ড. ফে র দৌ স আ হ ম দ কো রে শী
ইউনিয়ন বোর্ড থেকে এখন ইউনিয়ন পরিষদ। প্রতিটি ইউনিয়ন আবার অনেকগুলো ওয়ার্ডে বিভক্ত। ওয়ার্ড পর্যায়ে সবাই সবাইকে চেনে। ফলে তালিকায় কারও নাম বাদ পড়ার বা ভুয়া নাম ঢুকিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। ভোটার তালিকা সঠিকভাবে তৈরির দায়িত্ব পালনে এর চেয়ে উপযুক্ত কোন সংস্থা হতেই পারে না।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। নানা অনিয়ম, ত্র“টি-বিচ্যুতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। ¯^য়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উলেখ্য, ১০ মার্চ নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজ শুর“ করেছে। কমিশনের নিরী¶া অনুযায়ী এবারে ৭০ লাখ নতুন ভোটার তালিকায় অš—র্ভুক্ত হওয়ার কথা। সেই টার্গেট নিয়ে ৪ ধাপে পুরো হালনাগাদ কাজের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৮০ কোটি টাকা। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রথম দিনেই ৬৪টি জেলার ৬৪টি উপজেলায় ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে এ কাজ শুর“ হয়। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ অনেকটা শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ মে থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুর“ হচ্ছে। ২৪ ডিসেম্বর এ কার্যক্রম শেষ হবে। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে মাঠে আছেন ৫৭ হাজার ৬০৭ জন।
দেশজুড়ে কমিশনের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রোববার কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেছেন, কমিশন এসব অনিয়ম ও ত্র“টি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। পত্রপত্রিকার রিপোর্টে এবং কমিশনের পর্যবে¶কদের প্রতিবেদনে যেসব অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে তা নিæরূপ :
(ক) মাঠকর্মীরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে : ৩০ এপ্রিল ২০১২, দৈনিক ইত্তেফাক লিখেছে ঃ ‘প্রতিদিন একজন মাঠকর্মীর ৫০ জন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। এ¶েত্রে মাঠকর্মীরা ২০-২৫ জনের তথ্য সংগ্রহ করে দিনের কাজ শেষ করছেন বলে ইসির কাছে অভিযোগ এসেছে।’
অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত মাস্টার রোলের মাঠকর্মীরা এ ধরনের কাজে ফাঁকি দেবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অতীতেও এরকমই ঘটেছে। ভবিষ্যতেও ঘটবে। সংশিষ্ট এলাকার লোক না হলে তাদের অন্যের কথার ওপরেই নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া এসব অস্থায়ী কর্মীর কোন দায়বদ্ধতাও থাকে না। তাদের পারিশ্রমিক দেয়া হয় খুব সামান্য। তাও আবার ঠিকমতো পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ। অভিযোগ রয়েছে, তারা অনেকে এলাকার কোন প্রভাবশালীর বাড়িতে বসেই পুরো এলাকার কাজ সেরে ফেলে। এসব কারণে তথ্যের ভুল এবং নামের বানানসহ নানাবিধ ত্র“টি থেকে যায়।
(খ) অপ্রাপ্তবয়স্করা ভুয়া জš§নিবন্ধন সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভোটার হচ্ছে : ওই একই রিপোর্টে উলেখ করা হয়েছে, বহু অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নতুন ভোটার তালিকায় অš—র্ভুক্ত হচ্ছে। তারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া জš§নিবন্ধন সার্টিফিকেট দেখিয়ে এবং মাঠকর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভোটার হয়ে যাচ্ছে। দলীয় নেতারা, বিশেষ করে ¶মতাসীনরা, নিজ দলের কর্মীদের এভাবে ভোটার বানানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে।
(গ) বর্তমান তালিকায় বাদ পড়ার অজুহাত তুলে অনেকে দ্বিতীয়বার ভোটার হচ্ছে : ২৭ এপ্রিল ২০১২, দৈনিক যুগাš—র ‘হালনাগাদে নতুন ভোটারের চেয়ে বাদ পড়ার সংখ্যা বেশি’Ñএই শিরোনামে জানিয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদে এবার নতুন ভোটারের চেয়ে ‘বাদ পড়া’ ভোটারের অš—র্ভুক্তি অনেক বেশি। সেজন্য ‘দ্বৈত ভোটার’ অর্থাৎ একই ব্যক্তির অন্য এলাকায় গিয়ে ভোটার হওয়ার সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে কমিশন। এসব দ্বৈত ভোটার শনাক্ত করতে কমিশনকে এখন ক্রসম্যাচিং করার সিদ্ধাš— নিতে হচ্ছে। বলা বাহুল্য, দেশজুড়ে কোথাও একই ব্যক্তি একাধিক জায়গায় ভোটার হয়েছে কিনা, তা নির্ণয় করা বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপে¶ কাজ হবে।
(ঘ) ল¶্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি নতুন ভোটার : কমিশনের নিরী¶া অনুযায়ী চলতি হালনাগাদে ৫% নতুন ভোটার যোগ হওয়ার কথা। কিন্তু যে হারে নতুন ভোটার হচ্ছে তাতে এই পরিমাণ ১০% ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এভাবে কাজ চলতে থাকলে সারাদেশে ভুয়া ভোটারের সংখ্যা হবে ৭৫ লাখের বেশি।
(ঙ) কাজের ধীরগতি ও ব্যয় বৃদ্ধি : দেখা যাচ্ছে, এ বছরের ১০ মার্চ কাজ শুর“ হয়ে কেবল তথ্য সংগ্রহের কাজই ৩১ ডিসেম্বর পর্যš— চলবে। তার পর সেই তথ্যের ভিত্তিতে হালনাগাদের কাজ শেষ হবে ৩১ জানুয়ারি। অর্থাৎ মোট সময় লাগছে ১০ মাস। এত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ চলতে থাকলে নানা সংকট ও দুর্বিপাকে আরও কালহরণের সম্ভাবনা থাকে। এতে অবধারিতরূপে কাজের ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়। এবারে কেবল তথ্য সংগ্রহের জন্যই ৮০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কাজের সমš^য়, তদারকি, ডাটা এন্ট্রি, মুদ্রণ ইত্যাদি কাজ মিলিয়ে সার্বিক ব্যয় ১৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা যায়।
প্রতিবার হালনাগাদে এত দীর্ঘ সময় নেয়া হলে প্রতি বছর হালনাগাদ করার কোন সুযোগ থাকে না।
নিয়মিত হালনাগাদ না করার খেসারত
সঠিক ভোটার তালিকা যে কোন নির্বাচনের প্রথম পূর্বশর্ত। প্রতি বছরই বিপুলসংখ্যক মানুষ আঠারো বছরের সীমা অতিক্রম করে ভোটার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। ভোটার তালিকায় এই নতুন ভোটারদের নাম অš—র্র্ভুক্ত না করে নির্বাচন যথাযথ হয় না। আবার ইতিমধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, বাসস্থান পরিবর্তন করেছেন কিংবা অন্য কোন কারণে যারা আর সংশিষ্ট এলাকার ভোটার থাকতে পারছেন না, তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। এ জন্যও ভোটার তালিকা হালনাগাদ রাখা আবশ্যক। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
বর্তমান ভোটার তালিকাটি ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তৈরি হয়। বলা হয়েছিল, প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে এই তালিকা হালনাগাদ করা হবে। যাতে করে যে কোন সময় যে কোন নির্বাচন হতে গেলে ওই বছরের ১ জানুয়ারিতে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছেন অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, তারা সবাই ভোট দিতে পারেন। কিন্তু মাঝখানে তিন বছর এই তালিকা হালনাগাদ করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এ অবস্থায় সেই পুরনো তালিকা দিয়েই এবারে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যš— সেই নির্বাচন হতে পারেনি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ না হওয়ার কারণ দেখিয়ে কোন একটি প¶ হাইকোর্টে রিট আবেদন করে বলেছে, সময়মতো তালিকা হালনাগাদ না করায় প্রায় ৫ লাখ নতুন ভোটার ভোট দিতে পারবেন না। অভিযোগটি মোটেই অমূলক নয়। এটা খুব বড় ধরনের অনিয়ম। নির্বাচন কমিশন এ দিকে আদৌ দৃষ্টি দেয়নি। আর সে জন্য দুটি গুর“ত্বপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া মাঝপথে থেমে গেল। (এর ফলে সরকারের কত টাকা পানিতে গেল, সম্ভাব্য প্রার্থীদের কত টাকা গচ্চা দিতে হল, এ নিয়ে বিভিন্ন প¶ের কত উদ্যোগ-আয়োজন বৃথা গেল, তার হিসাব হওয়া প্রয়োজন। আর সেজন্য কে দায়ী সে বিষয়টিও স্থির হওয়া প্রয়োজন।)
ভোটার তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ না করা হলে আগামীতে এ ধরনের অভিযোগে মামলার উৎপত্তি হতে থাকবে।
সমাধান বিকেন্দ্রীকরণ
আসলে সারাদেশের প্রায় ৮ কোটি ভোটারের তালিকা তৈরি বা হালনাগাদ করতে গেলে কাজের পরিধি এবং জটিলতা বহুগুণে বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয়ভাবে একক Ÿ্যবস্থাপনায় এ কাজটি করতে গেলে এমন বিপত্তি ঘটতেই থাকবে।
আমাদের জাতীয় পর্যায়ে সব ¶মতা ও কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভ‚ত করে রাখার প্রবণতা নতুন কিছু নয়। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও ¶মতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক সরকারই অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়ে আসছে। সে কারণে অনেক সহজ কাজও জটিল হয়ে দাঁড়ায়। রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’-এর মতো বিকেন্দ্রীকরণই যথার্থ সমাধান। সারাদেশের ধুলা পরিষ্কারের মতো হাজার হাজার ঝাড়-দার দিয়ে ধূলিঝড় সৃষ্টি করা কিংবা হাজার হাজার ভি¯ি— নিয়োগ করে বন্যা বইয়ে দেয়ার পরিবর্তে যার যার পা ঢেকে রাখার ব্যবস্থা হোক। আর সেটা হতে পারে প্রত্যেক ইউনিয়নের কাজ সংশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের হাতে ছেড়ে দিয়ে।
ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব প্রদানের সুবিধা
আমাদের দেশে ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো। সারাদেশে সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে রয়েছে সংশিষ্ট এলাকার মানুষের নাড়ির সংযোগ। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে আছেন একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ৯ জন সদস্য, তিনজন মহিলা সদস্য নিয়ে মোট ১৩ জন নির্বাচিত কর্মকর্তা। আরও আছেন একজন সচিবসহ বেশকিছু কর্মচারী। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের নিজ¯^ সুসজ্জিত অফিস আছে, পাকা দালানে। অন্যান্য ¶েত্রে অনিয়ম হলেও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়মিত ও যথারীতি হয়ে এসেছে, সামরিক শাসনেও যার ব্যত্যয় ঘটেনি। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে দল-উপদলে, প¶ে-বিপ¶ে এত ব্যাপক তৎপরতা চলে যে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে ইউনিয়ন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুর“ করে জাতীয় সংসদের নির্বাচন পর্যš— সব নির্বাচন একই ভোটার তালিকায় হয়ে থাকে। ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকে ইউনিয়ন পরিষদেরই। তাই ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধনের কাজটি ইউনিয়ন পরিষদের ‘র“টিন দায়িত্ব’ হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে। অবশ্য সার্বিক তদারকি, মনিটরিং ও সমš^য়ের দায়িত্ব পালন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই। এ¶েত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া যেতে পারেÑ
(ক) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের প¶ে আর যাই হোক, ভোটার তালিকায় অনিয়ম করা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ প্রত্যেক এলাকাতেই রয়েছে একাধিক প¶। সবার তী¶è দৃষ্টি থাকবে ওই তালিকার দিকে। তালিকা তৈরি বা হালনাগাদকরণে কোন ভুল-ত্র“টি হলে এলাকার সব প¶ একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানাবে এবং সেই ভুল-ত্র“টি শুধরে দেবে।
এক একটি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা এক-দেড় হাজারের বেশি নয়। ইউনিটওয়ারি শুধু এই পরিমাণ ভোটারকে নিয়েই ভাবতে হবে। (যার যার জুতা নিজেই বানিয়ে নেয়া।) সব ইউনিটের কাজ চলবে পাশাপাশি। এতে করে কাজটি সম্পন্ন হবে ¯^ল্পতম সময়ে এবং নির্ভুলভাবে।
(খ) হালনাগাদের কাজটি হবে চলমান প্রক্রিয়া। বিদ্যমান ভোটার তালিকা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে এলাকাবাসীর পরিদর্শনের জন্য কোন প্রকাশ্য স্থানে সারা বছর টানিয়ে রাখার ব্যবস্থাও হতে পারে। নিজ নিজ এলাকার তালিকায় চোখ বুলিয়ে সবাই বলতে পারবেন তাতে কারও নাম বাদ পড়েছে কিনা কিংবা কোন ভুয়া ভোটার আছে কিনা।
(গ) সাময়িকভাবে দেশজুড়ে কিছু বেতনভুক্ত গণনাকারী ছেড়ে দিয়ে নির্ভুলভাবে তালিকা তৈরি বা হালনাগাদ করা কিছুতেই সম্ভব নয়। প্রতিবারেই নিত্যনতুন ভুল-ত্র“টি ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এ কথাটি সংশিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা যেন বুঝেও বুঝতে চান না।
(ঘ) প্রতি বছরের শুর“তে তালিকা হালনাগাদ করা ইউনিয়ন পরিষদের র“টিন কাজ হবে। হালনাগাদ করার কাজ শেষ হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা নিজ নিজ এলাকার তালিকা সত্যায়িত করবেন। তালিকায় পরবর্তীকালে কোন গুর“তর অনিয়ম ধরা পড়লে তার দায়িত্বও তাদের বহন করতে হবে।
(ঙ) এভাবে কাজ হলে হালনাগাদ করতে এক মাসের বেশি সময় প্রয়োজন হবে না। প্রতি বছর ১ জানুয়ারি কাজ শুর“ করে ১ ফেব্র“য়ারির আগেই তা সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ব্যয়ভারও অনেক কমে আসবে।
(চ) ইউনিয়ন পরিষদ কাজটি সম্পন্ন করলেও তা হবে নির্বাচন কমিশনের তদারকিতে। প্রত্যেক উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা এ কাজে সার্বিক তদারকি ও সিদ্ধাš— প্রদানের দায়িত্বে থাকলে কোন আইনি জটিলতাও থাকে না।
শহর অঞ্চলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
শহর অঞ্চলে পৌর কর্পোরেশন বা পৌরসভা এবং ওয়ার্ড কমিশনারদের এই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। তবে জনসম্পৃক্ততা ও জবাবদিহিতার জন্য স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমš^য়ে ‘পরামর্শক কমিটি’ গঠন করা যেতে পারে। শহরে ভোটারদের বাসস্থান পরিবর্তনের হার অনেক বেশি। অপরদিকে একই ব্যক্তি একাধিক স্থানে ভোটার হওয়ার সুযোগও এখানে বেশি। এদিকেও বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। এজন্য পৌর এলাকার ¶েত্রে কিছু বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে।
জš§নিবন্ধন ও ভোটার তালিকা
ইউনিয়ন পরিষদের হাতে কাজটি ছেড়ে দেয়ার আরও একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ এখন সব নাগরিকের জš§নিবন্ধনের দায়িত্ব লাভ করেছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে এখন ওই এলাকার নবজাতকসহ সব নাগরিকের জš§বৃত্তাš— সংবলিত তথ্যাদি সংগ্রহ ও সংর¶িত হচ্ছে। ফলে কোন এলাকায় কারা নতুন ভোটার হবে তা ইউনিয়ন পরিষদের বালাম বই দেখেই ঠিক করা সম্ভব। এজন্যই হালনাগাদের কাজটি ইউনিয়ন পরিষদ অতি সহজে এবং নির্ভুলভাবে করতে পারবে।
কাজটি ইউনিয়ন পরিষদ করলে ভুয়া জš§নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিয়ে জালিয়াতিরও কোন সুযোগ থাকবে না।
দ্বৈত ভোটের সমস্যা
এক ব্যক্তির একাধিক জায়গায় ভোটার হওয়ার সমস্যাটি অনেক পুরনো। ডাটাবেসে ক্রসম্যাচিং করে এই জালিয়াতি ধরে ফেলা সম্ভব। তবে একজন ব্যক্তির একাধিক কর্মস্থল থাকতে পারে। একই ব্যক্তির একাধিক অবস্থানে ব্যবসা-বাণিজ্য বা বৈষয়িক ¯^ার্থ থাকতে পারে। তিনি একাধিক এলাকার করদাতা হতে পারেন। এমন ¶েত্রে ওই ব্যক্তি কি একাধিক এলাকার নির্বাচনে রায় দেয়ার অধিকার দাবি করতে পারেন না? বাংলাদেশের অধিকাংশ নগরবাসীর গ্রামে জোত-জমি ও সামাজিক অবস্থান বিদ্যমান। তাদের দু’দিকেই খেয়াল রাখতে হয়।
বিচারপতি আবদুর রউফ সিইসি থাকাকালে এই বিষয়টির কিছুটা সুরাহা করেছিলেন। তিনি একই ব্যক্তির এক জায়গায় সংসদ নির্বাচনে, অন্য জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ রেখে সেভাবে ভোটার নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সে ব্যবস্থাটি পরে কার্যকর থাকেনি।
শেষ কথা
আবারও বলব, এখনও সময় আছে, ভোটার তালিকা তৈরি এবং হালনাগাদ করার কাজটি সম্পূর্ণরূপেই ইউনিয়ন পরিষদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাটি শত ত্র“টি সত্তে¡ও একটি ‘অমূল্য সম্পদ’। ব্রিটিশরা যে কারণেই করে থাকুক না কেন, অš—ত এই একটি ভালো ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে রেখে গেছে। প্রায় দেড়শ’ বছর আমাদের গ্রাম পর্যায়ে ভোটাভুটির চর্চা চলছে একে কেন্দ্র করে। ইউনিয়ন বোর্ড থেকে এখন ইউনিয়ন পরিষদ। প্রতিটি ইউনিয়ন আবার অনেকগুলো ওয়ার্ডে বিভক্ত। ওয়ার্ড পর্যায়ে সবাই সবাইকে চেনে। ফলে তালিকায় কারও নাম বাদ পড়ার বা ভুয়া নাম ঢুকিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। ভোটার তালিকা সঠিকভাবে তৈরির দায়িত্ব পালনে এর চেয়ে উপযুক্ত কোন সংস্থা হতেই পারে না।
ইউনিয়ন পরিষদের তৈরি করা তালিকা সর্বসাধারণের পরিদর্শন ও মš—ব্যের জন্য সারা বছরই উš§ুক্ত রাখা হলে নির্বাচন কমিশনকে কেবল যাচাই-বাছাই এবং ওজর-আপত্তি শুনতে হবে। এ ব্যবস্থাটা একবার দাঁড়িয়ে গেলে সংশোধন ও পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের ভোটার তালিকার ভুল-ত্র“টি সম্পূর্ণ দূরীভ‚ত হয়ে যাবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রাথমিক কাজটি আইনানুগভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ওপর ন্য¯— হলে চিরদিনের মতো এ নিয়ে সব দুশ্চিš—া দূর হয়। এ খাতে বিপুল ব্যয়, সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে।
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী : রাজনীতিক, ভ‚-রাজনীতি গবেষক
ংযধঢ়ংযরহ@মঃষনফ.পড়স
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন