মাহমুদুর রহমান মান্না
কিছু দিন ধরে জামায়াত-শিবিরের তৎপরতা বিশেষ করে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা
সারা দেশে বেশ আলোড়ন তুলেছে। বিষয়টি শুরু হয়েছে সম্প্রতি। এই প্রথম
জামায়াতে ইসলামী সরাসরি পুলিশের ওপর হামলা করে। এর পর উল্লেখযোগ্য ঘটনা
হচ্ছে রাজশাহীতে, যেখানে পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সেই রাইফেল
দিয়ে তারা পুলিশ সদস্যকে পিটিয়েছে। রাস্তার মধ্যে একজন পুলিশকে পড়ে থাকতে
দেখা গেছে, যে রকম সাধারণত আন্দোলনকারীরা পুলিশের হাতে মার খেয়ে পড়ে থাকে।
প্রথম যেদিন পত্রিকায় পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার খবর-ছবি প্রকাশ পায় সেদিন একটি চমৎকারিত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের দেশে সাধারণত এমন ঘটনা ঘটে না। পুলিশ মার খায় রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে, এ রকম ঘটনা বা দৃশ্য আমরা কমই দেখি। মাঝে-মধ্যে ছিনতাইকারীদের হাতে, ঘাতকদের হাতে পুলিশ নির্যাতিত হয়, গোলাগুলি হয়_ তাতে মারাও যায় কেউ কেউ। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আক্রান্ত হলেও পুলিশের ওপর পাল্টা হামলা চালায়, তাও সশস্ত্রভাবে বা বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে, এমন ঘটনা আমরা দেখি না। কখনো কখনো রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের খণ্ড যুদ্ধ বাধে, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হয়। সেই ঢিলের আঘাতে হয়তো পুলিশ আহত হয়। কিন্তু এভাবে পড়ে পড়ে পুলিশ মার খায়_ এমন ঘটনা এর আগে সাধারণত মানুষ দেখেনি। আর দেখেনি বলেই মানুষের মধ্যে একটা বিচিত্র অনুভূতির জন্ম হয়েছিল। বিচিত্র অনুভূতি বলছি এ কারণে যে, পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা গত কিছু দিন থেকে পরিবর্তিত হচ্ছে। পুলিশ ঘুষ খায়। পুলিশ জনগণের কথা ঠিকমতো শোনার বদলে যাদের অর্থকড়ি আছে তাদের পক্ষে যায়, ঠিকমতো মামলা নেয় না_ এ ধরনের অভিযোগ আছে বা আগে থেকে ছিল। কিন্তু ছাত্র হত্যাকারী বা জনগণের ওপর রীতিমতো নির্যাতনকারী, এ রকম ইমেজ পুলিশের আগে কখনো ছিল না। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মনে মনে কষ্ট পাবেন, কিন্তু এটি সত্যি গত কয়েক বছরে পুলিশ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা গড়ে উঠেছে। এখন মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। তাহলে পুলিশকে পেটানোর লোক আছে, পুলিশও অসহায়ের মতো মার খায় এবং নীরব দর্শকের মতো অন্য পুলিশ তা তাকিয়ে দেখে।
এ রকম ভাববে মানুষ। কারণ আমরা তো দেখেছি পুলিশের কি ক্ষমতা। ওরা যাকে-তাকে পেটাতে পারে, যাকে-তাকে গ্রেফতার করতে পারে। এমনকি যারা ক্ষমতায় যায় সেই রাজনৈতিক দলের নেতাদের কলারে কিংবা দুই হাতে চেপে ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে ভ্যানে তোলে। অফিসগুলোকে ঘেরাও করে রাখে। কাউকে বের হতে দেয় না, সেই পুলিশ জামায়াত-শিবিরের হাতে মার খায় অসহায়ের মতো, এটা মানুষের মধ্যে এক ধরনের মজা তৈরি করেছিল, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
কিন্তু এই বোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। দ্বিতীয় দিন, পরদিন অথবা তারপরের দিন বা আজ পর্যন্ত জামায়াত-শিবির যেভাবে লাগাতার পুলিশের ওপর হামলা করছে তাতে এটি একটি নতুন রাজনৈতিক প্রপঞ্চ তৈরি করেছে, যা নিয়ে ভাবিত না হয়ে মানুষ পারছে না। একটি ভয়ও তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। রাস্তায় যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এগুলো তো রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধের দৃশ্য। এটাকেই যদি কখনো বড় মাপের দেখতে পাই, তাহলে তার অর্থ কি দাঁড়াবে? এরকম করে সবাই ভাবছে। সবাই শংকিত কিংবা আতঙ্কিত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মহাজোটের কেউ কেউ এ ব্যাপারে খুব ত্বরিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা জামায়াতের সেই পুরনো দিনের সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার কথা বলেছে এবং তারা স্পষ্টতই বলেছে এ ঘটনা কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বিশৃঙ্খলা তৈরি করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, পুলিশের ওপর জামায়াতের এই ঘৃণ্য-বর্বর হামলার পর মানুষ যে প্রতিবাদ করছে না, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না, এটাই ভাবার বিষয়।
আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়েছে। এ ঘটনার রোধকল্পে তারা তাদের মূল কিংবা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনকে রাজপথে নামার জন্য আহ্বানও জানিয়েছে এবং সেভাবেই দেখা যাচ্ছে যে, তারা বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ করছে। বিভিন্ন জায়গা বলতে আমি অবশ্য কেবল ঢাকা মহানগরের কথা বলছি। আওয়ামী লীগ এত বছরের সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বা অসাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন বলে যে পরিচিতি দিন দিন লাভ করেছিল এবং তার জামায়াতবিরোধী, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, রগকাটা রাজনীতি বা স্বাধীনতাবিরোধী এসব চক্রের বিরুদ্ধে যে ভূমিকা ছিল তাতে যে রকম হওয়ার কথা দেশব্যাপী সে রকম করে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেনি। জনগণকে সংঘবদ্ধ করার মতো কিছু হয়নি এবং মহাজোটের মধ্যে এর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। মহাজোটের কোনো শরিক দল এই মর্মে জনগণকে সংগঠিত করার জন্য যে রাজপথে নেমেছে এ রকম কিন্তু দেখাই যায়নি। জামায়াত-শিবির হঠাৎ করে এমন তৎপরতা শুরু করল কেন? হতে পারে যেভাবে আওয়ামী লীগ জবাব দিয়েছে_ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রোধ করার জন্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো সেই বহুদিন আগেই শুরু হয়েছে। তখন না করে এখন করল কেন? তার মানে কি এ সময় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে? আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা, কোনো কোনো মন্ত্রী বলেছেন, অতিশীঘ্রই তাদের বিচার হয়ে যাবে এবং বিচারের রায়ও কার্যকর হয়ে যাবে। পত্রিকায় খবর অনুযায়ী বিশেষ করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন যুক্তি, পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ পালা শেষ হলেই তো রায় ঘোষণার কথা। যেহেতু এটা নভেম্বর মাস। অনেকে মনে করছেন ডিসেম্বর মাসেই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হয়ে যাবে এবং যেভাবে মন্ত্রীরা কথা বলছেন তাতে মনে করা হচ্ছে এর শাস্তি হতে পারে কেবল মৃত্যুদণ্ড। আর সেই হিসেবে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ চার-পাঁচজন নেতা_ হয়তো গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ কয়েকজনের ফাঁসি হয়ে যাবে এবং তা ডিসেম্বরের মধ্যেই কার্যকর হবে।
এটা ধরেই নেওয়া যায়, জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি দল কি করবে? কিছু দিন আগ পর্যন্ত এ রকম একটি কথা খুব চাউর ছিল, জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে বিরাট ধরনের একটি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াতের তরুণ প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার মতো ব্যাপারে ছিল না, অংশগ্রহণ করার মতো বয়স হয়নি, তারা মনে করছে একটি বিরাট অন্যায় জামায়াত সেই সময় করেছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে। অতএব তাদের বিচার হওয়া উচিত। তারা যে অন্যায় করেছে সেই অন্যায়ের দায় তারা বইবে কেন? দল বইবে কেন? বিচারে যদি তাদের ফাঁসি হয়ে যায়, তারপর জামায়াত মুক্তভাবে কাজ করতে পারবে, গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে পারবে। তাতে আর বাধা দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকবে না।
জামায়াত-শিবিরের বর্তমান কর্মকাণ্ড দেখে আজ আর সে রকম মনে হচ্ছে না। তারা নীরবে মেনে নেবে এ রকম নয়। তারা বরঞ্চ এর প্রতিবাদ করছে। তারা যদি পারে তাহলে এই বিচার ভণ্ডুল করার চেষ্টা করবে। যারা অন্যরকম প্রচারে বাতাস দিয়েছিলেন তারা ভুল করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বাংলাদেশে একটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এটা বলা যায়। বিএনপিও এ ব্যাপারে খুব সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় বিএনপিও বলতে পারছে না, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা জামায়াতের ব্যাপারে খনিকটা নমনীয় তারাও এ কথা বলতে পারছে না, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা অন্যায়। তারা এটা বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ থাকে। এ পটভূমিতে দাঁড়িয়ে অথবা এ পটভূমি তৈরি হওয়ার অল্প আগেই মূল বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফর করেছেন। গত ২১ নভেম্বর বেগম জিয়ার ভারত সফরের ওপর আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখেছি। এ জন্য এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন মনে করছি না। শুধু এটুকু লিখছি যে, আমার বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ছিল ভারতের জাতীয় স্বার্থ যতখানি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত তা রক্ষা করার জন্য ভারত যদি মনে করে বিএনপিকে তার প্রয়োজন হতে পারে, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারে, তাহলে তারা তার বিরোধিতা করবে না। তাহলে তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে? বিএনপি কি একা একা ক্ষমতায় যাবে, নাকি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যাবে? যদি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যায় তখন ভারত কি করবে? প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমি মনে করি, গত লেখায়ও লিখেছি, বাংলাদেশের রাজনীতির পট অনেকখানি পরিবর্তন হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের ভারতনীতির কথা ভাবব ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের গভীরভাবে মনোযোগী হতে হবে এবং এর চতুর্দিক দেখেই মন্তব্য করতে হবে। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বেগম জিয়া ভারত সফরের সময় ভারত বলেছিল, তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখতে চায়। তার মানে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। বেগম জিয়া ভারতকে সেই ভিত্তিতে অনুরোধ করেছেন, বাংলাদেশে যেসব ধর্মভিত্তিক দল আছে তাদের সঙ্গেও যেন ভারত সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। পাঠক, খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। যদি বেগম জিয়া এটা বলে থাকেন (যেহেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাই লিখছি) তাহলে তার অর্থ কি দাঁড়ায়? অর্থ যা দাঁড়ায় তা স্পষ্ট। বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়ছে না। তারা স্পষ্টই বলছে, জামায়াত তাদের মিত্র। এ জন্য তারা চাচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে ভারতেরও একটা সম্পর্ক গড়ে উঠুক। তবে জামায়াত যে সশস্ত্র হামলা পুলিশের ওপর চালিয়েছে বিএনপি তা সমর্থন করেনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বরঞ্চ সাংবাদিকদের সামনে বিফ্রিংয়ে বলেছেন, বিএনপি এ ধরনের হিংসাত্দক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা এ রকম কাজ কখনো করেনি। তিনি এ কথাও বলেছেন, জামায়াত যা করছে তার দায় বিএনপি নেবে না। যে আন্দোলন সাধারণ ছিল, যে আন্দোলন গণতান্ত্রিক ছিল, শান্তিপূর্ণ ছিল, সেই আন্দোলনের মধ্যে ধীরে ধীরে অশান্তি এবং আক্রমণ ঢুকে যাচ্ছে। বিএনপি সতর্ক থাকার চেষ্টা করছে। তারা বলছে, আমাদের আন্দোলনের মধ্যে আমরা এ ধরনের কোনো কিছুকে প্রশ্রয় দেব না। কিন্তু আন্দোলন যদি জমে ওঠে, যদি আন্দোলন ব্যাপক হয়ে ওঠে তাহলে তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা এ মাপের নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না তখন। আন্দোলন হিংস্র এবং সশস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। আমরা একটা খারাপ সম্ভাবনার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এখন বোঝা উচিত, এক বছর পর নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা ধীরে ধীরে জটিল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছি। একটা জটিল রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্যে পড়ে গেছি আমরা।
মানুষ প্রধানত সুশাসন চায়, সুনীতি চায়, সুস্থতা চায়। রাজনীতির মধ্যে দুর্বৃত্তায়ন না হোক, চাঁদাবাজি না হোক, মস্তানি না হোক, পরিবারতন্ত্র না হোক_ এগুলো মানুষের চাওয়া। মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ শিবিরের ওপর হামলা করবে আর পুলিশ নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে দেখবে, তা মানুষ সমর্থন করবে না। উদাহরণস্বরূপ দুই নেত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে লিখছি, যখনই সংগ্রাম জয়ের পথে যায় তখনই তারা পেছনের ইতিহাস ভুলে যান। তখনই তাদের মনে হয় একে ছাড়া চলবে না, ওকে ছাড়া চলবে না। অথচ বিজয়ের সোপানটা তৈরি করে মূলত জনগণ। সেই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা তাদের মনে থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, বরিশালের এতবড় জনসভা করে এসে বেগম জিয়া বলতে শুরু করেছেন, তার দুই পুত্র দুর্নীতিমুক্ত, তার কথা শুনে মানুষের ভুরু কুঁচকে উঠেছে।
জামায়াত রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃত দল, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বৈধ দল। জামায়াত বার বার যে অভিযোগ করছে তাদের কোনো জায়গায় সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না, মিছিল করতে দেওয়া হয় না, কথা বলতে দেওয়া হয় না, এটা নিশ্চয় অন্যায়। আমাদের প্রথম সংবিধানে রাজনীতির ভিত্তিতে ইসলামী দল করা নিষিদ্ধ ছিল। পঁচাত্তরের পর সে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীতে ইসলামিক রাজনৈতিক দল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবলীগকে দায়িত্ব দিলেন যেখানে জামায়াত পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করতে হবে। সর্বশেষ তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, পাড়া-মহল্লা থেকে জামায়াত-শিবিরকে পিটিয়ে বের করে দিতে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে সরকার কিংবা তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ রকম আহ্বান জানাতে পারেন? তিনি কি দেশে একটি গৃহযুদ্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন না?
উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি এখনো মনে করি, পুরো পরিস্থিতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। তাহলে পরিস্থিতির একটা রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। না হলে পরিস্থিতি যে আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে_ তা একমাত্র আল্লাহ বলতে পারেন। লেখক : রাজনীতিক
ই-মেইল : mrmamma51@yahoo.com
প্রথম যেদিন পত্রিকায় পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার খবর-ছবি প্রকাশ পায় সেদিন একটি চমৎকারিত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের দেশে সাধারণত এমন ঘটনা ঘটে না। পুলিশ মার খায় রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে, এ রকম ঘটনা বা দৃশ্য আমরা কমই দেখি। মাঝে-মধ্যে ছিনতাইকারীদের হাতে, ঘাতকদের হাতে পুলিশ নির্যাতিত হয়, গোলাগুলি হয়_ তাতে মারাও যায় কেউ কেউ। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আক্রান্ত হলেও পুলিশের ওপর পাল্টা হামলা চালায়, তাও সশস্ত্রভাবে বা বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে, এমন ঘটনা আমরা দেখি না। কখনো কখনো রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের খণ্ড যুদ্ধ বাধে, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হয়। সেই ঢিলের আঘাতে হয়তো পুলিশ আহত হয়। কিন্তু এভাবে পড়ে পড়ে পুলিশ মার খায়_ এমন ঘটনা এর আগে সাধারণত মানুষ দেখেনি। আর দেখেনি বলেই মানুষের মধ্যে একটা বিচিত্র অনুভূতির জন্ম হয়েছিল। বিচিত্র অনুভূতি বলছি এ কারণে যে, পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা গত কিছু দিন থেকে পরিবর্তিত হচ্ছে। পুলিশ ঘুষ খায়। পুলিশ জনগণের কথা ঠিকমতো শোনার বদলে যাদের অর্থকড়ি আছে তাদের পক্ষে যায়, ঠিকমতো মামলা নেয় না_ এ ধরনের অভিযোগ আছে বা আগে থেকে ছিল। কিন্তু ছাত্র হত্যাকারী বা জনগণের ওপর রীতিমতো নির্যাতনকারী, এ রকম ইমেজ পুলিশের আগে কখনো ছিল না। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মনে মনে কষ্ট পাবেন, কিন্তু এটি সত্যি গত কয়েক বছরে পুলিশ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা গড়ে উঠেছে। এখন মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। তাহলে পুলিশকে পেটানোর লোক আছে, পুলিশও অসহায়ের মতো মার খায় এবং নীরব দর্শকের মতো অন্য পুলিশ তা তাকিয়ে দেখে।
এ রকম ভাববে মানুষ। কারণ আমরা তো দেখেছি পুলিশের কি ক্ষমতা। ওরা যাকে-তাকে পেটাতে পারে, যাকে-তাকে গ্রেফতার করতে পারে। এমনকি যারা ক্ষমতায় যায় সেই রাজনৈতিক দলের নেতাদের কলারে কিংবা দুই হাতে চেপে ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে ভ্যানে তোলে। অফিসগুলোকে ঘেরাও করে রাখে। কাউকে বের হতে দেয় না, সেই পুলিশ জামায়াত-শিবিরের হাতে মার খায় অসহায়ের মতো, এটা মানুষের মধ্যে এক ধরনের মজা তৈরি করেছিল, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
কিন্তু এই বোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। দ্বিতীয় দিন, পরদিন অথবা তারপরের দিন বা আজ পর্যন্ত জামায়াত-শিবির যেভাবে লাগাতার পুলিশের ওপর হামলা করছে তাতে এটি একটি নতুন রাজনৈতিক প্রপঞ্চ তৈরি করেছে, যা নিয়ে ভাবিত না হয়ে মানুষ পারছে না। একটি ভয়ও তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। রাস্তায় যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এগুলো তো রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধের দৃশ্য। এটাকেই যদি কখনো বড় মাপের দেখতে পাই, তাহলে তার অর্থ কি দাঁড়াবে? এরকম করে সবাই ভাবছে। সবাই শংকিত কিংবা আতঙ্কিত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মহাজোটের কেউ কেউ এ ব্যাপারে খুব ত্বরিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা জামায়াতের সেই পুরনো দিনের সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার কথা বলেছে এবং তারা স্পষ্টতই বলেছে এ ঘটনা কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বিশৃঙ্খলা তৈরি করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, পুলিশের ওপর জামায়াতের এই ঘৃণ্য-বর্বর হামলার পর মানুষ যে প্রতিবাদ করছে না, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না, এটাই ভাবার বিষয়।
আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়েছে। এ ঘটনার রোধকল্পে তারা তাদের মূল কিংবা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনকে রাজপথে নামার জন্য আহ্বানও জানিয়েছে এবং সেভাবেই দেখা যাচ্ছে যে, তারা বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ করছে। বিভিন্ন জায়গা বলতে আমি অবশ্য কেবল ঢাকা মহানগরের কথা বলছি। আওয়ামী লীগ এত বছরের সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বা অসাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন বলে যে পরিচিতি দিন দিন লাভ করেছিল এবং তার জামায়াতবিরোধী, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, রগকাটা রাজনীতি বা স্বাধীনতাবিরোধী এসব চক্রের বিরুদ্ধে যে ভূমিকা ছিল তাতে যে রকম হওয়ার কথা দেশব্যাপী সে রকম করে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেনি। জনগণকে সংঘবদ্ধ করার মতো কিছু হয়নি এবং মহাজোটের মধ্যে এর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। মহাজোটের কোনো শরিক দল এই মর্মে জনগণকে সংগঠিত করার জন্য যে রাজপথে নেমেছে এ রকম কিন্তু দেখাই যায়নি। জামায়াত-শিবির হঠাৎ করে এমন তৎপরতা শুরু করল কেন? হতে পারে যেভাবে আওয়ামী লীগ জবাব দিয়েছে_ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রোধ করার জন্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো সেই বহুদিন আগেই শুরু হয়েছে। তখন না করে এখন করল কেন? তার মানে কি এ সময় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে? আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা, কোনো কোনো মন্ত্রী বলেছেন, অতিশীঘ্রই তাদের বিচার হয়ে যাবে এবং বিচারের রায়ও কার্যকর হয়ে যাবে। পত্রিকায় খবর অনুযায়ী বিশেষ করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন যুক্তি, পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ পালা শেষ হলেই তো রায় ঘোষণার কথা। যেহেতু এটা নভেম্বর মাস। অনেকে মনে করছেন ডিসেম্বর মাসেই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হয়ে যাবে এবং যেভাবে মন্ত্রীরা কথা বলছেন তাতে মনে করা হচ্ছে এর শাস্তি হতে পারে কেবল মৃত্যুদণ্ড। আর সেই হিসেবে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ চার-পাঁচজন নেতা_ হয়তো গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ কয়েকজনের ফাঁসি হয়ে যাবে এবং তা ডিসেম্বরের মধ্যেই কার্যকর হবে।
এটা ধরেই নেওয়া যায়, জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি দল কি করবে? কিছু দিন আগ পর্যন্ত এ রকম একটি কথা খুব চাউর ছিল, জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে বিরাট ধরনের একটি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াতের তরুণ প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার মতো ব্যাপারে ছিল না, অংশগ্রহণ করার মতো বয়স হয়নি, তারা মনে করছে একটি বিরাট অন্যায় জামায়াত সেই সময় করেছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে। অতএব তাদের বিচার হওয়া উচিত। তারা যে অন্যায় করেছে সেই অন্যায়ের দায় তারা বইবে কেন? দল বইবে কেন? বিচারে যদি তাদের ফাঁসি হয়ে যায়, তারপর জামায়াত মুক্তভাবে কাজ করতে পারবে, গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে পারবে। তাতে আর বাধা দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকবে না।
জামায়াত-শিবিরের বর্তমান কর্মকাণ্ড দেখে আজ আর সে রকম মনে হচ্ছে না। তারা নীরবে মেনে নেবে এ রকম নয়। তারা বরঞ্চ এর প্রতিবাদ করছে। তারা যদি পারে তাহলে এই বিচার ভণ্ডুল করার চেষ্টা করবে। যারা অন্যরকম প্রচারে বাতাস দিয়েছিলেন তারা ভুল করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বাংলাদেশে একটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এটা বলা যায়। বিএনপিও এ ব্যাপারে খুব সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় বিএনপিও বলতে পারছে না, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা জামায়াতের ব্যাপারে খনিকটা নমনীয় তারাও এ কথা বলতে পারছে না, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা অন্যায়। তারা এটা বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ থাকে। এ পটভূমিতে দাঁড়িয়ে অথবা এ পটভূমি তৈরি হওয়ার অল্প আগেই মূল বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফর করেছেন। গত ২১ নভেম্বর বেগম জিয়ার ভারত সফরের ওপর আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখেছি। এ জন্য এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন মনে করছি না। শুধু এটুকু লিখছি যে, আমার বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ছিল ভারতের জাতীয় স্বার্থ যতখানি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত তা রক্ষা করার জন্য ভারত যদি মনে করে বিএনপিকে তার প্রয়োজন হতে পারে, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারে, তাহলে তারা তার বিরোধিতা করবে না। তাহলে তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে? বিএনপি কি একা একা ক্ষমতায় যাবে, নাকি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যাবে? যদি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যায় তখন ভারত কি করবে? প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমি মনে করি, গত লেখায়ও লিখেছি, বাংলাদেশের রাজনীতির পট অনেকখানি পরিবর্তন হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের ভারতনীতির কথা ভাবব ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের গভীরভাবে মনোযোগী হতে হবে এবং এর চতুর্দিক দেখেই মন্তব্য করতে হবে। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বেগম জিয়া ভারত সফরের সময় ভারত বলেছিল, তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখতে চায়। তার মানে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। বেগম জিয়া ভারতকে সেই ভিত্তিতে অনুরোধ করেছেন, বাংলাদেশে যেসব ধর্মভিত্তিক দল আছে তাদের সঙ্গেও যেন ভারত সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। পাঠক, খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। যদি বেগম জিয়া এটা বলে থাকেন (যেহেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাই লিখছি) তাহলে তার অর্থ কি দাঁড়ায়? অর্থ যা দাঁড়ায় তা স্পষ্ট। বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়ছে না। তারা স্পষ্টই বলছে, জামায়াত তাদের মিত্র। এ জন্য তারা চাচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে ভারতেরও একটা সম্পর্ক গড়ে উঠুক। তবে জামায়াত যে সশস্ত্র হামলা পুলিশের ওপর চালিয়েছে বিএনপি তা সমর্থন করেনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বরঞ্চ সাংবাদিকদের সামনে বিফ্রিংয়ে বলেছেন, বিএনপি এ ধরনের হিংসাত্দক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা এ রকম কাজ কখনো করেনি। তিনি এ কথাও বলেছেন, জামায়াত যা করছে তার দায় বিএনপি নেবে না। যে আন্দোলন সাধারণ ছিল, যে আন্দোলন গণতান্ত্রিক ছিল, শান্তিপূর্ণ ছিল, সেই আন্দোলনের মধ্যে ধীরে ধীরে অশান্তি এবং আক্রমণ ঢুকে যাচ্ছে। বিএনপি সতর্ক থাকার চেষ্টা করছে। তারা বলছে, আমাদের আন্দোলনের মধ্যে আমরা এ ধরনের কোনো কিছুকে প্রশ্রয় দেব না। কিন্তু আন্দোলন যদি জমে ওঠে, যদি আন্দোলন ব্যাপক হয়ে ওঠে তাহলে তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা এ মাপের নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না তখন। আন্দোলন হিংস্র এবং সশস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। আমরা একটা খারাপ সম্ভাবনার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এখন বোঝা উচিত, এক বছর পর নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা ধীরে ধীরে জটিল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছি। একটা জটিল রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্যে পড়ে গেছি আমরা।
মানুষ প্রধানত সুশাসন চায়, সুনীতি চায়, সুস্থতা চায়। রাজনীতির মধ্যে দুর্বৃত্তায়ন না হোক, চাঁদাবাজি না হোক, মস্তানি না হোক, পরিবারতন্ত্র না হোক_ এগুলো মানুষের চাওয়া। মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ শিবিরের ওপর হামলা করবে আর পুলিশ নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে দেখবে, তা মানুষ সমর্থন করবে না। উদাহরণস্বরূপ দুই নেত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে লিখছি, যখনই সংগ্রাম জয়ের পথে যায় তখনই তারা পেছনের ইতিহাস ভুলে যান। তখনই তাদের মনে হয় একে ছাড়া চলবে না, ওকে ছাড়া চলবে না। অথচ বিজয়ের সোপানটা তৈরি করে মূলত জনগণ। সেই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা তাদের মনে থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, বরিশালের এতবড় জনসভা করে এসে বেগম জিয়া বলতে শুরু করেছেন, তার দুই পুত্র দুর্নীতিমুক্ত, তার কথা শুনে মানুষের ভুরু কুঁচকে উঠেছে।
জামায়াত রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃত দল, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বৈধ দল। জামায়াত বার বার যে অভিযোগ করছে তাদের কোনো জায়গায় সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না, মিছিল করতে দেওয়া হয় না, কথা বলতে দেওয়া হয় না, এটা নিশ্চয় অন্যায়। আমাদের প্রথম সংবিধানে রাজনীতির ভিত্তিতে ইসলামী দল করা নিষিদ্ধ ছিল। পঁচাত্তরের পর সে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীতে ইসলামিক রাজনৈতিক দল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবলীগকে দায়িত্ব দিলেন যেখানে জামায়াত পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করতে হবে। সর্বশেষ তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, পাড়া-মহল্লা থেকে জামায়াত-শিবিরকে পিটিয়ে বের করে দিতে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে সরকার কিংবা তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ রকম আহ্বান জানাতে পারেন? তিনি কি দেশে একটি গৃহযুদ্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন না?
উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি এখনো মনে করি, পুরো পরিস্থিতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। তাহলে পরিস্থিতির একটা রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। না হলে পরিস্থিতি যে আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে_ তা একমাত্র আল্লাহ বলতে পারেন। লেখক : রাজনীতিক
ই-মেইল : mrmamma51@yahoo.com