মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করে নোবেল পুরস্কার পাওয়া যাবে না


সৈ য় দ মু হা ম্ম দ ই ব রা হি ম বী র প্র তী ক 
উন্নয়নশীল বা তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশ নামক একটি দেশের কোন একজন ব্যক্তি যদি বিশ্বের সবচেয়ে দামি একটি পুরস্কার পান, তাহলে ওই ব্যক্তি যেমন সম্মানিত হন তেমনি বাংলাদেশও সেই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বাংলাদেশের বহু ব্যক্তি বসবাস করছেন এবং তাদের নিজ নিজ কর্মদ¶তায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের বহু মানুষ বসবাস করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ড. আতাউল করিম তার গবেষণা কর্মের জন্য খ্যাতির তালিকায় থেকে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। সম্প্রতি আমেরিকায় বসবাসকারী জনৈক বাংলাদেশী তর“ণ কিশোর-কিশোরীদের শি¶া ব্যবস্থায় এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যা রীতিমতো বিস্ময়কর। তার এ বিশাল কীর্তির জন্য তিনি অতি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ১০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় নিজের নামটি অš—র্ভুক্ত করাতে পেরেছেন। এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য গৌরব ও আনন্দের একটি সংবাদ। বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তি এভারেস্ট বিজয় করে নিজের এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। ঠিক তেমনি আমাদের দেশের সোনার সš—ানরাও এভারেস্ট বিজয় করে বিশ্বের দরবারে নিজ দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। জাতি গর্বিত হয়েছে। এটি হচ্ছে একটি মনো¯—াত্তি¡ক বন্ধন এবং প্রাকৃতিক নিয়ম। এখানে জোর করে মানবসৃষ্ট কোন নিয়ম খাটানো যায় না। কারণ মায়া, মমতা, øেহ, গর্ব, (ইতিবাচক দিক বলুন বা নেতিবাচক দিক বলুন) এ সবকিছুর উৎপত্তিস্থল হƒদয় ও ম¯ি—ষ্ক। সেখানে মানবসৃষ্ট কোন আইন খাটে না। এ ব্যাখ্যার পেছনের কারণ হল, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশেরই একজন নাগরিক এবং তিনি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। নোবেল বিজয়ী হিসেবে বাঙালিদের মধ্যে তিনি হচ্ছেন তৃতীয় বাঙালি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ। কিন্তু তিনি অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পাননি। তিনি অর্থনীতির কিছু কর্মকাÊকে এমনভাবে বিন্য¯— করেছেন যেটি একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রভাব বি¯—ার করেছে এবং সমাজে শাšি— প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভ‚মিকা রেখেছে। যার জন্য তাকে শাšি—তে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। 
ড. ইউনূসের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম সমিতির বার্ষিক মেজবানে। যা রমনার ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি অবশ্যই দেশের একজন কৃতী সš—ান। এবং চট্টগ্রামের অধিবাসী। তাই তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে গর্বিত হয়েছি। ড. ইউনূস নোবেল প্রাইজ পাওয়ার কিছুদিন পর যুগাš—রেই তার এ বিশাল বিজয়কে কেন্দ্র করে কলাম লিখেছিলাম। শিরোনাম ছিল ‘গাঁয়ের ছেলের প¶ থেকে অভিনন্দন’। শুধু চট্টগ্রাম কেন? তার এ বিজয়ে পুরো দেশ আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে, গর্বিত হয়েছে। তার নোবেল প্রাইজটি ছিল দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগটি পেয়েছে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান এবং এর দ্বিতীয় ভাগটি পেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নামের একজন ব্যক্তি। আমরা উভয় বিষয়ের জন্যই গর্বিত। কিন্তু মানবসৃষ্ট যে কোন প্রতিষ্ঠানেই ভুল-ত্র“টি এবং কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে। মানুষের কর্মকাÊে দুর্বলতা ও ভুল-ত্র“টি থাকতে পারে। এই দুটো বাক্য মেনে নিয়েই বলতে চাই, দুর্বলতা থাকলেই সেটিকে অগ্রাহ্য করতে হবে, ধ্বংস করতে হবে এমনটি কখনোই কাম্য হতে পারে না। ব্যক্তির কর্মকাÊেও দুর্বলতা ও ভুল-ত্র“টি থাকলে তাকে নিঃশেষ করে দিতে হবে এটিও কখনোই কাম্য হতে পারে না। 
পত্রিকার কলামে এবং টেলিভিশনের ‘টকশো’গুলোতে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ নামক প্রতিষ্ঠানটির ওপর কেন বর্তমান সরকার র“ষ্ট? অনেক বক্তা বা লেখকই এ ব্যাপারে বলতে চেষ্টা করেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে মনে একটি নোবেল পুরস্কার আশা করেছিলেন। বা নোবেল পুরস্কারের মতো যে কোন একটি গুর“ত্বপুর্ণ আš—র্জাতিক শাšি— পুরস্কার প্রত্যাশা করেছেন। তার এ প্রত্যাশার কারণ হচ্ছেÑ পার্বত্য চট্টগ্রাম শাšি— চুক্তির বিষয়টি। তিনি মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাšি— চুক্তির মাধ্যমে সেখানে তিনি শাšি— স্থাপন করতে পেরেছেন এবং তিনি সফল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম শাšি— চুক্তি ¯^া¶র করেছিলেন ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। ড. মুহাম্মদ ইউনূস শাšি—তে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন শাšি— চুক্তির আট-নয় বছর পর। কলাম লেখক এবং টেলিভিশনের ‘টকশো’গুলোতে অংশগ্রহণ করা ব্যক্তিরা এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিগণ বলছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাšি—তে নোবেল পুরস্কার না পাওয়ায় ¶িপ্ত ও ঈর্ষাšি^ত, কেন ইউনূস নামক একজন ব্যক্তি এ পুরস্কার পেলেন?’ আওয়ামী ঘরানার জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মুখের কথা থেকেও এটি বেশ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে সৈয়দ আশরাফের কথাতেও এর স্পষ্ট আভাস পাওয়া গেছে। তিনি বেশ তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই বলেছেনÑ ‘ইউনূস কিভাবে নোবেল পুরস্কার পায়?’ এছাড়া তিনি এমন ধরনের কুর“চিপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেগুলো এখানে আর উলে­খ করলাম না। 
আমি এখানে বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন, তাহলে ড. ইউনূস তো তার জন্য কোন বাধা নয়। তিনি যদি শাšি—তে নোবেল বিজয়ের যোগ্যতা অর্জন করতেন, তাহলে তিনি ১৯৯৭, ৯৮, ৯৯ বা ২০০০ সালেই সেটি পেয়ে যেতেন। এখনও যদি আš—র্জাতিক অঙ্গনের কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেন এবং মূল্যায়নের পর এ মর্মে প্রত্যয়ন করেন যে, হ্যাঁ পার্বত্য চট্টগ্রামে শাšি— বিরাজমান এবং এ শাšি—র জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এককভাবে দায়ী, তাহলে তিনি শাšি— পুরস্কার পেতেই পারেন। বাংলাদেশের কেউই তার শাšি— প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল বিজয়ের অš—রায় নয়। কারণ এটি একটি আš—র্জাতিক ¯^ীকৃতি এবং দেশ ও জাতির জন্য অত্যš— গৌরবের। বাংলাদেশের কেউই তার শাšি— পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে ঈর্ষাšি^ত নয় এবং তার প্রতিযোগীও নয় বলে আমি মনে করি। কিন্তু ড. ইউনূস তো শেখ হাসিনার শাšি— পুরস্কারটি কেড়ে নেননি। ড. ইউনূস নিজগুণে এবং নিজের কর্মস্পৃহার ¯^ীকৃতি হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। সুতরাং আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে যে ঈর্ষার পরিবেশ রয়েছে সেটি একাš—ভাবেই অনাকাক্সি¶ত এবং এর থেকে অবশ্যই আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকেই ভ‚মিকা রাখতে হবে। আমরা জনসাধারণ বিষয়টি নিয়ে ব্যথিত এবং মনোকষ্টে ভুগছি এই ভেবে যে, দেশের একজন নাগরিক পৃথিবীর বুকে নিজের এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন, এতে দেশের প্রধান নির্বাহী কেন ঈর্ষাšি^ত হচ্ছেন? উলে­খ্য, প্রধানমন্ত্রীই হচ্ছেন দেশের প্রধান নির্বাহী। বিশ্বে যদি বাংলাদেশ নিয়ে এ মূল্যায়ন করা শুর“ হয় যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী তারই দেশের একজন নাগরিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন এবং তাকে ঈর্ষা করছেনÑ তাহলে দেশের মর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলার অপে¶া রাখে না। 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেন ১৯৯৬ সালের জুন মাসে। দায়িত্ব নিয়েছেন জুনের তৃতীয় সপ্তাহে। সুতরাং আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির সঙ্গে সংশি­ষ্ট হতে পেরেছেন যেদিন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেদিন থেকেই। তাহলে তার আগে কি পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতিকে শাšি—র আওতায় আনার জন্য তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাত নিরসনের জন্য দেশের অন্য কেউ কোন ভ‚মিকা রাখেননি?
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দু’মাস পর পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা উপজাতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী বাংলাদেশের বির“দ্ধে যুদ্ধ শুর“ করে। যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী যুদ্ধ শুর“ করে তার নাম ছিল ‘শাšি— বাহিনী’। সেই সময় শাšি— বাহিনীর প্রধান ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এবং উপপ্রধান ছিলেন সন্তু লারমা। যে সময় এ বিদ্রোহটি শুর“ হয়, সে সময় বাংলাদেশের বয়স মাত্র চার বছর অতিক্রম করছে। নবীন শিশু রাষ্ট্রের বির“দ্ধে বুঝে-শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিদ্রোহের সূচনা করা হয়। সে সময় বাংলাদেশ সরকার চরম ধৈর্য নিয়ে কৌশল অবলম্বন করে পরিস্থিতি মোকাবেলা শুর“ করে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলার গুর“দায়িত্ব পড়েছিল মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ওপর, যিনি পরে রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছিলেন এবং একইভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের দায়িত্ব পালনও করেছেন। জিয়াউর রহমান সেখানকার আইন-শৃংখলা ও বিদ্রোহের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেখানে ক্রমাš^য়ে সেনাবাহিনী নিয়োজিত করেন। সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ দেয়ার দুটি উদ্দেশ্য ছিল। ১. সামরিকভাবে পৃথিবীর ১০টি জায়গায় যেমন ইনসার্জেন্সি বা বিদ্রোহ দমন করা হয় তেমনভাবে দমনে সরকারকে সহায়তা করা। ২. সরকারের উন্নয়ন কর্মকাÊে নিরাপত্তা প্রদান। যে উন্নয়ন কর্মকাÊের সুফল ভোগকারী হচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ। 
১৯৭০-এর শেষাংশে এবং ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যš— মানুষ মনে করত, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটি একটি সামরিক সমস্যা এবং এটি সামরিক বাহিনীই তদারকি করবে। বস্তুত ১৯৮৮ সালের শুর“ থেকে একটি জোরাল প্রক্রিয়া শুর“ করা হয়েছিল, যে প্রক্রিয়াটি ছিল বাংলাদেশী জাতির সামনে এ কথা উপস্থাপন করা যে, এটি সামরিক সমস্যা নয়। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। সে সময় দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর কোন কর্মকাÊ ল¶ণীয় পর্যায়ে ছিল না। শুধু তাই নয়, জনগণ, বিদ্রোহী, সামরিক বাহিনী এবং সরকারি কর্মকাÊের মধ্যেও সমš^য় করার মতো কোন অবকাঠামো ছিল না। রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমরা একদিকে যেমন সামরিক কর্তব্য পালন করবে অপরদিকে শাšি— প্রক্রিয়াকেও ত্বরাšি^ত করবে। আমি সে সময় রাঙ্গামাটিতে এবং পরে খাগড়াছড়িতে ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আমার ইমিডিয়েট উপরস্থ কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল আবদুস সালাম। যিনি বর্তমানে নির্বাচিত সরকারদলীয় একজন সংসদ সদস্য।
১৯৮৮-৮৯ সালের রাষ্ট্রপতির পৃষ্ঠপোষকতায়, জিওসি মহোদয়ের নীতিনির্ধারণী সহযোগিতায় আমি এবং আমার অধীনস্থ সহকর্মীদের দিবারাত্রি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি শাšি—র পরিবেশ আনার চেষ্টা করেছিলাম। যার ফলে তৎকালীন জাতীয় সংসদ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার জন্য আলাদাভাবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করে। সে সময় বিদ্রোহী শাšি— বাহিনী এ ব্যবস্থাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা ভালো করেই জানত সরকারি এসব পদ¶েপ জনকল্যাণমুখী ও গণতান্ত্রিক। কিন্তু বিদ্রোহের কৌশলের অংশই হল সরকার যা-ই কর“ক না কেন সেটা প্রত্যাখ্যান করা। তাই তারা প্রত্যাখ্যান করে।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুন পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ ছিল ৩ বছর। কিন্তু ২৫ জুন ১৯৮৯ থেকে পরবর্তী দেড় বছরের মাথায় রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ¶মতাচ্যুত হন। নতুন সরকার আসার পর সেখানে নতুন করে নির্বাচন দেয়নি। পুরনো পরিষদের মেয়াদ বাড়িয়ে ৬ বছর পর্যš— বহাল রাখা হয়। সে সময়ে বিএনপি সরকার অবশ্য চেষ্টা করেছিল শাšি— প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে। তবে আমি মনে করি, ভারতের অসহযোগিতার কারণেই তারা সেটা করতে পারেনি। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ¶মতায় আসার পর শাšি— প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে শুর“ করে। এবার অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শাšি— চুক্তি ¯^া¶রিত হয়। যারা শাšি— চুক্তি ¯^া¶র প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন, তাদের বেশির ভাগই পার্বত্য চট্টগ্রামের ভ‚মিতে ১ কিলোমিটার পথও পরিভ্রমণ করেননি। এসব সম্মানিত ব্যক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সব মহলের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ভারতীয় প¶ের প্ররোচনায় শাšি— বাহিনীর আবদারের পরিপ্রে¶িতে এই শাšি— চুক্তি ¯^া¶র করেন। শাšি— চুক্তি ¯^া¶র করাকে আমি অবশ্যই নীতিগতভাবে ¯^াগত জানাই।
কেউ যদি র“টি সেঁকার জন্য চুলায় একটি তাওয়া বসান এবং তাতে যদি কোন র“টি না দেন, তাহলে তাওয়াটি শুধু গরমই হতে থাকবে, র“টি সেঁকা হবে না। কিন্তু কেউ যদি গরম তাওয়ায় র“টি দেন তাহলে র“টি সেঁকা হয়ে যাবে। ১৯৯০-এর দশকের ৬টি বছর এ তাওয়াটি শুধু গরমই ছিল। এতে কেউ র“টি দেয়নি। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ এসে ওই উত্তপ্ত তাওয়ায় র“টি দিল এবং তা সেঁকা হয়ে গেল। উপমার মধ্যে ওই তাওয়াকে বলতে চাচ্ছি পার্বত্য পরিস্থিতি এবং র“টিকে বলতে চাচ্ছি শাšি—চুক্তি। 
অতএব পার্বত্য শাšি—চুক্তির জন্য কেউ যদি কোন পুরস্কার প্রত্যাশা করেন, তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনী, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই করতে পারেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে অবশ্যই শেখ হাসিনার উপস্থিতি থাকবে।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রী এককভাবে শাšি— চুক্তি প্রত্যাশা করলে সেটি বা¯—বসম্মত হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি নিয়ে যা বললাম তা তথ্যবহুল, ইতিহাসনির্ভর এবং যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স¶ম। সুতরাং পার্বত্য শাšি— চুক্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান মার্জিনাল। কিন্তু দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুগাš—কারী সিদ্ধাšে—র জন্য তাকে অভিনন্দন। তবে এটি অভিনন্দনের মাঝেই সীমাবদ্ধ। তার জন্য এককভাবে নোবেল প্রাইজ পাওয়া যাবে না।
শাšি— চুক্তিতে অনেক দুর্বলতা আছে। সেই দুর্বলতার প্রধান শিকার হচ্ছেন বাঙালি জনগোষ্ঠী। দুর্বলতা আছে বিধায় সেই শাšি— চুক্তি আজও পুরোপুরি বা¯—বায়ন করা যায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শাšি— চুক্তির সহায়তাকারীরা এর কোন সমাধান আজও দিতে পারছেন না। সেটি কবে নাগাদ দিতে পারবেন তা আমরা জানি না।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বাংলাদেশ সরকার ডেসটিনি নামক প্রতিষ্ঠানের বির“দ্ধে কমিশন গঠন করতে সময় নিচ্ছে ৩ মাস। অথচ গ্রামীণ ব্যাংকের নামে কমিশন করতে তাদের সময় নিতে হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংক একটি চলমান প্রতিষ্ঠান যেটি সারা পৃথিবীর চোখের সামনেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যে কোন ব্যক্তি যে কোন সময় এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা নিতে স¶ম। ড. ইউনূসকে ঘায়েল করার জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানকে ঘায়েল করা কখনোই উচিত হবে না।
বর্তমান সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারিকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় আনার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি। গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি আওতায় চলে গেলে এর অবস্থা কী হবে বা হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। সরকারি মালিকানাধীন সোনালী, রূপালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের অবস্থা কী পর্যায়ে আছে সেটি পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে। সরকারিকরণ প্রক্রিয়া ১৯৭২-৭৩ সালেও হয়েছিল আওয়ামী শাসনামলেই। সেই আওয়ামী লীগই বিশ্ববাজারের ¯^র্ণ যুগে এসেও পুনরায় সরকারিকরণের চিš—া করছে বলে আমাদের ধারণা। তবে সরকারিকরণ মানেই হচ্ছে লুটপাটের আখড়া। যেখানেই সরকার হ¯—¶েপ করেছে সেখানেই লুটপাট হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছে জনগণ। বাংলাদেশ বিমানের মতো একটি প্রতিষ্ঠান ৪১ বছরেও আলোর মুখ দেখতে পারেনি। কারণ এটি সরকার চালায়।
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান করছি, গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করবেন না। করলে ইতিহাস আপনাকে ¶মা করবে না।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক : নিরাপত্তা বিশে­ষক, কলাম লেখক, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন