বি ভু র ঞ্জ ন স র কা র
পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হলে, প্রথমে যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সেটা হল দেশের অব¯’া কী? দেশে কী হ”েছ? পরি¯ি’তি কোন দিকে যা”েছ? বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা? জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসে যদি প্রতিহিংসাপরায়ণতার রাজনীতি শুর“ করে তাহলে পরি¯ি’তি কী দাঁড়াবে? কোন সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেÑ সে প্রশ্নের ফয়সালা না হলে দেশে আদৌ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি? নির্বাচন যদি না হয়, তাহলেই বা কী হবে?
এই প্রশ্নগুলো যে সচেতন প্রায় সবাইকে আলোড়িত করছে তাতে সন্দেহ নেই। প্রশ্নগুলো প্রায় সবার মনে থাকলেও জবাব সম্ভবত কারোই সঠিক জানা নেই। তবে একেক জন একেক প্রশ্নের একেক রকম জবাব দিয়ে থাকেন। যেহেতু দেশের রাজনীতি প্রধান দুই ধারায় বিভক্ত, সেহেতু জবাবদাতাদেরও দ্বিধাবিভক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেশের সামগ্রিক পরি¯ি’তি নিয়ে অনেকে হতাশা প্রকাশ করলেও কেউ কেউ আবার যথেষ্ট আশাবাদী। যারা আশাবাদী তাদের কথা হল, দেশের অব¯’া নিয়ে যারা হাহাকার করেন তারা কেবল খারাপটাই দেখেন। রাজনৈতিক দলের আচার-আচরণ নিয়েই কেবল তারা পরি¯ি’তি বিচার করে থাকেন বলে দেশের ভালো চিত্রটা তাদের নজরে আসে না। কৈলাসটিলা ও হরিপুরে তেলক্ষেত্র আবিষ্কার, জয়পুরহাটে চুনাপাথর পাওয়ার খবর কম আশা জাগানিয়া নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও কোন মানুষ অনাহারে নেই। একেবারেই আয়-উপার্জন নেইÑ এমন মানুষের সংখ্যা দেশে খুব কম। রাজনীতিবিদরা সারাক্ষণ কলহ-কোন্দলে ব্যস্ত থাকলেও দেশ ¯’বির হয়ে নেই। হরতাল, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, মারামারি-হানাহানির চিত্র যেমন আছে, তেমনি আছে কৃষিতে আমাদের দেশের উদ্যমী ও পরিশ্রমী কৃষকদের বিপুল সাফল্যের কাহিনী। দেশে খাদ্যশস্যের বাম্পার ফলন হ”েছ। দেশে উৎপাদিত ধান দিয়েই দেশবাসীর খাদ্য চাহিদা মেটানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশকে হয়তো আর বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হবে না।
শুধু কি কৃষিতেই উজ্জ্বলতা দেখা যা”েছ? না, শিক্ষাতেও সাফল্য আছে। এই যে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হ”েছ, দারিদ্র্যের সঙ্গে, নানা ধরনের প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে হতদরিদ্র কৃষক-ক্ষেতমজুর-শ্রমজীবী পরিবারের অসংখ্য মেধাবী তর“ণ-তর“ণী সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি পাস করছে, এটা কি কোন ভালো ইঙ্গিতই দি”েছ না? ছাত্রলীগ নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দখলবাজিসহ নানা অপকর্ম করে চলেছে। সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তবে লক্ষ্য করার বিষয় এটাই, ওই দুর্বৃত্তরা কিš‘ সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি, গ্রাস করতে পারেনি। তারা সরকারের ভাবমূর্তিতে কালি মেখে দি”েছ অবশ্যই। তাই বলে তারা তছনছ করে দিতে পারছে না পুরো শিক্ষা ব্যব¯’াকে। প্রথমবারের মতো দেশে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে ধীরগতি আছে, সরকারের আরও নানা সীমাবদ্ধতা আছে, কিš‘ শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে না। তারা ভালোভাবে লেখাপড়া করছে। পরীক্ষা দি”েছ। ভালো ফল করছে। পাবলিক পরীক্ষাগুলো সময়মতো অনুষ্ঠিত হওয়া, সময়মতো ফলাফল ঘোষণা, শিক্ষাবর্ষের শুর“তেই শিক্ষার্থীদের হাতে কয়েক কোটি বই পৌঁছে যাওয়াÑ এগুলো তো কোনভাবেই পিছিয়ে পড়া কিংবা ¯’বিরতার চিত্র নয়।
অপহরণ-গুম, হত্যা-আতংকে যখন আমরা অনেকেই উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় অতিক্রম করছি, যখন মনে করা হ”েছ দেশটা আর নিরাপদে বসবাস করার মতো থাকছে নাÑ তখনই আমাদের দেশের দুই সাহসী নারী নিশাত মজুমদার এবং ওয়াসফিয়া নাজরীন পৃথিবীর সর্বো”চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট বিজয় করে যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তার কোন তুলনাই হয় না। ১৯ মে সকালে নিশাত মজুমদার বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টে পা রাখেন। এর মাত্র সাত দিন পর ২৬ মে ওয়াসফিয়া পা রাখেন এভারেস্টে, তার সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশের আরেক কৃতী তর“ণ এমএ মুহিত। মুহিত এর আগেও এভারেস্ট জয় করেছেন। নিশাত-ওয়াসফিয়ার এভারেস্ট জয়ের ঘটনাটিকে মোটেও হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। যে দেশে মেয়েরা এখনও নানা নিগ্রহ-নির্যাতনের শিকার, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পাশাপাশি পরিবারে-সমাজে যাদের অবহেলা-অমর্যাদার বির“দ্ধেও লড়তে হ”েছ, সেই মেয়েরাই শুধু ঘর থেকে বের হওয়া নয়Ñ একেবারে এভারেস্ট জয় করে ফেরার ঘটনাকে অসামান্য সাফল্য হিসেবেই চিহ্নিত করতে হবে। পিছুটান যেমন সত্যি, তেমনি এগিয়ে যাওয়ার বিরল ঘটনাও তো ঘটছে! কাজেই দেশ নিয়ে, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ার কিছু নেই। মেঘ দেখে আমরা ভয় করছি, আড়ালে যে তার সূর্য হাসছে তা দেখছি না বা মনে রাখছি না। কেউ হয়তো বলতে পারেন, ভালোর চেয়ে খারাপের সংখ্যা যখন বেশি হয়, ভালোকে যখন চাপা দিয়ে ফেলে খারাপ তখন কি আশাবাদী হয়ে ওঠা যায়? এ প্রশ্নের জবাবে আবার কেউ হয়তো বলবেন, না, খারাপের পরিমাণ বেশি নয়। বরং খারাপ নিয়ে প্রচারটা বেশি। নেতিবাচক খবরগুলো গণমাধ্যমে বেশি জায়গা পায়। ভালো খবর, মানুষের সাফল্যের খবর নিয়ে প্রচার-প্রচারণা কম বলেই চোখের সামনে খারাপটাই দাপাদাপি করে।
তবে হ্যাঁ, দেশ নিয়ে যারা আশাবাদী তারাও কিš‘ এটা মনে করেন যে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল তাদের দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে, পুরনো ধারায় রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে দেশ কিš‘ সত্যি এক সময় অচল হয়ে পড়বে। সব কিছু যদি খারাপ মানুষের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, ভালো মানুষরা যদি নিজেদের কেবলই গুটিয়ে নিতে থাকেন, তাহলে চরম হতাশাই এক সময় সবাইকে গ্রাস করবে।
প্রশ্ন হল, রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশু কোন সম্ভাবনা দেখা যা”েছ কি? রাজনীতিবিদরা কি তাদের প্রতি মানুষের মনোভাব সামান্য হলেও বোঝার চেষ্টা করছেন? নাকি, তারা এখনও মনে করেন যে, দেশের মানুষ তাদের বোলচালে খুশিতে আÍহারা হয়ে তাদের প্রতি আজীবন আনুগত্য দেখিয়ে যাবে? ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কি জানেন, তিনি যখন টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে চিবিয়েচিবিয়ে নীতিবাক্য উ”চারণ করেন, দুর্নীতি-অনিয়মের বির“দ্ধে কথা বলেন, তখন মানুষের মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়? এমনকি নিজ দলের কর্মীরাও বা তাকে কোন চোখে দেখে সেটা কি তিনি জানেন না? আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বালখিল্য মন্তব্য করেন, তখনই বা মানুষের মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা যদি বুঝতেন সৈয়দ আশরাফ!
নীতিহীন ও র“চিহীন রাজনীতিবিদরা দেশের একটা বড় সমস্যা। অথচ এই সমস্যা থেকে রাতারাতি বেরিয়ে আসার কোন পথ আছে বলে মনে হয় না। আমাদের এখন অনেক কিছুই অনি”ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে হ”েছ, মন না চাইলেও অনেক কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে চলতে হ”েছ। এই মেনে নেয়া ও মানিয়ে চলা যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে, তখন মানুষ অবশ্যই প্রতিবাদী আচরণ করবে, র“খে দাঁড়াবে। আর তখনই ঘটবে সত্যিকার পরিবর্তন। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করার বিকল্প নেই।
দুই
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান সম্ভবত বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান বিরোধী দল যখন সংসদ বর্জন অব্যাহত রেখেছে, সংসদের বাইরে সরকারকে গালাগালি করা ছাড়া অন্য কোন জাতীয় ইস্যুতে কথা বলছে না, তখন আকবর আলি খান প্রতিদিনই কোন না কোন ইস্যুতে মতামত দি”েছন। গণমাধ্যমে তা গুর“ত্ব দিয়ে প্রচার করা হ”েছ। ক’দিন আগে এক সভায় তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের সফলতা নির্ভর করছে দুটি অর্জনের ওপর। দুটি অর্জনের অন্যতমটি হলÑ সরকারের মেয়াদ শেষে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা। যদি এটি করতে না পারে তাহলে মহাজোট সরকারের সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে এবং দেশের জন্য সেটা হবে বড় ধরনের অকল্যাণকর। তিনি আরও বলেছেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ আছে আর দেড় বছর। এর পর নির্বাচন করতেই হবে। গণতান্ত্রিক ব্যব¯’ায় নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের আর কোন পথ নেই। প্রশ্ন হ”েছ, কোন ব্যব¯’ায় পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে? উ”চ আদালতের রায়ের অজুহাত দেখিয়ে বর্তমান সরকার তড়িঘড়ি সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যব¯’া বাতিল করে দিয়েছে। বিএনপি বলছে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না, নির্বাচন হতেও দেবে না। আওয়ামী লীগের বক্তব্য হল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন মৃত, ওকে আর জীবিত করা যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক বিতর্ক হয়েছে, হ”েছ এবং হবেও। আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যব¯’া চালুর আন্দোলন করেছিল, তখন বিএনপি ছিল এর বির“দ্ধে। এখন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে, আর আওয়ামী লীগ তার বির“দ্ধে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে দেশের রাজনীতি সাংঘর্ষিক অব¯’ায় এসে দাঁড়িয়েছে। আকবর আলি খানসহ অনেকেই বলছেন, বড় দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে পরি¯ি’তি খারাপের দিকেই যাবে। আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার কোন সুযোগ আছে কিনা, সেটা নিয়েও সংশয় আছে অনেকের মধ্যেই। বিএনপি নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যব¯’া পুনরায় চালু করতে বাধ্য হবে আওয়ামী লীগ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগবে। ১০ জুনের মধ্যে সরকার এটা না মানলে ১১ জুন আন্দোলনের ‘কঠোর’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হ”েছ। অন্যদিকে, সরকার পক্ষের দৃঢ় অব¯’ান হল কোনভাবেই আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে না যাওয়া। সরকারকে বাধ্য করার মতো আন্দোলন করার ক্ষমতা ও শক্তি বিএনপির নেই। আন্দোলনের নামে বিএনপি কিছু বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারবে, তার বেশি কিছু নয়। হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও সচিবালয়ে বোমা হামলার মামলায় বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের প্রায় অর্ধশত নেতাকে গ্রেফতার করায় বিএনপি যেভাবে হতবুদ্ধি বা বিহ্বল হয়ে পড়েছে তা থেকে সরকার মনে করছে, বিএনপির পক্ষে ‘কঠোর’ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। তাছাড়া কঠোর কর্মসূচি বলতেই বা বিএনপি কী বোঝা”েছ? ‘বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই, সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাত হবে’ কিংবা ‘বর্তমান সরকারের পরিণতি পঁচাত্তরের মতো হবে’Ñ এরকম হুমকি-ধামকি বিএনপি নেতারা অসংখ্যবার দিয়েছেন। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক শাসন তথা ক্ষমতা জবরদখলকারী অগণতান্ত্রিক শাসনের বির“দ্ধে আন্দোলনে অভ্যস্ত ও অভিজ্ঞ বলেই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যব¯’ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তারা সারাক্ষণই আন্দোলনের মাঠে থাকে কিš‘ কোন সাফল্য অর্জন করতে পারে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে যদি ধরে নেয়া হয় যে, বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না, তাহলে কি আওয়ামী লীগের অব¯’ান মেনে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে? বিএনপি যদি সত্যি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে সেই নির্বাচন কি দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে? দেশের মানুষের কথা বাদ দিলেও বিদেশী বন্ধুরা তো সবার অংশগ্রহণেই নির্বাচন চা”েছন। সবার অংশগ্রহণটা কীভাবে নিশ্চিত হবেÑ সেটা কেউ বলতে পারছেন না। নানা ফর্মুলার কথা শোনা গেলেও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা কোনটা সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।
মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সম্প্রতি রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার কথা বলে যথেষ্ট বিতর্ক ও উত্তেজনা ছড়িয়েছেন। বিএনপির কোন কোন নেতা কঠোর ভাষায় ইনুর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, খালেদাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ইনু কে? খালেদা জিয়া কেন, অন্য যে কাউকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ক্ষমতা ইনুর আছেÑ এটা নিশ্চয়ই কেউই মনে করেন না। তবে ইনু এই মাইনাসের কথাটা খামোখা বলেছেন বলেও কি মনে হয়? ইনু তার বক্তব্য ব্যাখ্যা করে বলেছেন, দেশে গণতন্ত্রের জন্য মহাবিপদ হ”েছ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা, সাম্প্রদায়িকতা, নারী ধর্ষণ ও জঙ্গিবাদ। এই চারটি সমস্যাকে বেগম খালেদা জিয়া জিইয়ে রেখেছেন। তিনি এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। তাকে মাইনাস করলে এ দেশে গণতন্ত্র লাভবান হবে। তাকে এক শর্তে আমরা রাজনীতিতে থাকতে দিতে পারি, যদি তিনি এসব ছেড়ে রাজনীতিতে থাকেন, ওই সব গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
পরবর্তী নির্বচন কোন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে সেটা যেমন প্রশ্ন, তেমনি যুদ্ধাপরাধ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি প্রশ্নে বিএনপি তথা বেগম খালেদা জিয়ার অব¯’ান কী হবে সে প্রশ্নও আগামী নির্বাচনের আগে বড় করেই সামনে আসবে। জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নির্বাচন করলে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ যে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবেÑ সে আশংকা তো অনেকের মধ্যেই আছে। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে ইনুর বক্তব্যকে গুর“ত্বহীন বা কৌতুক বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
বিভুরঞ্জন সরকার : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
নরনযঁ৫৪@ুধযড়ড়.পড়স
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন