষযাত্রার খবর। অন্য কোনো সংবাদ নয়। পরদিন সকালে প্যারিসে কাগজ বের হয় দেরিতে। 
দেরি হওয়ার কারণ এলিসি প্রাসাদের শোকবার্তার জন্য কাগজগুলো অপেক্ষা করছিলেন। প্রেসিডেন্ট ভালেরি জিসকার্ড দ্যে’স্তার শোকবার্তা আসে দেরিতে। বিলম্বের কারণ তিনি ভাবছিলেন শোকবার্তায় কী লিখবেন। প্রথাগত শোকবাণী চলবে না। এসব ক্ষেত্রে অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের কোনো সমস্যা হয় না। তাঁরা ঘুমিয়ে থাকেন। তাঁদের উপ বা সহকারী প্রেসকর্মকর্তা শোকবার্তা মিডিয়াকে দিয়ে দেন: তাঁর মৃত্যুতে আমাদের সাহিত্যের যে ক্ষতি হলো তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। আমি তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। 
কাঁচা ঘুম থেকে জেগে প্রেসিডেন্ট দ্যে’স্তা কিছুক্ষণ ভাবেন। তাঁর সহকারীকে ডিকটেশান দিতে গিয়ে বলেন, ‘যা বলি লেখো। আজকের শোকবার্তায় কোনো রকম পণ্ডিতি ফলাইতে যেয়ো না।’ তিনি সেদিন বলেছিলেন: ‘সারা জীবন প্রতিষ্ঠান ও প্রথাবিরোধী ছিলেন এই মহান দার্শনিক। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি তাঁর মৃত্যুতে শোকবাণী দিলে তাঁর নীতি-আদর্শের প্রতি অসম্মান জানানো হবে। এসব আনুষ্ঠানিক সম্মান তিনি কোনো দিন পছন্দ করেননি। তাঁর মৃত্যুতে আমি শোক প্রকাশ করতে পারি শুধু তাঁর একজন ছাত্র ও পাঠক হিসেবে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শোকবার্তা দেওয়া হবে ঔদ্ধত্যের শামিল।’ দীর্ঘ শোকবার্তার শেষে গিয়ে তিনি বলেন, সার্ত্রে নিরপেক্ষ ছিলেন না, সব সময়ই একটি সাইড (side) বা পক্ষ নিতেন।
সার্ত্রের মতো মানুষেরা কেন পক্ষ নিতেন এবং কার পক্ষই বা নিতেন? জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এবং আন্তরাষ্ট্রীয় প্রশ্নে তিনি সাবলীলভাবেই একটি পক্ষ অবলম্বন করতেন। যখন দেখতেন তাঁর নিজের রাষ্ট্র অথবা অন্য কোনো রাষ্ট্র অন্যায় করছে—তিনি একটির পক্ষ নিতেন। অন্যায়কারী নিজের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও দ্বিধা করেননি। প্রবলকে দুর্বলের ওপর অবিচার করতে দেখলে প্রবলের বিরোধিতা করেছেন সব শক্তি দিয়ে। মাওবাদী পত্রিকা বিক্রির ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তিনি সেই কাগজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করেছেন। 
ফ্রান্স একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। শত শত বছর ধরে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ শাসন ও লুণ্ঠন করেছে। সেসব দেশের সম্পদ এনে গড়ে তুলেছে এক সমৃদ্ধ ও সুন্দর ফরাসি দেশ। একসময় ওই সব পদানত দেশের মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার স্পৃহা জাগে। তৎক্ষণাৎ ফরাসি সরকার তাদের দমন করতে চালায় পাশবিক নির্যাতন। রাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে, নিজের দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সার্ত্রে ও তাঁর মতো আরও অনেক লেখক-বুদ্ধিজীবী আলজেরিয়া, মরক্কো প্রভৃতি দেশের স্বাধীনতাকামীদের সমর্থন দিয়েছেন। সে সমর্থন গোলটেবিলের টেবিল চাপড়ে নয়, অতি সক্রিয়ভাবে ও ঝুঁকি নিয়ে। 
ইঙ্গ-ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যখন ভিয়েতনামের মুক্তিকামীদের ওপর বছরের পর বছর ধরে চালাতে থাকে বর্বরতা ও গণহত্যা, তার প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন সার্ত্রে ও তাঁর বন্ধুরা। যুদ্ধাপরাধী মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিচারের জন্য গঠন করেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। স্টকহোমের সেই আদালতের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তাঁর কার্যকলাপে ফরাসি সরকার বিব্রত হয়েছে, কিন্তু তাঁকে অগ্রাহ্য ও অপমান করেনি। 
সব যুগে সব দেশে ভলতেয়ার, সার্ত্রেরা থাকেন না। কিন্তু সব কালে সব দেশেই বিবেকবান নাগরিকেরা তাঁদের অভাব কিছু পূরণ করেন। অন্যায়-অবিচার দেখলে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁরা প্রতিকার চান। প্রতিবাদ করেন। সরকার যেহেতু মানুষেরাই চালান, সুতরাং যেকোনো সরকারেরই ভুল হতে পারে। ভুল ধরিয়ে দিলে তা সংশোধন করা সম্ভব। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চাইলে, ভুল ধরিয়ে দিতে গেলে, একটা সাইড নিতেই হয়। এক পক্ষকে সমর্থন দিলে আরেক পক্ষের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি নিতেই হবে। 
বাংলাদেশ একটি জনবহুল ছোট রাষ্ট্র। অন্তহীন তার মানুষের সমস্যা, অশেষ তার জনগণের দাবি। সেসব সমাধান করা ও পূরণ করা যেকোনো দক্ষ সরকারের পক্ষেও কঠিন। কিন্তু সমাধান করার সামর্থ্য ও সদিচ্ছা আছে কি না সেটাই বিবেচ্য।
বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য তারা জনপ্রিয় নেতা পেয়েছে। কিন্তু একটি আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দক্ষতাসম্পন্ন প্রশাসক ও রাষ্ট্রনায়ক পায়নি। নেতা হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এক কথা, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও দূরদৃষ্টি থাকা আরেক কথা। উনিশ শতকের শেষ ও কুড়ি শতকের প্রথম দিকে বাঙালি হিন্দুসমাজে অত্যন্ত উঁচু মানের শিক্ষিত ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন মানুষ ছিলেন অসংখ্য। তাঁদের কেউ কেউ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে রাজনীতিতে আসেন। স্বাধীনতার পরে দেশ গঠনের দায়িত্ব পড়ে তাঁদের হাতে। ফলে ভারতে একটি মজবুত গণতান্ত্রিক ও সামাজিক ভিত্তি তৈরি হয়। ওই নেতৃত্ব বহু ত্যাগ স্বীকার করে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিটিও শক্তভাবে গড়ে তোলেন। তারই ফল আজকের সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভারত।
পাকিস্তানে সেটা হতে পারেনি। দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন উচ্চ ও মধ্য শ্রেণীর হিন্দুরা ভারতে চলে যান। তাঁদের জায়গা দখল করে অযোগ্য-অদক্ষ অল্প শিক্ষিত মুসলমান। গণতন্ত্র কী জিনিস তা তাঁরা জানতেন না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাঙালির মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক চেতনার জন্ম হয়। ওই গণতান্ত্রিক চেতনার থেকেই বাংলাদেশের জন্ম। কিন্তু অগণতান্ত্রিক পাকিস্তানের পেট থেকেই যেহেতু বাংলাদেশের জন্ম, সেহেতু বাংলাদেশেরও কোনো গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য নেই। স্বৈরশাসনের প্রতিই বাংলাদেশের নেতাদের ঝোঁক। তাঁরা নির্বাচনকেই মনে করেন গণতন্ত্র। নির্বাচন তো গণতন্ত্রের দুটি পা মাত্র। পায়ে হাঁটতে গেলে দরকার গোটা শরীরটার—একেবারে মাথা পর্যন্ত। আমরা গণতন্ত্রের পা দুটি পেয়েছি, কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত নেই। তা না থাকা মানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের লেশমাত্র নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা যে পার্লামেন্ট পেয়েছি, তা একটি সুসজ্জিত সম্মেলনকক্ষ মাত্র। তাতে প্রাণ নেই, তার চেতনা নেই। আমাদের গণতন্ত্রের যদি চেতনা থাকত, পার্লামেন্টের প্রাণ থাকত, তাহলে দেশের মানুষের যে সমস্যা তা নিয়ে সেখানে কথা হতো। দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা হতো। প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও সাংসদেরা বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের টাকায় বিদেশ সফর করেন। সেখানে গিয়ে দেশের মানুষের জন্য কী করেন তা সংসদে আলোচনা হয় না। তা যদি হতো তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রধানন্ত্রীর কী কথাবার্তা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কী চুক্তি ইত্যাদি হয়েছে, অন্যান্য দেশ ও বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের কী চুক্তি হয়েছে তা সংসদে উপস্থাপন করা হতো। তা নিয়ে আলোচনা হতো।
সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধী দল সংসদে যায় না, সংসদ প্রাণবন্ত হবে কী করে? বিরোধী দলের সব সদস্য যদি প্রতিদিন সংসদে যান, তাহলে তাঁদের সংখ্যা ৩৫-এর বেশি হবে না। কিন্তু আমরা দেখছি, সরকারি দলের অন্তত ১০৫ জন সদস্য প্রতিদিন অনুপস্থিত থাকেন। অর্থাৎ আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে সংসদে যোগদান গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশের স্বার্থে কথা বলার সাহস যদি না থাকে, তাহলে সংসদে গিয়েই বা কী করবেন?
টিপাইমুখ নিয়ে বিরোধী দলের নেত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন। বেশ করেছেন। তবে আরও ভালো হতো পথেঘাটে তা নিয়ে পলিটিকস না করে সংসদে গিয়ে তাঁর দলের অবস্থান তুলে ধরলে। ক্ষমতাসীন জোটের আরেক বড় শরিক জাতীয় পার্টির নেতা সংসদে গিয়ে আলোচনা না করে বাইরে ঘোষণা দিয়েছেন, ভারত যদি টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করে, তাহলে তিনি জীবন দেবেন—যেমন জীবন দিয়েছিলেন গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেন, ডা. মিলনসহ শত শত যুবক। জনগণ এখন আশা করতে পারে, এরশাদ সাহেবকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও বাঁধ নির্মাণ স্থগিত রাখবে ভারত। 
জনগণ বেআক্কেল নয়। তারা একটি জিনিস বুঝতে পেরেছে, শুধু আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নয়, মহাজোটের অন্য শরিকেরাও এমন কোনো অদৃশ্য বন্ধনে আটকে গেছেন যে তাঁরা কোনো ব্যাপারেই ভারতের সঙ্গে আর মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারবেন না। কোনো কোনো বিরোধী দল, উগ্র মুসলিম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ভারতকে যেকোনো ব্যাপারে সমালোচনা করে আত্মতুষ্টি লাভ করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের যেকোনো কাজকে সমর্থন দেওয়ার মতো সংগঠন গত ১০ বছরে বহু সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। টিপাইমুখে বাঁধের কারণে ক্ষতি হলে তা হবে বাংলাদেশের মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, বাঙালি, আদিবাসী সবার। শুধু মুসলমানদের নয়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ভারতসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যাপারে কোনো কথা বলে না। কিন্তু সেক্টর কমান্ডারদের নীরবতা বেদনাদায়ক। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়, আজ তাঁরা শুধু একটি এজেন্ডা নিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান। সংগত কারণে বন্ধুর কোনো ভুলের সমালোচনা করলে বন্ধুত্ব নষ্ট হবে কেন? তা যদি হয় তাহলে সে বন্ু্লত্ব মূল্যহীন। 
জাঁ-পল সার্ত্রে, মার্টিন হাইডেগার প্রমুখ দার্শনিকের অস্তিত্ববাদী দর্শনের একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় ফিয়ার বা ভয়। আজ আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব যখন সংকটের মুখে, আমাদের ভবিষ্যৎ যখন অনিশ্চিত, তখন আমাদের অধিপতি শ্রেণীর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক গভীর ভয়। ডান-বাম রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, লেখক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী প্রভৃতি শ্রেণীর মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে যে টিপাইমুখ, তিস্তার পানি নিয়ে কথা বললে তাঁরা ভারতের নেমন্তন্ন পাবেন না। করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ যাওয়া বন্ধ হয়েছে ৪০ বছর আগে। এখন কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই যাওয়া বন্ধ হলে সব দরজাই বন্ধ হলো। 
বন্ধুত্ব হয় বুকে বুক মিলিয়ে, হাত ধরাধরি করে—হাত কচলে নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাপারে সমস্যা, মতানৈক্য, বিরোধ দেখা দিতেই পারে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে নদীর পানি বণ্টন নিয়ে প্রবল বিরোধ রয়েছে। সদিচ্ছা থাকলে বসে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। গোঁজামিল দিয়ে কিছুই হয় না। সমস্যা জিইয়ে রাখা হয় এবং বাড়ে। 
একটি বাঁধ নিয়ে, নদীর পানি বণ্টন নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে হাজার হাজার বছরের সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন? বন্ধুকেই বন্ধু সমালোচনা করবে, শত্রুর করতে হয় ক্ষতি। যেকোনো কারণেই হোক, ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার সাবলীলভাবে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। তাদের সাহস জোগাতে পারেন শুধু নাগরিক সমাজের নেতারা এবং বাংলাদেশের জনগণ। টিপাইমুখ নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত সরকার। আলোচনা দুরকম হয়। একটি তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি দিয়ে জোরের সঙ্গে, আরেকটি তোতলাতে-তোতলাতে। বিষয়টি রাজনৈতিক, সুতরাং রাজনৈতিক নেতারাই নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু প্রতিনিধিদলে দক্ষ কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের সাহসী মানুষ না থাকলে দিল্লিতে গিয়ে কনট প্লেসে কেনাকাটাই হবে, কাজের কাজ কিছু হবে না। ৪০ বছরে আমরা দক্ষ কর্মকর্তা তৈরি করতে পারিনি। দলীয় ক্যাডার দিয়ে ক্যাডারের কাজ হয়, জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা হয় না। 
নাগরিক সমাজের অবস্থাও আজ শোচনীয়। যথাসময় ঠিক দিকে সাইড নিতে না পারায় আজ দেশের এই বিপর্যয়কর অবস্থা। সরকারের দিক থেকে যত কথাই বলা হোক, দেশে কী হচ্ছে তা জনগণই ভালো জানে। ভবিষ্যতে কী কী হতে যাচ্ছে, তা জনগণ কিছুটা আঁচ করতে পারে। যে ছেলেটি ক্ষুধা নিয়ে সারা দিন কাগজ কুড়ায়, রাতে রাস্তায় ঘুমায় তার কাছে কিছু আশা করা অন্যায়। কিন্তু যারা রাষ্ট্রের যাবতীয় আনুকূল্য পেয়ে ধন্য তাদের দায়িত্ব রয়েছে। যাদের দ্বারাই দেশের ক্ষতি হবে, জনগণের ভবিষ্যৎ বিবর্ণ হবে, তাদের ক্ষমা নেই। সরকারকে অকল্যাণকর কাজ করা থেকে বিরত করতে না পারলে, জনগণের সাইড না নিলে, নাগরিক সমাজের নেতাদেরও দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন