ইফতেখার আহমেদ টিপু :
রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কই যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ওয়াসার উন্নয়ন কাজসহ নানা সেবা প্রতিষ্ঠানের নামে চলছে রাস্তা কাটার কাজ। মাসের পর মাস কাজ চলার পরিণামে বেশক'টি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়কে যানবাহন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় ৫শ' কোটি টাকা ব্যয় করেও রাজধানীর রাস্তাঘাট চলাচলযোগ্য রাখতে পারছে না রাস্তাঘাট সংস্কারের দায়িত্ব পালন কারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা জেলা পরিষদ, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড করে। যানজটেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাস্তা কাটাকাটির ঘটনা। মালিবাগ থেকে বারিধারা পর্যন্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির অবস্থা এতই খারাপ যে, এ পথে চলাচল জীবন ঝুঁকির নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালিবাগ থেকে বারিধারার রাস্তার পাশে বেশক'টি আবাসিক এলাকা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয়, কূটনৈতিক মিশনও অবস্থিত। অথচ দীর্ঘদিন এ রাস্তায় চলছে কাটাকাটির কাজ। খানাখন্দে ভরে গেছে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি। রাস্তার এ জীর্ণদশার জন্য যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দেখা দিচ্ছে যানজট। যে রাস্তাটি অতিক্রম করতে ১০ মিনিট সময় লাগার কথা সেখানে সময় লাগছে গড়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। কর্তৃপক্ষীয় দায়িত্বহীনতার নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সড়কটি। শুধু মালিবাগ-বারিধারা সড়ক নয়, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর আরও বেশকটি সড়কে চলছে একই ধরনের কাটাকাটির কাজ। কখনো বৃষ্টি হলে জনভোগান্তি চরমে দাঁড়ায়। রাস্তা কাটা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও তা মানার যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, তার টার্গেটে পরিণত হচ্ছে সরকার। সরকারের দায়িত্বশীলতাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে থাকা রাজধানীর সড়কগুলো আগে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায়ই রয়েছে। ফলে এসব সড়কে যানবাহন চলাচল তো বটেই, পায়ে হেঁটে চলতেও প্রতিনিয়ত বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশন নাগরিকদের কাছ থেকে নিয়মিত ট্যাক্স আদায় করলেও নাগরিক সুবিধা বা সেবাদানের ক্ষেত্রে তাদের কার্পণ্য একটি সুবিদিত সত্য।
রাজধানীর মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়ার পেছনে আরেকটি কারণ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কেউই কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না। ইচ্ছেমত রাস্তা দখল করে বাড়ি নির্মাণকাজ চালায় । এমনকি রাস্তার ওপর রড কাটা ও সোজা করাসহ ভবন নির্মাণের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়। এছাড়া ইট ভাঙার কাজও সম্পাদন করা হয় রাস্তার উপর। ফলে গলি থেকে শুরু করে বড় বড় সড়কগুলোতেও দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ নগরবাসীকে। এমনিতেই রাস্তার স্বল্পতা ও ভাঙ্গাচোরা হওয়ায় পথচারীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। সে সঙ্গে নির্মাণাধীন ভবনের মালামাল রাখা ও রাস্তার ওপর কাজ করায় পড়তে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তিতে। রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী রেখে ভবনের কাজ করা এখন বাড়িওয়ালাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়না নিরিহ মানুষ, বরং অভিযোগকারীকে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। রাস্তার উপর যত্র তত্র গাড়ি পার্কিং করা যেন মানুষের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই নিজেরটা ভাবছে জনদুর্ভোগের কথা কারো মাথায় থাকে না। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারকে পালন করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
হালকা বৃষ্টি নামলেই রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলার মোড়, মৎস্য ভবন, মৌচাক, মালিবাগ, বনশ্রী, গোপীবাগ, মানিকনগর, মুগদা, কমলাপুর, চামেলীবাগ, রাজারবাগ, মান্ডা, গোড়ান, খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা, জিগাতলা, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পুরান ঢাকার হোসেনী দালান, আজিমপুর, কাপ্তানবাজার সড়ক, তাঁতীবাজারের চার রাস্তার মোড়, নয়াবাজার, ফ্রেঞ্চ রোড, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে যায়। আর বর্ষা মওসুমে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মানুষকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
শুধু রাজধানীই নয়, সারা দেশের বেহাল দশা। আর এই পরিস্থিতি রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি। তা সত্ত্বেও সবার আশা ছিল, বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে সড়কগুলোর পরিস্থিতি চলনসই হবে। সরকারের আন্তরিকতায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক উন্নতি লাভ করবে। এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা দরকার। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতিপ্রয়োজনীয় সড়কপথগুলোর আশু উন্নয়ন দরকার। কাজগুলো সঠিকভাবে ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য টেকসই পরিকল্পনাও দরকার। সরকারি বরাদ্দ যত্রতত্র যেনতেনভাবে খরচ করলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে না, সরকারও প্রশংসিত হবে না। এ ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নতুনভাবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা সহকারে এগিয়ে যেতে হবে সরকারকে।
আমরা জানি রাস্তা কাটা ও খোঁড়াখুঁড়ির কাজগুলো জনস্বার্থে করা হয়। তারপরও কর্তৃপক্ষকে মাথায় রাখতে হবে দ্রুত যাতে কাজ শেষ হয়। রাজধানীবাসীকে ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা কাটার যথেচ্ছতা বন্ধ করা দরকার। নিজেদের সুনামের স্বার্থে সরকার এ ব্যাপারে সচেতন হবে, জনগণ এমনটিই প্রত্যাশা করে।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ, চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন