এমএ নোমান
সম্প্রতি একটি মার্কিন জরিপে দেখা গেছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা শব্দ হচ্ছে ‘হ্যালো’। বাংলাদেশে ধরনের কোনো জরিপ হলে আমার ধারণা, সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা শব্দ হিসেবে ‘মৌলবাদ’ প্রথম স্থান দখল করবে।
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং এর অনুসারীদের মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করার প্রবণতা নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর চর্চা ব্যাপক হয়েছে। নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করে কিছু লোককে দাড়ি, টুপি ও লম্বা জামাওয়ালা ব্যক্তিদের মৌলবাদী বলে নাক সিটকাতে দেখা যায়। এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার যে কয়েকটি দেশে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, সেখানে মুসলমানদের অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়, তবে তাদের ‘মৌলবাদ’-এর মোকাবিলা করতে হয় কিনা আমার জানা নেই।
প্রতিবছর টঙ্গির বিশ্ব এজতেমায় ২৫-৩০ লাখ লোকের সমাগম হয়। কিছুদিন আগে সরকারের আগ্রহে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যাপক তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তাতে নাকি উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তবলিগ জমাতের মুসল্লিদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তারা মাটির নিচের ও আসমানের ওপরের বিষয় নিয়েই রয়েছেন। মাঝখানের (জাগতিক) কিছু নিয়ে তাদের আগ্রহ কম।’ দাড়ি, টুপি আর লম্বা পাঞ্জাবিওয়ালা নিরীহ মুসল্লিদেরও যখন মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তখন অনেকেই বেশ কষ্ট পান।
গত ৯ মে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে মৌলবাদীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মৌলবাদীরা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা।
বিডিনিউজের এ সংক্রান্ত সংবাদের শেষে মন্তব্যের কলামে একজন পাঠক লিখেছেন, ‘মৌলবাদ, চরমপন্থী, জাসদ-গণবাহিনী, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট, সর্বহারা—এগুলো খারাপ শব্দ, কিন্তু এ শব্দগুলোর ধারণকারীরা যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তখন তারা ভালো, দেশপ্রেমিক। ১৯৯২-৯৫ সময়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যখন জামায়াত নেতা গোলাম আযমসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্দোলন গড়ে তুললেন—প্রথম দিকে আ’লীগও এ আন্দোলনে যোগ দেয়। কিন্তু পরে আ’লীগ জাহানারা ইমামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে জামায়াতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। জামায়াতের শীর্ষ নেতা আজকের যুদ্ধাপরাধী (!) মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে আ’লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা একটেবিলে বসে অসংখ্য বৈঠক করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যুগপত্ আন্দোলনও করেছেন। তখন জামায়াত মৌলবাদী দল ছিল না। ২০০৬ সালে আ’লীগ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৫ দফা চুক্তি করে। ওই চুক্তি করার সময় শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক মৌলবাদী ছিলেন না। পরে আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও অনিসলামিক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করায় রাতারাতি এরা সবাই মৌলবাদী হয়ে যান। ...কাজেই প্রধানমন্ত্রীর মৌলবাদবিরোধী কথাবার্তায় জাতি অবাকই হয়।’
আমাদের দেশে সশস্ত্র সংগ্রামের নামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মানুষ হত্যার রাজনীতি ও প্রতিক্রিয়াশীল তত্পরতা চালু হয় স্বাধীনতার পরপর। তথ্যাভিজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, স্বাধীনতার পরপর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে যখন একটি পরিবারের হাতে দেশ জিম্মি হয়ে পড়ে, মানুষের ন্যূনতম অধিকারটুকুও ভূলুণ্ঠিত হতে থাকে, তখনই জাসদসহ বামপন্থী দলগুলো প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করতে থাকে। রক্ষীবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিরাজ সিকদারসহ বামপন্থী ও জাসদের ৪০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে। ওই অবস্থায় শেখ মুজিবকে উত্খাতের উদ্দেশ্যেই গণবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে কিডন্যাপ করতে গিয়ে কর্নেল তাহেরের ভাই আবু ইউসুফসহ গণবাহিনীর সশস্ত্র ৭ নেতা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।
গণবাহিনী, সর্বহারা, চরমপন্থী, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসী তত্পরতা সেই যে শুরু হয়েছে, আজও তা থেমে নেই। থানার অস্ত্র লুট থেকে শুরু করে মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের কাহিনী প্রায়দিনই পত্রিকার শিরোনাম হয়। যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করেন কিংবা ধর্মচর্চা করেন, তাদের নামে আজ পর্যন্ত দেশের কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রপত্রিকায় দেখা যায়নি। জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইকে দেশের সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং প্রতিটি মসজিদের ইমাম বিপথগামী ও ইসলামের শত্রু হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ২৯ মে ঢাকার সিএমএম আদালতে সাংবাদিক ও আইনজীবীদের পেটানোর সময়ও পুলিশ চিত্কার করে সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের মৌলবাদী ও জেএমবি হিসেবে আখ্যায়িত করে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। নতুন করে পুলিশের মৌলবাদ ও জেএমবি তত্ত্ব ৩০ মে’র দৈনিকগুলোতে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। আবার সেই মৌলবাদ!!
লেখক : সাংবাদিক
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং এর অনুসারীদের মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করার প্রবণতা নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর চর্চা ব্যাপক হয়েছে। নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করে কিছু লোককে দাড়ি, টুপি ও লম্বা জামাওয়ালা ব্যক্তিদের মৌলবাদী বলে নাক সিটকাতে দেখা যায়। এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার যে কয়েকটি দেশে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, সেখানে মুসলমানদের অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়, তবে তাদের ‘মৌলবাদ’-এর মোকাবিলা করতে হয় কিনা আমার জানা নেই।
প্রতিবছর টঙ্গির বিশ্ব এজতেমায় ২৫-৩০ লাখ লোকের সমাগম হয়। কিছুদিন আগে সরকারের আগ্রহে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যাপক তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তাতে নাকি উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তবলিগ জমাতের মুসল্লিদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তারা মাটির নিচের ও আসমানের ওপরের বিষয় নিয়েই রয়েছেন। মাঝখানের (জাগতিক) কিছু নিয়ে তাদের আগ্রহ কম।’ দাড়ি, টুপি আর লম্বা পাঞ্জাবিওয়ালা নিরীহ মুসল্লিদেরও যখন মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তখন অনেকেই বেশ কষ্ট পান।
গত ৯ মে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে মৌলবাদীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মৌলবাদীরা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা।
বিডিনিউজের এ সংক্রান্ত সংবাদের শেষে মন্তব্যের কলামে একজন পাঠক লিখেছেন, ‘মৌলবাদ, চরমপন্থী, জাসদ-গণবাহিনী, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট, সর্বহারা—এগুলো খারাপ শব্দ, কিন্তু এ শব্দগুলোর ধারণকারীরা যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তখন তারা ভালো, দেশপ্রেমিক। ১৯৯২-৯৫ সময়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যখন জামায়াত নেতা গোলাম আযমসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্দোলন গড়ে তুললেন—প্রথম দিকে আ’লীগও এ আন্দোলনে যোগ দেয়। কিন্তু পরে আ’লীগ জাহানারা ইমামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে জামায়াতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। জামায়াতের শীর্ষ নেতা আজকের যুদ্ধাপরাধী (!) মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে আ’লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা একটেবিলে বসে অসংখ্য বৈঠক করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যুগপত্ আন্দোলনও করেছেন। তখন জামায়াত মৌলবাদী দল ছিল না। ২০০৬ সালে আ’লীগ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৫ দফা চুক্তি করে। ওই চুক্তি করার সময় শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক মৌলবাদী ছিলেন না। পরে আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও অনিসলামিক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করায় রাতারাতি এরা সবাই মৌলবাদী হয়ে যান। ...কাজেই প্রধানমন্ত্রীর মৌলবাদবিরোধী কথাবার্তায় জাতি অবাকই হয়।’
আমাদের দেশে সশস্ত্র সংগ্রামের নামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মানুষ হত্যার রাজনীতি ও প্রতিক্রিয়াশীল তত্পরতা চালু হয় স্বাধীনতার পরপর। তথ্যাভিজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, স্বাধীনতার পরপর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে যখন একটি পরিবারের হাতে দেশ জিম্মি হয়ে পড়ে, মানুষের ন্যূনতম অধিকারটুকুও ভূলুণ্ঠিত হতে থাকে, তখনই জাসদসহ বামপন্থী দলগুলো প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করতে থাকে। রক্ষীবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিরাজ সিকদারসহ বামপন্থী ও জাসদের ৪০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে। ওই অবস্থায় শেখ মুজিবকে উত্খাতের উদ্দেশ্যেই গণবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে কিডন্যাপ করতে গিয়ে কর্নেল তাহেরের ভাই আবু ইউসুফসহ গণবাহিনীর সশস্ত্র ৭ নেতা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।
গণবাহিনী, সর্বহারা, চরমপন্থী, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসী তত্পরতা সেই যে শুরু হয়েছে, আজও তা থেমে নেই। থানার অস্ত্র লুট থেকে শুরু করে মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের কাহিনী প্রায়দিনই পত্রিকার শিরোনাম হয়। যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করেন কিংবা ধর্মচর্চা করেন, তাদের নামে আজ পর্যন্ত দেশের কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রপত্রিকায় দেখা যায়নি। জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইকে দেশের সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং প্রতিটি মসজিদের ইমাম বিপথগামী ও ইসলামের শত্রু হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ২৯ মে ঢাকার সিএমএম আদালতে সাংবাদিক ও আইনজীবীদের পেটানোর সময়ও পুলিশ চিত্কার করে সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের মৌলবাদী ও জেএমবি হিসেবে আখ্যায়িত করে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। নতুন করে পুলিশের মৌলবাদ ও জেএমবি তত্ত্ব ৩০ মে’র দৈনিকগুলোতে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। আবার সেই মৌলবাদ!!
লেখক : সাংবাদিক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন