রেল কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভাকে কচিকাঁচার আসরের সাথে তুলনা করে লোক হাসিয়েছিলেন। সেটা ছিল এই সরকারের মধুচন্দ্রিমার সময়। তারপর বুড়িগঙ্গার পানি অনেক দূর গড়াল। অর্থবিত্ত নিয়ে দুর্নীতির পর দুর্নীতিতে সরকারের গলা পর্যন্ত ডুবল। এখনো অর্থমন্ত্রী বহাল। দায়হীন। একজন ব্যবসায়ী নেতার বক্তব্য, ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ নেই, বিনিয়োগ বন্ধÑ তার পরও অর্থমন্ত্রী শুধু হাসেন’। এ ধরনের বক্তব্যও অর্থমন্ত্রীকে বিব্রত করে না। উপস্থিত থেকে উপভোগ করেন। এ যেন মোটা চামড়ার আরেক উপমা।
এর আগে ‘বাফার স্টেট’ কাকে বলে না বোঝার কথা বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব কূটনৈতিক মহলে হাসির পাত্র হয়েছিলেন। সেটা অজ্ঞাত ভুল হিসেবে ক্ষমাযোগ্য; কিন্তু ঠাণ্ডামাথায় মিথ্যাচার কিভাবে ক্ষমাযোগ্য হতে পারে? তারপর একের পর এক মন্ত্রীরা ‘ফাউল টক’ করে যাচ্ছেন। ইউনূস ও অমর্ত্য সেন নিয়ে বয়োবৃদ্ধ অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্যের আগেও তিনি নানা ইস্যুতে উদ্ভট মন্তব্য করে জনরোষ বাড়িয়েছিলেন। এবার তিনি নিজেও স্বীকার করলেন অমর্ত্য সেনকে জড়িয়ে তিনি মিথ্যা বলেছেন। একজন মন্ত্রী মিথ্যা বলার স্বীকৃতি দেয়ার পর শপথের মধ্যে থাকেন কিভাবে সেই প্রশ্ন মৌলিক। আমরা জানি না প্রধানমন্ত্রী তার এসব মন্ত্রীকে নিয়ে কী করবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু নিজের নাক-কান কাটেননি। নিজের দলেরও কান কেটেছেন। আইন-আদালত, ন্যায়নীতি এবং দেশের সংবিধানেরও নাক-কান কেটেছেন। একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিভাবে দলীয় ক্যাডারদের আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার জন্য আহ্বান জানাতে পারেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এতটাই অশোভন ও অসংলগ্ন যে যুবলীগ নেতাকে ভিন্ন ভাষায় তার বক্তব্য খণ্ডন করে বক্তব্য দিতে হলো। সেই বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনিও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের লাঠিপেটার হুমকি দিলেন। এটা যেন গোলমরিচের ঝাল সামাল দিতে কাঁচামরিচের ভর্তা গেলানো। এ সরকারের মন্ত্রীরা হররোজ বিচারের আগে রায় দিয়ে দিচ্ছেন। রায় ঘোষণার আগে সাজা দিয়ে দিচ্ছেন। দেশটা যেন মগের মুল্লুক। জনগণ যেন রায়ত কিংবা প্রজা।
এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল আলম হানিফ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে দলের নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তাতে দল অভিযোগমুক্ত হতে পারে না। কারণ জনাব মুহিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তা ছাড়া হানিফ দলের না সরকারের মুখপাত্র, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়।
আমরা জানি না, মন্ত্রীরা এতটা লাগামহীন দিশেহারা হয়ে গেলেন কেন। এটা যদি ব্যক্তিগত অসুখ হয় তাহলে এক কথা। এর চিকিৎসা সহজ। যদি পুরো সরকারের রোগ হয় তাহলে ভিন্ন কথা। এই দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দরকার। আত্মস্বীকৃত মিথ্যাচার করে, আইন হাতে তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েও যদি কোনো মন্ত্রী শপথের মধ্যে থাকেন বলে ধারণা করা যায়, তাহলে জাতিকে সংবিধানের দ্বিতীয় পাঠ নিয়ে ভাবতে হবে।
নার্ভাস ও বেসামাল মন্ত্রীদের দিয়ে দেশ কোনোভাবেই লাভবান হবে না। সরকারও লাভবান হয়নি, বরং এরা দল ও সরকারের লায়াবিলিটিস হয়ে তরী ডুবাচ্ছেন। তার পরও জনগণ দেখতে চায় প্রধানমন্ত্রী তার প্রবীণ এসব মন্ত্রীকে নিয়ে বুড়োর আসর বসাবেন, না জনগণের আরো ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন। জনগণ এখন পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত, তবে সরকারকেও জনগণের পাওনা কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে। নয়তো গুণধর মন্ত্রীদের ভাগ্য বিপন্ন হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার হবে।
digantaeditorial@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন