মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১২

দমননীতি নয় রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োজন


  ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ  |  বুধবার, ২৮ নভেম্বর ২০১২



বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সামপ্রতিক সময়ে জামায়েতি ইসলামী ও এর সহযোগী সংগঠনের সহিংস হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ সময়ে জামায়াত, ছাত্র শিবিরের তত্পরতায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং দেশজুড়ে পুলিশের ওপর হামলে পড়া নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে পরে না। এর একটি জঙ্গি রূপ রয়েছে। বর্তমানে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। আসামিদের অধিকাংশই জামায়েতি ইসলামির নেতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করা বাংলাদেশের মানুষ কারো সঙ্গে জামায়াতে ইসলামির সংশ্লিষ্টতা কামনা করে না। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধায় দলটির ভেতরেও এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। ইত্যকার বাস্তব অবস্থার কারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রস্তাব তেমন আগ্রহ জাগায়নি মানুষের মধ্যে।
রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতেই মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রস্তাবটি গ্রহণ করেননি। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, আলোচনা নয় অপতত্পরতায় লিপ্ত জামায়াত ও তার অনুগামীদের দমন করা হবে। আইন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে জামায়াত শিবির সেখানেই প্রতিহত করা হবে। আরেক মন্ত্রী রাজপথে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করতে যুব ও ছাত্রলীগের কর্মীদের আহবান জানিয়েছেন। গত ২৫ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব জানান, ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জনসভা থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। প্রতিক্রিয়ায় দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে জানান।
অর্থাত্ কোনো গণতান্ত্রিক পন্থা নয়—সরকার একধরনের দমননীতি আরোপের কথা বলতে চাচ্ছে। তবে কার্যত তেমন দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির কর্মীদের প্রকাশ্য বা চোরাগোপ্তা মিছিল থেকে পরিকল্পনা মাফিক প্রধানত পুলিশের ওপর ঝাপিয়ে পড়ছে। অনেক স্থানেই পুলিশ সদস্যরা আহত হচ্ছেন। গাড়ি প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে। তারপরও পুলিশ বেপোরোয়া হচ্ছে না। দমনের বদলে আত্মরক্ষায় ব্যস্ত থাকছে।
এ অবস্থায় জনমনে তৈরি হচ্ছে মিশ্র ধারণা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দমন করার ঘোষণার সাথে বাস্তবতা মিলছে না। হামলাকারীরা যেন আরো বেশি দুর্দমনীয় হয়ে উঠছে। কেউ কেউ মনে করছে, সরকার আর পুলিশ বাহিনী সতর্কতার সাথে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। হয়তো এ ধরনের সন্ত্রাসী তত্পরতার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশি এ্যাকশন আশা করছে জামায়াতি পরিকল্পনাকারীগণ। সংঘাতে পুলিশের গুলিতে দু/চারটে লাশ পরে গেলে একে পুঁজি করে একটি বড় অরাজকতা তৈরি করবে জামায়াত। সে সুযোগ না দিয়ে বরঞ্চ পিঠ পেতে দিচ্ছে পুলিশ।
কিন্তু এতে আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। কোনো কোনো সমালোচনায় বলা হচ্ছে, পুলিশ বাহিনীতে অনেক জামায়েতি সমর্থক আছেন। তাদের তত্পরতার কারণে পুলিশ অনেকটা নিষ্ক্রিয়। আমাদের মনে হয়, এধরনের সমালোচনা অনেক বেশি সরলীকরণকৃত। আবার জঙ্গি আক্রমণকারীদের কৌশলের কাছে পুলিশের পরাস্ত হওয়ার কথাও কোনো কোনো সমলোচনায় বলা হচ্ছে। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিচারে এসব ধারণা খুব স্বস্তি দায়ক নয়। প্রাসঙ্গিকভাবে জামায়াতসহ নানা ধর্মভিত্তিক দলকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও কোনো কোনো মহল থেকে উঠেছে।
আমাদের মনে হয় বর্তমান সংকট সামনে রেখে সরকারকে সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের দিকে হাঁটতে হবে। কোনো ধরনের একপেশে সিদ্ধান্ত হঠকারী হতে বাধ্য। মনে রাখতে হবে জমায়েতি ইসলামী একটি সুসংগঠিত দল। দলের নীতি আদর্শ আর প্রেক্ষাপট যাই থাক না কেন তারা তাদের আদর্শের পতাকা তলে একটি বড় সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করেছে। অনুসারীদের জামায়াত নেতারা মুক্তচিন্তা ও বিচারবুদ্ধির জায়গায় রাখেনি। এরা মগজ ধোলাইকৃত মনোজগতে বন্দি সত্তা। একারণে ঐক্যবদ্ধ শক্তি। অনেকেই ‘বাঁচলে গাজী মরলে শহীদে’র আফিম খেয়ে এখন বুঁদ। অমন শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যুব ও ছাত্রলীগ কর্মীরা মোটেও সমকক্ষ নয়। কারণ স্বাধীনতা-উত্তর কাল থেকেই আওয়ামী লীগ দলীয় আদর্শে নিজ দলকে সুসংগঠিত রাখতে পারেনি। নব্বইয়ের পর থেকে স্খলন অনেক বেশি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬-এ সরকার গঠন করলেও তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পারিবারিক বলয় ও অর্থমূল্যে সাংসদ বানাতে গিয়ে ছিটকে ফেলা হয়েছে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের। তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বা যথাযোগ্য জায়গা দেয়া হয়নি। ফলে দলের ভেতর এক ধরনের হতাশা ছড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ এবং মনস্তাত্ত্বিক ভাঙ্গন চলতে থাকে কোনো আদর্শিক দলে।
অন্যদিকে যুব ও ছাত্রলীগের আদর্শিক জায়গাটিকে একেবারেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে যুব-ছাত্র দল ও এরশাদের ছাত্র সমাজের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে। দলের ভেতর কোনো পর্যায়েই গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় জবাবদিহিতার জায়গাটি আর অবশিষ্ট থাকেনি। তাই আওয়ামী লীগের এই যুব ও তরুণ সংগঠনের নেতা-কর্মীর ভেতরে একটি সন্ত্রাসী মানসিকতা তৈরি হয়েছে। অর্থ আর অস্ত্র শক্তির বলয়ে বন্দি হয়ে যায় তারা। এ কারণে অমন বাস্তব দশায় ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীদের জামায়াত-শিবির দমনে মাঠে নামিয়ে কোনো কাজ হবে না। একজন শিবির জঙ্গিকে আওয়ামী লীগের কিনে নিতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। অন্যদিকে নষ্ট রাজনীতিতে পরাজিত যুব ও ছাত্রলীগের তরুণ সহজেই অন্যের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে। ফলে এই পন্থায় দমন পদক্ষেপ সরকারের অনুকূলে যাবে না।
আওয়ামী লীগের জন্য জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়া তারুণ্যকে অনেক আগেই নির্বাসন দিয়েছেন আওয়ামী নীতি নির্ধারকগণ। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার মত জাতীয় নেতৃত্ব কি এখন রাজনীতি সচেতন মানুষের আস্থায় রয়েছেন? সকল কিছুই যে আত্মীয়করণ বা বিশেষ কোটায় সম্পন্ন করা যায় না তা এ যুগের আওয়ামী নীতি নির্ধারকগণ বুঝতে চান না।
মুক্তিযুদ্ধের পর জামায়াতকে নির্বংশ করার একটি পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চালিকাশক্তিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ছিল মূল নীতির অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পন্ন মানুষের কাছে এই নীতির সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তাই স্বাধীনতার পর পর সুযোগ ছিল ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করার। এখন ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ বিএনপি সকলেরই আনুকূল্য পেয়েছে জামায়াত। আর বিএনপিতো নিজ শক্তির ভাগ দিয়ে নিজেকে অনেকটা নিঃশেষিত করেও জামায়াতকে শক্তিশালী করেছে। তাই এই বাস্তবতায় দল নিষিদ্ধ করে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও জনবল শক্তিতে জামায়াত এখন অগণ্য নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরিতে দলটি অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে। তাই এমন সংগঠন নিষিদ্ধ হলে এর আন্ডারগ্রাউন্ড শক্তি যে কতটা প্রবল হতে পারে তা ইতিহাস পাঠক মাত্রই জানেন। একারণে জামায়াত নিষিদ্ধ করার চিন্তা কোনো দূরদর্শী ভাবনা থেকে এসেছে বলে আমাদের মনে হয় না।
আমরা মনে করি, বর্তমান বাস্তবতা আমলে এনে রাজনৈতিক কৌশল দিয়ে জামায়াতকে প্রতিহত করতে হবে। দেশজুড়ে জামায়াত প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী তৈরি করতে পেরেছে ঠিকই কিন্তু জনগণের মধ্যে দলীয় সমর্থক বাড়াতে পারেনি। তাই একক নির্বাচনে দাঁড়ালে জামায়েতের অবস্থা কি হয় তা সকলেরই জানা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ঐতিহাসিকভাবেই অসামপ্রদায়িক চেতনা সমৃদ্ধ। তাই প্রায় ৬০০ বছর সুলতানি ও মোগল যুগে মুসলিম শাসন অতিবাহিত হওয়ার পরও রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে অসামপ্রদায়িক চেতনাই লালিত হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসন যুগে ইংরেজ শাসকরা তাদের ‘ভাগকর শাসনকর’ নীতি প্রয়োগ করে অসামপ্রদায়িক চেতনায় কিছুটা বিষবাষ্প ছড়াতে পারলেও তেমন দুষিত করতে পারেনি সাধারণ মানুষকে। তাই একটি আদর্শিক চেতনা থাকার পরও হাজী শরিয়ত উল্লাহ উনিশ শতকে তার ফরায়েজি আন্দোলনকে তেমন জনপ্রিয় করে তুলতে পারেননি।
আজ আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের জামায়াত প্রতিরোধ করতে হলে নিজেদের গড়া অচলায়তন ভেঙ্গে এই সাধারণ মানুষর কাছে ফিরে যেতে হবে। দলের ভেতর গণতন্ত্র চর্চা ও সততা ফিরিয়ে আনতে না পারলে এ কাজটি খুব সহজ হবে না। জামায়াত যে আরোপিত ইসলামের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে প্রকৃত ইসলামের সৌন্দর্য ও আদর্শের কথা ছড়িয়ে দিয়ে এদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। নিজেদের দলীয় গণ্ডির ভেতর আটকে রেখে এই জনমত তৈরি কঠিন। তাই দলীয় পরিচয়ের বাইরে থাকা মুক্তমনের মানুষদের মূল্য দিয়ে কাছে টানতে হবে। জনমত গঠনে তাদের সহযোগিতা নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের অপকীর্তি প্রামাণ্যভাবে তুলে ধরতে হবে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের ভূমিকা রাজনৈতিকভাবে কতটা ভ্রান্ত ছিল এবং ধর্মীয়ভাবে ইসলামের সাথে কতটা সাংঘর্ষিক সেই বিষয়টি সবধরনের ধোঁয়াশা কাটিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্পষ্ট করে তুলতে হবে।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে হবে। তবে অর্থ ও পেশি শক্তির মোহগ্রস্ত নেতা-কর্মী যাদের রক্তে দূষিত প্রবাহ রয়েছে তাদের নেতৃত্বে এ ধরনের মহতী কর্ম সম্পাদন কঠিন। অবশ্য তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগে সত্ ও নিবেদিত মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন নয় বলে আমাদের ধারেণা। যাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা রয়েছে তাদেরই নিয়ে আসতে হবে আলোতে। দল ও দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে ক্ষমতা ও অর্থপ্রিয় লোভী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে অপশক্তির মোকাবেলা সম্ভব নয়।
নিবন্ধন প্রাপ্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে না দেয়াটা প্রতিরোধের হাতিয়ার হতে পারে না। বরঞ্চ গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়িয়ে জঙ্গি আচরণ, অবৈধ অর্থ ও অস্ত্র শক্তির মূলোত্পাটনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জামায়াতকে শক্তিহীন করে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও জামায়াতের অমানবিক ও জঙ্গিরূপ উন্মোচন করে করে তুলতে হবে বন্ধুহীন। রাজনৈতিকভাবে মাঠে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনী ও প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে জামায়াতকে গণবিচ্ছিন্ন করে ফেলাটা খুব কঠিন নয়। আমরা বিশ্বাস করি, যৌক্তিক নীতি নির্ধারণ করে আওয়ামী লীগ অগ্রসর হতে পারলে বিএনপি নিজ স্বার্থেই পক্ষপুট থেকে জামায়াতকে বিসর্জন দেবে। বিএনপির ভেতর এই দাবি ক্রমে প্রবল হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের হতাশার কিছু নেই। তারা ভাবতে পারেন নির্বাচনের অল্প দিন বাকি এসব দীর্ঘ মেয়াদি কাজে কি ফল দেবে! বাহ্যিকভাবে কথাটি সত্য। কিন্তু তাই বলে বালুতে মুখ লুকিয়ে তো ঝড় এড়ানো যাবে না। মানুষ যদি বুঝতে পারে আওয়ামী লীগ আত্মশুদ্ধির পথে এগুচ্ছে এবং অন্যায় ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে তবেই গণআস্থায় ফিরতে পারবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটি। দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে আমরা আওয়ামী নেতৃত্বকে জরাগ্রস্ততা থেকে মুক্ত দেখতে চাই।
n লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
shahnawazju@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন