এসব কুলাঙ্গার সন্তানের জন্যই মনে হয় জাহান্নাম! বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে কাটলো স্বজনহারাদের রোজার মাস
অনেকে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকেন, হয়তো এখনি সন্তান এসে আব্বা আম্মা বলে ডাকবে- প্রতিদিন ঐ সময় এই স্মৃতি বুকে ধরে শুধু চোখের পানি ছাড়েন। আসলে কেউ আসবে না। চোখের জলেই হবে তাদের চির বিদায় বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
অন্যরকম কষ্টকর ও ভাবনার একটি চিত্র- বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে কাটে স্বজনহারাদের রোজার মাস- চার বৃদ্ধার মৃত্যু, দাফনেও আসল না আপনরা- আমরাও কি পাশ্চাত্যের অমানবিক জীবনের দিকে?
“মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই ইহার চেয়ে নাম যে মধুর, ত্রিভূবনে নাই।” কাজী কাদের নেওয়াজ
স্বার্থের জুয়াখেলায় মত্ত এই বিচিত্র পৃথিবীতে আমরা এতটাই ব্যস্ত যে জীবনের জন্য ধ্রুব মৃত্যুর কথাটাই ভুলে গেছি। এমনি সামনে দিয়ে মৃত মানুষের লাশ নিয়ে গেলেও মনে হয় না মরব। অথচ ঠিক আগামী কালই আমাদের সবাইকে নিম্ন মানের সেলাই বিহীন কাপড় নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এর পরও মানুষ পিতা-মাতার খোঁজ-খবর রাখে না, মিথ্যা বলে কিংবা ঘুষ খায়।
সন্তান, আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনহারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পুরো রমজান মাস কাটলো চোখের জলে। কেউ কেউ ভুলতে পারেননি তাদের পুরানো স্মৃতি। স্ত্রী, স্বামী, সন্তান ও নাতী-নাতনীদের নিয়ে রমজান মাসে এক সঙ্গে ঘরে বসে ইফতার করতেন। এতে কতই আনন্দ উপভোগ করতেন। কয়েকজন বৃদ্ধ বলেন, চাকরি কিংবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকলে ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে স্ত্রী ও সন্তানদের কথা মনে পড়ে যায়। কখন তাদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করবেন। তখন চাকরি কিংবা ব্যবসায়ের কাজ রেখে অথবা দ্রুত শেষ করে বাড়ি ফিরে যান। এমন কি স্ত্রী ও সন্তানরা পিতা কখন আসবে? ইফতারি প্রস্তুত করে বসে থাকতো। কোন কারণে ইফতারিতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে ঐ দিন বাসায় আপনজনদের ইফতার ঠিকমত হতো না। কিন্তু বয়সের ভারে পরিবারের সবার প্রিয় ব্যক্তি এক সময় আয়-উপার্জন করতে অক্ষম হওয়ায় সবার বোঝা হয়ে যান। বৃদ্ধের প্রতি মানসিক ও শারীরিকসহ কতই নির্যাতন নেমে আসে। অবশেষে নাড়ি ছেড়া ধন ও কলিজার টুকরা সন্তানদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা পিতা-মাতা সইতে পারেননি। চোখের পানি মুছতে মুছতে বাড়ি থেকে পাড়ি দেন অচেনা পথে। অবশেষে ঠাঁই নেন হূদয়বান ব্যক্তি ও শিল্পপতি খতীব আব্দুল জাহিদ মুকুলের প্রতিষ্ঠিত গাজীপুর মনিপুরের বিশিয়া কুড়িবাড়ি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। মাদারীপুরের মতিজান (৭৪), নারায়ণগঞ্জের নাসিমা বেগম (৮০), বীর মুক্তিযোদ্ধা কুলসুম বিবি (৮১), ময়মনসিংহের ওসমান গনি (৭০), গফরগাঁও-এর আব্দুল খালেক (৭০), পিডব্লিউডির সাবেক হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম (১০৫) এ সব কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বৃদ্ধাশ্রমে পহেলা রমজানে ইফতারের সময় তাদের সেই স্মৃতি মনে পড়ে। ঐ দিন অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ইফতারি হাতে নিয়ে কেঁদে ফেলেন। জীবনের শেষ সময় কলিজার টুকরা সন্তান কিংবা আপনজন দ্বারা বিতাড়িত হয়ে একাকী ইফতার করতে হবে, এটা তাদের কল্পনার বাইরে। অনেকে বলেন, এটা তাদের কপালের লিখন। প্রতিদিন রমজানে ইফতার ঘনিয়ে আসার ঘণ্টাখানেক আগে বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে তারা একে অপরের পুরনো স্মৃতি নিয়ে গল্প করেন। অনেকে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকেন, হয়তো এখনি সন্তান এসে আব্বা আম্মা বলে ডাকবে, আসেন ইফতারের সময় হয়েছে, এক সঙ্গে ইফতার করি। প্রতিদিন ঐ সময় এই স্মৃতি বুকে ধরে শুধু চোখের পানি ছাড়েন। আসলে কেউ আসবে না, চোখের জলেই হবে তাদের চির বিদায় বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
গত রমজানে চারজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মারা গেছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের দাফন বৃদ্ধাশ্রমে হয়েছে। অপরজনের লাশ স্বজনরা নিয়ে যায়। তাও খবর দেয়ার পর স্বজনরা এসেছেন। যেভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বৃদ্ধাশ্রমে এসেছেন, লালশটি নিয়ে আপজনরা এর দায় মুক্ত হতে চেয়েছে বলে কয়েক বৃদ্ধ জানান। এ যেন, কাটা ঘায়ে লবণ দেয়ার মত কাজ বলেও কোন কোন বৃদ্ধ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বৃদ্ধাশ্রমে ১৯০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪০ জন বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে রমজান মাস কাটিয়েছেন। বাকি ১৫০ জনের মধ্যে ৪৫ জন বৃদ্ধ ও ৫৫ জন বৃদ্ধা বৃদ্ধাশ্রমে রোজা রেখেছিলেন। ৫০ জন অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে পারেননি বলে বৃদ্ধাশ্রমের সুপার মোহাম্মদ শরীফ জানান।
তখনো শেষ বিকালের লালচে আলোর খেলা চলছে দিগন্তে। নতুন আরেকটি সন্ধ্যার আগমনী সংকেত বাজছে। কেন যেন পুরোনো মানুষদের কথা ভীষণ মনে পড়ছিলো। কিভাবেই যে টুপটাপ ঝড়ে গেছে চারপাশের প্রিয় মানুষগুলো। যে জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে রাস্তাটা কোথাও যেন হারিয়ে গেছে। রাস্তাও বোধ হয় পথ হারায় কখনো কখনো।
এই জায়গাটাতেই প্রায়ই দেখা হতো এক প্রবীণের সাথে। অশীতিপর এই মানুষটির সাথে আলাপও হতো বটে। এই ভদ্রলোকের হাঁটাটাকে সব সময়ই মনে হতো উদ্দেশ্যহীন, গন্তব্যহীন। আসলে এ রকম অনেক নুয়েপড়া কুঁজো হয়ে যাওয়া বৃদ্ধরা এখানে ওখানে ঘরছাড়া বালকের মত ঘুরে বেড়ায়।
বয়স ৬০-৬৫ পেরুলেই খুব ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশের শিতি-অশিতি সব শ্রেণীর মানুষেরা মনে করে পশ্চিমা দেশের তুলনায় আমরা আমাদের বাবা মাকে বেশি সম্মান করি, ভালবাসি। কিন্তু আমার কাছে তুলনা করার ব্যাপারটি খুব হাস্যস্পদ মনে হয়।
আমরা আমাদের প্রবীণ বাবা মায়ের ব্যক্তি স্বাধীনতার কতটা মূল্য দেই? আমাদের দেশের বেশীর ভাগ ছেলে মেয়ে; বাবা-মায়ের বয়স হয়ে গেলে মনে করি ওরা বুড়ো হয়েছে। ওদের আবার কি মতামত। ওরা তো সেকেলে। অনেকেতো নিজের কারণেই হোক কিংবা পরিস্থিতির কারণেই হোক বাবা-মাকে বোঝা মনে করে থাকে। এসব বাবা-মা এমন এক পরিস্থিতির শিকার হন যে পরিবার যদি তাদের না দেখে তাহলে তাদের দেখ-ভালের কেউ থাকে না। কারণ আমাদের সমাজে সামান্য হলেও একজন বৃদ্ধের মূল্য শুধু পরিবারের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে।
দেশপ্রেমের জোয়ারে এদেশের মানুষ শুধু ভাসতে শিখছে, মানুষের জীবনের দাম দিতে শিখেনি। একজন বৃদ্ধ লোকের প্রতি কোন রকমের সহানুভূতি আমরা দেখাই না। অথচ পাশ্চাত্য দেশে বিভিন্ন স্তরের সরকারি সংস্থা থেকে পাওয়া যায় নানা রকম সুযোগ-সুবিধা। শুধু তাই নয় ডাক্তারের টাকা, হাসপাতালের টাকা, এমনকি ওষুধের টাকাও আসে সরকারি তহবিল থেকে। তারপর পয়ষট্টির পর থেকে বাসের ভাড়া, প্লেনের ভাড়া, ট্রেনের ভাড়া, কাপড় চোপড়ের দাম, জুতোর দাম সবকিছুতে ছাড় দেওয়া হয়। সময় সময় সরকার তাদের পৃথিবীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য ভ্রমনভাতাও দেয়। অথচ আমাদের দেশে এসবের বিন্দুমাত্র সুযোগ সুবিধা নেই একজন বৃদ্ধলোকের। সঙ্গত কারনেই বাবা-মাকে দেখার দায়িত্ব সন্তানের।
যেহেতু আমাদের ‘পারিবারিক বন্ধন’ হাজার বছরের লালিত ঐতিহ্য। সেহেতু এই বন্ধন অটুট রাখার জন্যেই বৃদ্ধ বাবা-মা’র সকল প্রকার দায়িত্ব সন্তানের। পাশ্চাত্যে কথা ভেবে আজকাল অনেকেই বাবা-মার দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। তারা মনে করে ব্যক্তি স্বাধীনতার মূল্য নিয়ে চলাফেরা যায়না। অথচ এই বাবা-মার সন্তান হিসাবে যখন আমরা বড় হয়ে উঠি তখন কোনো বাবা মা কি তার সন্তানকে বোঝা মনে করে ? ছেলে যে বড় হবে মস্ত বড় চাকরি করবে। আমাদের সব কষ্ট পুষিয়ে দেবে। এই ভালবাসার কতটুকু মূল্য ছেলে মেয়েরা দেয় ? খুব বেশী অধিকার সচেতনা আমাদের মন মানসিকতাকে হীন করে দিয়েছে। সুখ অন্বেষণে জীবনটাকে আমরা বারবার ওলট পালট করে দেখি ঠিক, কিন্তু ক’জন সুখী হতে পারছি?
পাশ্চাত্য দেশগুলোতেও বাবা মা’রা সস্তানকে যথেষ্ট যত্নে লালন পালন করে। সন্তানরাও তাদের বাবা মাকে অনেক বেশী ভালবাসে। তবে তাদের ক্ষেত্র ব্যতিক্রম এটুকুই যে, সেইসব বাবা মায়েরা নিজেদের জীবনকেই সব চেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয়। যার ফলে তাদের পারিবারিক কোন বন্ধন থাকে না।
কিন্তু আমাদের বাবা মারা তো সন্তানের জন্যেই সব কিছু করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এমন কোন বাবা মা কি আছে যারা সন্তানের জন্য নিজেদের সুখ, স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দেননি। যে বাবা মা জীবনের ধন ভেবে সন্তান সংসার আঁকড়ে ধরে রাখে, সেই সন্তানই একদিন বড় হয়ে সেই বাবা মা যে জীবন ধারাতে অভ্যস্ত সে জীবন ধারাটা পালটে দিতে চায়। তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার কোন মূল্য দিতে চায় না। তাদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে বরং আমাদের সিদ্ধান্ত তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাই।
আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি একটি বয়সে আমরাও বুড়ো হব। যাদের আমরা বলি বুড়ো হয়েছে, বেশী কথা বললে বলি; ভিমরতিতে ধরেছে, ভেবে কি দেখি আমিও বুড়ো হবো, কানে শুনবো না হয়তো, স্মৃতিভ্রম হবে, হাত-পা কাঁপবে। এমনও তো হতে পারে রাতের আধাঁরে হঠাৎ বেড়িয়ে পড়তে পারি অতীতের খোঁজে।
এখন যারা বলি আমি সন্তানের বোঝা হবো না, তাদের দয়া ওপর নির্ভর করবো না, আমি তাদের এই ধারনার সাথে কখনোই একমত হতে পারি না। আমার সন্তান আমাকে দেখবে না তো কাকে দেখবে? আমার সব কিছুইতো সন্তানের জন্য, সন্তানতো আমার। আমার সাথেতো সন্তানের রক্তের বন্ধন।
আসলে এই যে বন্ধন এই বন্ধন রার দায়িত্ব বাবা মা আর সন্তানেরই। এই বন্ধন অটুট থাকলে ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করার জন্য বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রয়োজন হয়না।
আমি তো মনে করি আমাদের সবার সুস্থ মন মানসিকতাই আমাদের সকল প্রকার ব্যক্তি স্বাধীনতা রার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সম। যে বাবা মা তিলে তিলে একটি সাজানো সংসার গড়ে তুলেছেন কি করে এই সংসার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করা যায়! কি করে সম্ভব এই সংসার গড়ার কারিগরদের উপো করা?
আমরা যদি মনে করতাম গুরুজন রাগ করেছেন, না হয় অন্যায়ই করেছে; আমরা কি পারিনা তাদের সবকিছু ভালবাসার গুনে মেনে নিতে। একটাইতো জীবন। বাবা-মা-সন্তান সবাই মিলে সেই জীবনের পুরোটাকে আনন্দে ভরপুর রাখতে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করলে কি এমন ক্ষতি হবে?
তবে একথা অনস্বীকার্য সন্তানের পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও বয়স্ক মানুষদের প্রতি যথেষ্ট দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন। যে মানুষ দেশের জন্যে কাজ করেছে, দেশের মানুষের জন্য সারাজীবন স্ব স্ব অবস্থান থেকে শ্রম দিয়েছেন। তাদেরকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাষ্ট্র থেকে সকল সুবিধা দেয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
কেমন আছেন প্রবীণ নিবাসে নির্বাসিত দুখিনী মায়েরা
‘মা জননী নাইরে যাহার/ ত্রিভুবনে তাহার কেহ নাইরে/ মায়ের মতো আপন কেহ নাই।
মা কথাটি ছোট্ট অতি/ কিন্তু জেন ভাই/ তাহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’
মায়ের একধার দুধের দাম/কাটিয়া গায়ের চাম/পাপস বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না/এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা… জীবনমুখী এ বাংলা গানের সুর অনেকের মোবাইল টিউন, ওয়েলকাম টিউনে শোনা যায়।
মায়ের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে বলেই হয়তো এসব গান তারা ডাউনলোড করছেন। শুধু গান লোড কেন, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো এদেশে এখনও বহু সন্তান রয়েছেন, যারা মায়ের জন্য জীবন উত্সর্গ করতে পারেন। কিন্তু তার বিপরীতে মায়ের প্রতি সন্তানদের চরম অবহেলা-অবজ্ঞার চিত্র ধরা পড়ে বৃদ্ধাশ্রমসহ সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবার ছাড়িয়ে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত। প্রবীণ মায়েরা কেমন রয়েছেন—তা জানার জন্য বিভিন্ন আশ্রম ঘুরে জানা গেছে, মৃত্যু মুহূর্তে সংসারবিচ্ছিন্ন লোকচক্ষুর আড়ালে পরবাসে থাকা মায়েদের ভিড় বাড়ছে!
নিষ্প্রাণ, বোধশূন্য, গতানুগতিক জীবনযাত্রার বাইরে থাকা ওইসব মায়ের সঙ্গে কথা হয়। কেমন আছেন তারা জানতে চাইলে অনেকেরই চোখে পানি এসে যায়! কেউ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন, ভাষা খুঁজে পান না। আবার কেউ পাছে সমাজে প্রতিষ্ঠিত সন্তানের মানহানি হয় কিংবা ছেলের রক্তচক্ষু দেখতে হয়—সে ভয়েও গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। কেউ আবার নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেন—‘চোখের সামনে না থাকুক, তবুও আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’
প্রবীণ হিতৈষী সংঘের আশ্রমে এখন শুধু রাজধানী থেকে নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মায়েদের ঠাঁই হয়। কেমন আছেন? জানতে চাইলে জবাব আসে—কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বতমালার মতো অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক! আর্থিক সচ্ছলতায় ভরা সংসারে প্রার্থিব সুখ পেয়ে এবং স্বজনদের কাছ থেকে ছিন্ন হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক সংযোগের সেতুবন্ধন। অনিশ্চয়তা, উত্কণ্ঠা, শঙ্কায় নিজের ঘরও হয়ে উঠেছে পরবাস। চারপাশটা কেবলই ফাঁকি আর মমতার ফাঁদ! মন তখন খুঁজে বেড়ায় একটা আশ্বাস—আশ্রয়, নির্ভরতা আর শুশ্রূষা। সারাজীবন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সব সহায়-সম্পত্তি, ভিটেমাটি বিক্রি করে দিয়ে শেষ আশ্রয় হয় রাজধানীর আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের বৃদ্ধাশ্রমে—আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলেন নার্গিস সুফিয়া আক্তার। রংপুরের বাসিন্দা সুফিয়ার (৫৫) স্বামী বড় পুলিশ অফিসার ছিলেন (নাম প্রকাশ করতে চাননি)। এক ছেলে লেখাপড়া শেষে বাবা-মাকে ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হলেন; তিন মেয়ে যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। প্রতাপশালী স্বামীর আত্মম্ভরিতা ভেঙে খান খান হয়ে যায় দেখে মন বলে ওঠে বিকল্প পথ খুঁজি! পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল মানুষ দুটি রিক্ত জীবনের শেষপ্রান্তে এসে নির্জনে একাকীত্ব বেছে নিলেন। বিস্তৃত ও নিজস্ব পরিধি থেকে বিচ্ছিন্ন হলেন সুফিয়া। এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনে একই ছাদের নিচে। কিন্তু দুজনের মাঝখানে একটা ইট-পাথরের দেয়াল। কথাগুলো বলতে বলতে তার বুকের ভেতর থেকে নিঃশ্বাস ওঠে। চোখের পানি আড়াল করতেই দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া অসুস্থ সুফিয়া খাট থেকে নেমে সামনের বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ান। শান্ত কণ্ঠে বলেন, ‘গভীর রাতে যখন ঘুম আসে না, তখন ছেলেমেয়ের মুখ মনে পড়ে; কিন্তু মনে করতে চাই না! কারও কাছে তো হাত পাততে হয় না। তবুও জোর করেই মনের মধ্যে এলোমেলো ভাবনা উঁকি দেয়। সব ভুলতে চাই। কাউকে চাই না।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের হোমিও (অবসরপ্রাপ্ত) ডাক্তার ছেলেমেয়ের রক্তচক্ষুর ভয়ে নাম বলতে চাননি অশীতিপর ওই বৃদ্ধা। সংসারে দৈনন্দিন গতানুগতিক জীবনের অভ্যস্ততা তার সংসারে কাল হলো। তার দায়িত্বশীলতা ছেলেবউয়ের কাছে একরকম নাক গলানোর মতো! যা পরবর্তীতে কাল হয়ে দাঁড়ায়। সংসার জীবনে টুকটাক অশান্তিতে তার জন্য প্রায় ৫০ বছর বয়সী ছেলে জায়গা করে দিল বৃদ্ধাশ্রমে। অভিমানী স্বরে বললেন, ‘ছেলে যেখানেই আমায় ফেলে রাখুক, আমার সামনে এলে সব কষ্ট ভুলে যাই। শুধু অপেক্ষায় থাকি ও কখন আমার সামনে আসবে!’ চোখ ছলছল করে ওঠে। নীরব থাকেন কিছুক্ষণ। কোনো সমস্যা নেই বললেও কথায় কথায় অনেক কিছুই বললেন। তার কষ্টটা বুকে চেপে রেখেছেন একরকম জোর করেই। এ প্রতিনিধি চলে আসতে গেলে হাত বাড়ান। তার চোখের ভাষা বলে দেয়—আরও একটু থাকো পাশে, সময় যেন কাটে না! স্বামীহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত পল্লবীর নার্গিস জাহানের মলিন পোশাক। ‘তবুও এই বেশে ভালো আছি। সংসারে একটা মেয়ে। কিছুদিন ছিলাম। তারপর মায়ের আর জায়গা হলো না মেয়ের কাছে’—বললেন তিনি। ভাগ্যপীড়িত করুণ নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গে মোকাবিলায় মানসিক দৃঢ়তা তার মধ্যে। আবুজর গিফারি কলেজের প্রাক্তন এক প্রভাষকের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিমানে সংযত আবেগ—‘এইতো এখানে রেখে খাওয়া-পরার খরচ দিচ্ছে। প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। ভালো না বাসলে কী আর এত খরচ ছেলেমেয়েরা দেয়? তারা দেশে নেই। ভালো হয়েছে, দেশে তো এখন স্বাভাবিক মৃত্যুরও গ্যারান্টি নেই। দু’বছর আগেও তাদের কথা মনে করে কষ্ট হতো। এখন হয় না। যে যেখানেই থাকুক, তারা যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ তবে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের বৃদ্ধাশ্রমের মায়েরা জানান, এখানে এত লোক আসে। তারা প্রত্যেকই অনেক বয়সী এবং অসুস্থ। এখানে এটাস্টড বাথরুম না থাকায় কষ্ট হয়। রাতে কেউ কেউ অন্ধকারে পড়ে যান। একজন জানান, ক’দিন আগে অন্ধকারে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছেন। তারা এটাস্টড বাথরুম এবং খাবারের মানটা আরও একটু ভালো করার আহ্বান জানান।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাসে থাকা বৃদ্ধ নারগিস জাহানের (৭০) মুখোমুখি হতেই তিনি বিষণ্ন হয়ে পড়েন। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। অবুঝ অসহায় শিশু সন্তানটির ঊনিশ থেকে বিশ হলে যে মায়ের খানাদানা, ঘুম হারাম হয়ে যেত, সেই মাকে ৭ বছর ধরে দেখতে আসেনি তার হতভাগ্য সন্তান। শিক্ষকতা করেছেন প্রায় ২৯ বছর। ছেলেমেয়েদের নাম পরিচয় অথবা তারা কে কি করছেন তা না জানিয়ে শুধু বলেছেন, মৃত্যুর আগে তাদের দেখতে চান। ৪০৬ নম্বর রুমে নিবাস তার। ভীষণ অসুস্থ, বিছানায় শুইয়ে আছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। সন্তানরা যেমন দেখছেন না, তেমনি কোন স্বজন অথবা সহৃদয় সুজনের সাহায্যও মিলছে না।
নারগিস সুফিয়া (৬৬) আর এক মা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সঙ্গে কি যেন বলছিলেন। দু’পায়ে পানি জমে ফুলে রয়েছে। কোমরে দারুণ ব্যথা। স্বামী পুলিশের এসপি ফজলুল হক বসুনিয়া ১৯৯৮ সালে মারা যান। ৫ বছর ধরে প্রবীণ নিবাসে আছেন। একমাত্র ছেলে সাইফুল হক বসুনিয়া ১৫ বছর অস্ট্রেলিয়ায় জীবনযাপন করে সম্প্রতি সস্ত্রীক দেশে ফিরেছেন। মাকে দু’বার দেখতে এসেছিলেন ফলমূল নিয়ে। নারগিস সুফিয়া জানান, ভয় পান চোখের পানি ফেলতে গিয়ে, শুনেছি চোখের পানি নাকি সন্তানদের অমঙ্গল ডেকে আনে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। তিনি চান তার সন্তানের মঙ্গল। ফলমূল নয়, শেষ বয়সে ছেলের সঙ্গে থাকতে চান তিনি।
মীরা চৌধুরী জানালার গ্রিল ধরে বাইরের সবুজ চত্বরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। তার বয়স ৭৭ বছর, মা, কেমন আছেন বলতেই মুখ ঘুরিয়ে নির্বাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। ব্যথিত কণ্ঠে জানালেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্বামী জোসেফ চৌধুরী প্রায় ৮ বছর আগে মারা গেছেন। জীবনে যা কিছু গড়েছেন সবই একমাত্র সন্তানকে দিয়েছেন। এখন তিনি একা। তার শক্তি-সামর্থ্য কিছুই নেই। থাকছেন এ প্রবীণ নিবাসে। ছেলে অপূর্ব হাসান চৌধুরী আমেরিকায় থাকেন। ছেলের মুখখানা দেখতে বড়ই ইচ্ছে করে তার। ভাতের লোকমা মুখের কাছে নিতেই সন্তানদের চেহারা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। গলা দিয়ে খাবার নামে না।
দিলরুবা মাসুদ নামে এক মা চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এ নিবাসেই মারা যান। ৭ বছর এ নিবাসে ছিলেন। ছেলে সৌদ আল মাসুদ আমেরিকা প্রবাসী। নিবাসে থাকা অবস্থায় ছেলে কোনদিনই মাকে দেখতে আসেননি। খোঁজও নেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিবাসে কর্মরত একজন বলেছেন, দিলরুবা মাসুদ অনেক দিন অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। ছেলেকে দেখার জন্য শুধুই কাঁদতেন। এভাবেই কেটেছে তার জীবনের শেষ দিনগুলো। নিবাসে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা জানান, সন্তান সব সময় সন্তান। তাই তাদের নাম বলছি না। তারা অসম্মানিত হলে বড়ই কষ্ট পাব। তারা ভালো থাকুক এটাই খোদার কাছে দোয়া করি। সাংবাদিকদের জন্য তাদের বকা শুনতে হয়। সন্তানরা রাগ করেন। সন্তানরা নিষেধ করে দিয়েছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে। কোনভাবেই যেন তারা তাদের ছবি তুলতে না পারে তাও বলে দিয়েছে। মলিন মুখে তিনি বলেন, বেশ ভালোই আছি বাবা। সন্তানরা ভালো থাকুক, প্রত্যেক মা-ই তো তাই চান।
লেখক : এম ইউ আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
http://studentbd24.com/?p=9645
jieMy Site
উত্তরমুছুনRtv Online
উত্তরমুছুনPrivate Jobs
উত্তরমুছুনToday this page educate you the Superior Connections Private Limited Latest employments 2020 . Better Connections Private Limited is looking than enlist the bore, persevering and well-taught candidates for the accompanying posts given.
So in the event that you are intrigued and you have the necessary Qualification or Experience for this activity at that point apply at the earliest opportunity and profit such an incredible chance.
Business Development Manager
Business Development Executive
Deals Executive
Deals Intern
Fund Manager
Records Officer
Recuperation Officer
Program Manager
Facilitator
Lab Assistant
Educator For Teaching
Floor Operation Manager
Floor Supervisor
Leader
Telesales Executive
Information Control Officers
PHP Laravel Developers
Andriod Developer
IOS Developer
Square chain Expert
QA Engineer
Specialized Writer
Computerized Marketing Expert
Presales Engineer
IT Quality Auditor
Entrance Tester
Director NOC
System Engineers
Framework Admins
Framework Support Engineers
Junior Wireless Rigger
Fiber Technicians
Junior Fiber
Private Jobs
উত্তরমুছুনToday this page educate you the Superior Connections Private Limited Latest employments 2020 . Better Connections Private Limited is looking than enlist the bore, persevering and well-taught candidates for the accompanying posts given.
So in the event that you are intrigued and you have the necessary Qualification or Experience for this activity at that point apply at the earliest opportunity and profit such an incredible chance.
Business Development Manager
Business Development Executive
Deals Executive
Deals Intern
Fund Manager
Records Officer
Recuperation Officer
Program Manager
Facilitator
Lab Assistant
Educator For Teaching
Floor Operation Manager
Floor Supervisor
Leader
Telesales Executive
Information Control Officers
PHP Laravel Developers
Andriod Developer
IOS Developer
Square chain Expert
QA Engineer
Specialized Writer
Computerized Marketing Expert
Presales Engineer
IT Quality Auditor
Entrance Tester
Director NOC
System Engineers
Framework Admins
Framework Support Engineers
Junior Wireless Rigger
Fiber Technicians
Junior Fiber
Latest Overseas Jobs 2020
উত্তরমুছুনUK-USA-UAE-Dubai International Latest Jobs 2020
To Work abroad is everybody's fantasy and the vast majority of the youthful and gifted residents of Pakistan s are in scan for the occupations in abroad. What's more,
here on our site, we will give you Overseas Jobs to Pakistani in KSA, UAE, UK, Canada, and Dubai, Saudi Arabia, Abu Dhabi, Libya, Malaysia, Oman, Kuwait, UK,
Canada and numerous different spots. Our principle thought process is to be submitted with giving you the best offices identified with Jobs
here at our site and because of you have trust on us we are giving you our best administrations to you. We have built up this website page
for you to encourage our cherished clients who have high capabilities, abilities and experience and want to work abroad in various nations like Saudi Arabia, KSA, UAE,
Canada, UK, USA, Germany, and Korea and so forth.
Most recent Overseas Jobs in Pakistan 2020
Here at this International Jobs page of our site,
we'll update you with all the most recent employments of various nations regularly in which you'll have all the data identified with the activity like the last date to apply,
talk with date, scene and all the data the is fundamental for an applicant.
The International Jobs includes the occupations for a global vocation and other worldwide work open doors for the competitors.
Quest for worldwide and abroad employments over the world and go for your next activity today!