ম ন জু আ রা বে গ ম
আগামী ৭ জুন ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হতে যা”েছ। ১ লাখ ৬১ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা হবে বলে জানা যায়। এবারের বাজেটে কৃষি, বিদ্যুৎ, স্বা¯’্য, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে অগ্রাধিকার দেয়া হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সর্বো”চ অগ্রাধিকার দেয়া হ”েছ বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে। এটি আমাদের জন্য আশার কথা। কৃষি, সেচ শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তিসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। বর্তমান সরকারের দিন বদলের সনদে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অর্থহীন। দেশের অর্থনীতির প্রাণ হ”েছ কৃষি ও শিল্প এবং এর চালিকাশক্তি হ”েছ বিদ্যুৎ বা জ্বালানি।
জনসংখ্যা দ্র“তগতিতে বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন হ”েছ আবাসনের। আবাদি জমির পরিমাণ কমে যা”েছ। কৃষিতে অধিক চাপের ফলে কর্মসং¯’ানের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। বেকারের হার ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হলে কৃষির পাশাপাশি শিল্পের ওপর অধিক গুর“ত্ব আরোপ করতে হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প খাত গুর“ত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ১৯৮০-৮১ সময়কালে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান যেখানে ছিল ১৭.৩১ শতাংশ সেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ২৯.৭৩ শতাংশ। বর্তমানে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি ২৪.৭৩ শতাংশ। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০২১ এর আওতায় দেশে একটি শক্তিশালী শিল্প খাত গড়ে তোলার জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের কমপক্ষে ৩৫.৪০ শতাংশ এবং এ খাতের মোট কর্মসং¯’ান ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে ২০১৩ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হলে এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের বর্তমান অবদান ৮.২৫ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে হলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ বৃহৎ শিল্পের চেয়ে ক্ষুদ্র শিল্প অধিক শ্রমঘন এবং স্বল্প পুঁজিনির্ভর। স্বল্প পুঁজিতে অধিক কর্মসং¯’ানের সুযোগ রয়েছে এ খাতে। অথচ দেখা যা”েছ শিল্প খাতের মোট বরাদ্দের মাত্র ২ শতাংশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে দেয়া হ”েছ, যা দ্বারা ২০২১ সালের মধ্যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনভাবেই সম্ভব নয়। শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজন অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এ জন্য এবারের বাজেটে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ রাখতে হবে। বরাদ্দ শুধু বৃদ্ধি করলেই চলবে না, বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে যথাসময়ে ছাড় এবং যথাযথভাবে এর বাস্তবায়ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যথাসময়ে অর্থছাড় ও মনিটরিংয়ের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না কিংবা হলেও প্রকল্প ব্যয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও দক্ষ, প্রশিক্ষিত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জনবলের অভাবেও অনেক সময় বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবায়ন অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এক কথায় বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হলে এর পেছনের কারণগুলো খতিয়ে দেখে সমস্যা সমাধানের ব্যব¯’া নিতে হবে। বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে এ খাতকে রক্ষা করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে নির্ধারিত আয়ের মানুষ প্রতিনিয়ত হিমশিম খা”েছ। ফলে কমে যা”েছ সঞ্চয়। সঞ্চয় কম হওয়ার ফলে বিনিয়োগও কমে যা”েছ। এ জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে এ খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। বাজেটের সঙ্গে শিল্পনীতির কোন সমন্বয় নেই। শিল্পনীতি-২০১০ এ বলা হয়েছেÑ উৎপাদনশীল খাতে কর্মসং¯’ান সৃষ্টি করা, নারীকে শিল্পায়ন-প্রক্রিয়ার মূল ধারায় নিয়ে আসা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পুঁজিঘন শিল্পের পরিবর্তে শ্রমঘন শিল্প ¯’াপনের দিকে অধিক গুর“ত্ব দিয়ে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের প্রসারের পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়াও শিল্প ইউনিট ¯’াপন ও পরিচালনার জন্য যে সব এলাকায় গ্যাস সংযোগ নেই সে সব এলাকায় গ্যাস সংযোগসহ গুর“ত্বপূর্ণ অবকাঠামো ¯’াপনের প্রাধিকার দেয়া হবে এবং সবচেয়ে অনুন্নত এলাকায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় শিল্প ¯’াপনের জন্য ব্যপক অবকাঠামোগত সুবিধাসহ প্রণোদনার ব্যব¯’া করা হবে। শিল্পনীতিতে উল্লেখ আছেÑ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারক বিসিক কর্তৃক পরিচালিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাসহ এর সার্বিক কার্যক্রম আরও শক্তিশালী এবং মাইক্রো শিল্পের ক্রমবিকাশ ত্বরান্বিত করা হবে। কিš‘ বিগত বছরগুলোয় দেখা যায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতকে তেমন অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় না। দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারি খাতের মুখ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ১৯৫৭ সাল থেকে শিল্পায়ন তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে আসছে। এ ছাড়া দেশের জাতীয় পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এযাবৎ বিসিক বিভিন্ন গুর“ত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নসহ সারাদেশে ৭৪টি শিল্পনগরী গড়ে তুলেছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ইউনিটসহ রফতানিমুখী শিল্প ইউনিট ¯’াপন করা হয়েছে ৭৮২টি; যার বার্ষিক মূল্য ১৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত বিসিকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র শিল্প ইউনিট ¯’াপন করা হয়েছে ৯৪ হাজার এবং কুটির শিল্প ৬ লাখ ৩৭ হাজারটি। কর্মসং¯’ান হয়েছে ৩৩ লাখ ২১ হাজার জনের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার রূপকল্প-২০২১ গ্রহণ এবং এর আওতায় ২০২১ সাল নাগাদ একটি শক্তিশালী শিল্প খাত গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান ২৮ থেকে ৪০ শতাংশ এবং কর্মসং¯’ান ১৬ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে সম্প্রতি ‘রূপকল্প-২০২১ ও বিসিক : সম্ভাবনা এবং করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বিসিক কর্তৃক আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে শিল্পমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা উপ¯ি’ত ছিলেন। এই বিশেষজ্ঞরা দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে বিসিকের কার্যক্রম কিভাবে আরও গতিশীল ও সম্প্রসারিত করা যায় সে বিষয়ে এর বিদ্যমান সমস্যাগুলোর আলোকে বেশ কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করেন। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে শিল্পোন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে এবং সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তাসহ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করা যাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতে বলা হয়েছেÑ এসএমই খাতে ঋণ প্রদানে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ খাতের মোট বরাদ্দের ন্যূনতম ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের অনুকূলে রাখা হবে এবং তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সুদের হার হবে ১০ শতাংশ। কিš‘ বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ শতাংশ হারে সুদে ঋণ অনেক ব্যাংক প্রদান করছে না বলে জানা যায়। ব্যাংকগুলো যে কোন ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ সুদ দাবি করছে। অর্থ সং¯’ানের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছেন না। নারীরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে গুর“ত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দ্বারা নারীদের সহায়তা করতে পারলে দেশের অর্থনীতির চাকা আরও সচল এবং অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হতো। কাজেই আসছে বাজেটে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতকে অধিকতর গুর“ত্ব প্রদান করে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসং¯’ান বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নীতিনির্ধারকরা এগিয়ে আসবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মনজু আরা বেগম : সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি
সড়হলঁধৎধ২০০৬@ুধযড়ড়.পড়সক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং এবারের বাজেট
ম ন জু আ রা বে গ ম
আগামী ৭ জুন ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হতে যা”েছ। ১ লাখ ৬১ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা হবে বলে জানা যায়। এবারের বাজেটে কৃষি, বিদ্যুৎ, স্বা¯’্য, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে অগ্রাধিকার দেয়া হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সর্বো”চ অগ্রাধিকার দেয়া হ”েছ বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে। এটি আমাদের জন্য আশার কথা। কৃষি, সেচ শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তিসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। বর্তমান সরকারের দিন বদলের সনদে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অর্থহীন। দেশের অর্থনীতির প্রাণ হ”েছ কৃষি ও শিল্প এবং এর চালিকাশক্তি হ”েছ বিদ্যুৎ বা জ্বালানি।
জনসংখ্যা দ্র“তগতিতে বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন হ”েছ আবাসনের। আবাদি জমির পরিমাণ কমে যা”েছ। কৃষিতে অধিক চাপের ফলে কর্মসং¯’ানের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। বেকারের হার ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হলে কৃষির পাশাপাশি শিল্পের ওপর অধিক গুর“ত্ব আরোপ করতে হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প খাত গুর“ত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ১৯৮০-৮১ সময়কালে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান যেখানে ছিল ১৭.৩১ শতাংশ সেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ২৯.৭৩ শতাংশ। বর্তমানে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি ২৪.৭৩ শতাংশ। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০২১ এর আওতায় দেশে একটি শক্তিশালী শিল্প খাত গড়ে তোলার জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের কমপক্ষে ৩৫.৪০ শতাংশ এবং এ খাতের মোট কর্মসং¯’ান ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে ২০১৩ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হলে এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের বর্তমান অবদান ৮.২৫ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে হলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ বৃহৎ শিল্পের চেয়ে ক্ষুদ্র শিল্প অধিক শ্রমঘন এবং স্বল্প পুঁজিনির্ভর। স্বল্প পুঁজিতে অধিক কর্মসং¯’ানের সুযোগ রয়েছে এ খাতে। অথচ দেখা যা”েছ শিল্প খাতের মোট বরাদ্দের মাত্র ২ শতাংশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে দেয়া হ”েছ, যা দ্বারা ২০২১ সালের মধ্যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনভাবেই সম্ভব নয়। শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজন অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এ জন্য এবারের বাজেটে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ রাখতে হবে। বরাদ্দ শুধু বৃদ্ধি করলেই চলবে না, বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে যথাসময়ে ছাড় এবং যথাযথভাবে এর বাস্তবায়ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যথাসময়ে অর্থছাড় ও মনিটরিংয়ের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না কিংবা হলেও প্রকল্প ব্যয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও দক্ষ, প্রশিক্ষিত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জনবলের অভাবেও অনেক সময় বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবায়ন অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এক কথায় বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হলে এর পেছনের কারণগুলো খতিয়ে দেখে সমস্যা সমাধানের ব্যব¯’া নিতে হবে। বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে এ খাতকে রক্ষা করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে নির্ধারিত আয়ের মানুষ প্রতিনিয়ত হিমশিম খা”েছ। ফলে কমে যা”েছ সঞ্চয়। সঞ্চয় কম হওয়ার ফলে বিনিয়োগও কমে যা”েছ। এ জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে এ খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। বাজেটের সঙ্গে শিল্পনীতির কোন সমন্বয় নেই। শিল্পনীতি-২০১০ এ বলা হয়েছেÑ উৎপাদনশীল খাতে কর্মসং¯’ান সৃষ্টি করা, নারীকে শিল্পায়ন-প্রক্রিয়ার মূল ধারায় নিয়ে আসা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পুঁজিঘন শিল্পের পরিবর্তে শ্রমঘন শিল্প ¯’াপনের দিকে অধিক গুর“ত্ব দিয়ে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের প্রসারের পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়াও শিল্প ইউনিট ¯’াপন ও পরিচালনার জন্য যে সব এলাকায় গ্যাস সংযোগ নেই সে সব এলাকায় গ্যাস সংযোগসহ গুর“ত্বপূর্ণ অবকাঠামো ¯’াপনের প্রাধিকার দেয়া হবে এবং সবচেয়ে অনুন্নত এলাকায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় শিল্প ¯’াপনের জন্য ব্যপক অবকাঠামোগত সুবিধাসহ প্রণোদনার ব্যব¯’া করা হবে। শিল্পনীতিতে উল্লেখ আছেÑ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারক বিসিক কর্তৃক পরিচালিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাসহ এর সার্বিক কার্যক্রম আরও শক্তিশালী এবং মাইক্রো শিল্পের ক্রমবিকাশ ত্বরান্বিত করা হবে। কিš‘ বিগত বছরগুলোয় দেখা যায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতকে তেমন অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় না। দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারি খাতের মুখ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ১৯৫৭ সাল থেকে শিল্পায়ন তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে আসছে। এ ছাড়া দেশের জাতীয় পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এযাবৎ বিসিক বিভিন্ন গুর“ত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নসহ সারাদেশে ৭৪টি শিল্পনগরী গড়ে তুলেছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ইউনিটসহ রফতানিমুখী শিল্প ইউনিট ¯’াপন করা হয়েছে ৭৮২টি; যার বার্ষিক মূল্য ১৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত বিসিকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র শিল্প ইউনিট ¯’াপন করা হয়েছে ৯৪ হাজার এবং কুটির শিল্প ৬ লাখ ৩৭ হাজারটি। কর্মসং¯’ান হয়েছে ৩৩ লাখ ২১ হাজার জনের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার রূপকল্প-২০২১ গ্রহণ এবং এর আওতায় ২০২১ সাল নাগাদ একটি শক্তিশালী শিল্প খাত গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান ২৮ থেকে ৪০ শতাংশ এবং কর্মসং¯’ান ১৬ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে সম্প্রতি ‘রূপকল্প-২০২১ ও বিসিক : সম্ভাবনা এবং করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বিসিক কর্তৃক আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে শিল্পমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা উপ¯ি’ত ছিলেন। এই বিশেষজ্ঞরা দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে বিসিকের কার্যক্রম কিভাবে আরও গতিশীল ও সম্প্রসারিত করা যায় সে বিষয়ে এর বিদ্যমান সমস্যাগুলোর আলোকে বেশ কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করেন। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে শিল্পোন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে এবং সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তাসহ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করা যাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতে বলা হয়েছেÑ এসএমই খাতে ঋণ প্রদানে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ খাতের মোট বরাদ্দের ন্যূনতম ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের অনুকূলে রাখা হবে এবং তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সুদের হার হবে ১০ শতাংশ। কিš‘ বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ শতাংশ হারে সুদে ঋণ অনেক ব্যাংক প্রদান করছে না বলে জানা যায়। ব্যাংকগুলো যে কোন ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ সুদ দাবি করছে। অর্থ সং¯’ানের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছেন না। নারীরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে গুর“ত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দ্বারা নারীদের সহায়তা করতে পারলে দেশের অর্থনীতির চাকা আরও সচল এবং অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হতো। কাজেই আসছে বাজেটে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতকে অধিকতর গুর“ত্ব প্রদান করে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসং¯’ান বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নীতিনির্ধারকরা এগিয়ে আসবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মনজু আরা বেগম : সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি
সড়হলঁধৎধ২০০৬@ুধযড়ড়.পড়স
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন