রবিবার, ২০ মে, ২০১২

মন্ত্রিত্বেও ব্যবসায়ী মনোভাব প্রয়োজন


নূর“ল ইসলাম বিএসসি
ব্যবসা করা ও মন্ত্রণালয় চালানো, চোখের সঙ্গে কানের যে দূরত্ব, ওইটুকুই। আমি কিছু বা¯—ব উদাহরণ দিয়ে আমার কথাটা পরিষ্কার করতে চাই। সবার আগে সব ব্যবসা যে ব্যবসা নয়, এ কথা পরিষ্কার করতে চাই।
মানুষ, সমাজ ও দেশের কল্যাণে অর্থ বা পণ্যের বিনিময়ে যে বেচাকেনা হয় তাকে মোদ্দাকথায় ব্যবসা বলা যায়। কেউ লেদ মেশিনে অস্ত্র বানিয়ে বিক্রি করলে এটাকে ব্যবসা বলা যাবে না। কারণ এখানে মানুষের কল্যাণ নিহিত নেই। অনুরূপভাবে কালোবাজারিকেও ব্যবসায়িক সংজ্ঞায় ফেলা মুশকিল, কারণ এখানে রাষ্ট্রের সম্মতি নেই, মানুষের কল্যাণ নেই। এখানে হয় ব্যক্তিগত অর্থের সাধনা, এখানে মূল্যবোধের অনুশীলন হয় না।
এখন মূল আলোচনায়, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ব্যবসার সম্পর্কের কথা বলি।
খাতুনগঞ্জ বা চাক্তাই অথবা দেশের যে কোন অঞ্চলে বসে একজন আমদানিকারক, রফতানিকারক দেশের উৎপাদকের সঙ্গে এলসি খোলার আগে মূল্য নিয়ে হার্ড বারগেনিং করেন। মূল্য ছাড়া অন্যান্য শর্ত নিয়েও চ‚ড়াš— দরকষাকষি করেন। দরাদরি ঠিক হলে অন্য শর্তগুলো নিজের অনুক‚লে আছে মনে করলে, তখনই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী এলসি খোলেন। ব্যবসায়ী কোন দিন শর্ত দেন না যে তার একাউন্টে রফতানিকারক কত ডলার দেবেন, ওই শর্ত পেলেই রফতানিকারক বুঝে যাবেন, ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়।
অনুরূপভাবে একজন মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা যখন দেশের জন্য কোন চুক্তি করতে যান বা কোন পণ্য আমদানি করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তখন তাদেরও কাউন্টার দেশের মন্ত্রী বা কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে হার্ড বারগেনিং করে নিতে হয়ে। এই হার্ড বারগেনিংয়ের নামই ব্যবসা। ধরি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ভিয়েতনাম থেকে এক লাখ টন চাল আমদানি করতে চায়। ভিয়েতনামের রফতানিকারক প্রতি টন চালের মূল্য ৫০০ মার্কিন ডলার চাইলেন। ওখানে যদি মন্ত্রী সৎ হন ও বিশ্ববাজারে চালের দামের পার্থক্য জানেন, মন্ত্রী অবশ্যই বারগেনিং করবেন। ওখানে যদি মন্ত্রী শর্ত দেন যে আমার একাউন্টে কত ডলার জমা হবে? এতে রফতানিকারক বুঝে যাবেন ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়, দামটাও রফতানিকারক ওভাবে নির্ধারণ করবেন।
ভারতের সঙ্গে এখন নদীর পানি নিয়ে হার্ড বারগেনিং চলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এক ফোঁটা পানিও দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ বলছে, এ পানি পাওয়া বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার, পানি দিতেই হবে। এই যে বারগেনিং, এটাও ব্যবসার মধ্যে পড়ে। চাপ সৃষ্টি করে যে যার থেকে যত বেশি আদায় করতে পারে।
আমি উপরের কথাগুলো এ জন্যই উপস্থাপন করলাম, টকশোসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে, সংবাদে ব্যবসায়ী সংসদ সদস্যদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে নানা কথা হয়। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসা ছাড়া আর কি আছে বলুন। আমেরিকা অস্ত্রের ব্যবসা করে। অস্ত্রের ব্যবসা একচ্ছত্র রাখার কৌশল হিসেবে উত্তর কোরিয়া ও ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। চীনও অস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের প্রসার করেছে। বিশ্বের অর্ধেক বাজার এখন তাদের দখলে। ব্যবসায় প্রসার লাভ করেছে বলেই আমেরিকা, রাশিয়াসহ সবাই এখন চীনের দিকে ঝুঁকেছে। চীন যদি প্রসার লাভ না করতে পারত, কেউ কি তার ধারেকাছে যেত? আমেরিকার এখন বড় ভয়, চীন আর ভারত বিশ্বের অর্থনীতির পরাশক্তি হয়ে যাবে।
আমাদের দেশকে প্রকৃতি অনেক কিছু দিয়েছে। দেয়নি শুধু দেশপ্রেমিক নেতা। লি কোয়াং ইউ বা মাহাথির মোহাম্মদের মতো একজন দ¶ নেতা যদি এ দেশে জš§ নিত, দশ বছরে বিশ্বের আলোচিত দেশে পরিণত হতে পারত বাংলাদেশ।
হরতাল, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, সমাজের ¶ুদ্র ¶ুদ্র জায়গাগুলো পর্যš— দখল করে ফেলেছে। এখন প্রতিযোগিতা চলছে, কার আগে কে ধনী হবে। এই অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা প্রকৃতির পছন্দের নয় বিধায় যা আছে তাও ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। এই ধর“ন, হালদা নদীর মতো প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র পৃথিবীতে আর একটিও আছে কি-না সন্দেহ। অথচ আমরা হেলায় এটাকে ধ্বংস করে ফেলেছি। বৃষ্টি প্রকৃতির দান। অনেক দেশ আছে যেখানে বৃষ্টির জন্য হাহাকার। বিধাতার দরবারে হাত তুলে মোনাজাত করা হয়। পানি, গ্যাস, গাছপালা, বন্দর, কয়লা, উর্বর মাটিÑ কী নেই এ দেশে? চাই সঠিক নেতৃত্ব, চাই দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। যে সমাজে সবাই শাšি—তে খেয়ে-পরে বাঁচবে। সংঘাত চাই না, চাই না হরতাল। একমাত্র হরতালের কারণে এ দেশে অনেক বিদেশী বিনিয়োগ করতে চান না। দুর্নীতির কারণে কেউ এ দেশের মাটি মাড়াতে চান না। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হাজার হাজার কোটি ডলার নিয়ে বিদেশীরা এসেছে। এমনকি ভিয়েতনামেও বিদেশীরা বিনিয়োগ করেছে। এখন মিয়ানমার মুক্ত হতে চলেছে। বাংলাদেশ সময়মতো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে, মিয়ানমারে অনেকে বিনিয়োগে উৎসাহ বোধ করবে।


নূর“ল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন