মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম দফা শাসনকালের শেষদিকে দেশে ভয়াবহ সার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময়ের ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার বিক্ষুব্ধ কৃষকদের আন্দোলন দমন করার জন্য তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। অন্য অনেক কারণেই ততোদিনে বিএনপির ওপর থেকে মানুষের মন উঠে যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু সব ঘটনার মাঝে তীব্র সার সঙ্কট ও কৃষকের বুকে গুলি চালানোর ঘটনা হয়ে উঠেছিল বিএনপি সরকারের দুঃশাসনের প্রতীক। গণমানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল আগাম রায়, এবার ‘খালেদা যাবে সারে’।
দেশের গুরুতর বিদ্যুত্ সঙ্কট নিয়ে বর্তমান মহাজোট সরকার যেসব কায়-কারবার করছে এবং তার চেয়ে বড় কথা, প্রয়োজনীয় যেসব কাজ করা থেকে সে বিরত থাকছে, তাতে সব অংশের মানুষের মধ্যে হতাশা, বিরক্তি, ক্ষোভ চরমে উঠতে শুরু করেছে। ছন্দ মিলানোর জন্য বিদ্যুেক ‘তার’ নামে আখ্যায়িত করে মানুষজন আজকাল ছড়া বেঁধেছে ‘খালেদা গেছে সারে, আর হাসিনা যাবে তারে’। এ ধরনের কথা যে মানুষের মুখে মুখে ছড়াচ্ছে সে সম্পর্কে ২ বছরের বেশি সময় আগেই আমি লিখেছিলাম। তবে তাতে সরকারের টনক যে সামান্যই নড়েছিল তা ভুক্তভোগী দেশবাসী মাত্রেরই ভালোভাবে জানা আছে। বিদ্যুত্ সমস্যার বিষয়টি হালকা বোল-চালের বা শিক্ষানবিস সাধারণ জ্ঞান দিয়ে পুতুল খেলার মতো করে সমাধানের কোনো বিষয় নয়। বিশাল এক জাতীয় কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে পারার ওপর বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান নির্ভর করে। বিদ্যুত্ তথা শক্তি খাতে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে না পারলে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক-সামাজিক অগ্রযাত্রার পথও রুদ্ধ হয়ে থাকবে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক-সামাজিক অগ্রগতির অন্যতম চাবিকাঠি হলো শক্তি-সম্পদ, যার মধ্যে প্রধান একটি উপাদান হলো বিদ্যুত্।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে জাতীয় উন্নয়নের রণনীতিগত পথ রূপে চারটি উপাদানকে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন।
ক) দেশের মানবসম্পদের উত্কর্ষতা সাধন।
খ) সকলের জন্য উন্নত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এই স্ট্র্যাটেজিকে অবলম্বন করে ব্যাপক জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বিপুলভাবে বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারের বিশাল সম্প্রসারণ ঘটান।
গ) নৌ-রেল-সড়কপথে যোগাযোগসহ উন্নয়নের বস্তুগত অবকাঠামো শক্তিশালী করা।
ঘ) বিদ্যুত্সহ দেশের শক্তি-সম্পদের বিপুল ও পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা।
জাতির বর্তমান বিকাশের স্তরে বিদ্যুত্ সরবরাহের সামষ্টিক গুরুত্ব বিশাল। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ের সাথেও বিদ্যুতের বিষয়টি সরাসরি ও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। তাছাড়া অর্থনীতির উন্নয়নের কথা যদি বাদও দেই, তার চলতি হাল বজায় রাখতে হলেও বিদ্যুত্ সঙ্কটের অবনতি ঠেকানো অত্যাবশ্যক। বিদ্যুত্ ক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি হলে শিল্প-কৃষি উত্পাদন, সংরক্ষণ, বিপণন ইত্যাদি সবকিছুতেই বিপর্যয়ের উদ্ভব ঘটে। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয় অমোচনীয় প্রতিকূলতা। সামষ্টিক ক্ষেত্রে এসব প্রতিকূলতার অভিঘাত শেষ পর্যন্ত অবশ্য এসে পড়ে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের ওপরে। বিদ্যুতের অভাবে কারখানা বন্ধ থাকলে মালিকের লাভ কমে বটে, তবে শ্রমিকের মজুরি কমিয়ে রেখে অথবা শ্রমিক ছাঁটাই করে তা পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ তার সামনে থেকে যায়। তাছাড়া যদি তার লাভের পরিমাণ কমে যাওয়াটা সে ঠেকাতে নাও পারে, তাতে তার জীবনে দারিদ্র্য-অনাহার নেমে আসার ভয়তো থাকেই না বরঞ্চ সচরাচর তা তার বিলাসবহুল জীবনমানে সামান্যই প্রভাব ফেলে।
বিদ্যুত্ সঙ্কট সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক করার পাশাপাশি এই সঙ্কট দূর করার পথ সম্পর্কে কতগুলো সুপারিশ ও পরামর্শও দু’বছর আগে আমি এই পাতায় তুলে ধরেছিলাম। সরকার সে পথে অগ্রসর হয়নি। শুধুমাত্র বিদ্যুত্ সাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহার নিশ্চিত করার সুপারিশ কার্যকর করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুত্ সাশ্রয়ের পথ করে দেয়ার বদলে এই ‘প্রজেক্ট’ কিছু ব্যক্তির ‘টু-পাইস’ কামাই করার একটি উপায়ে রূপান্তরিত হওয়ায় তার ঘোষিত প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রায় নিষ্ফল হয়েছে। নির্ধারিত মানের পরিবর্তে অনেক নিম্নমানের স্পেসিফিকেশন ও নিচুমানের বাল্ব সরবরাহের চুক্তি করার ফলে দেশের জন্য সম্ভাব্য সুফল নস্যাত্ হয়েছে ও মুষ্টিমেয় ব্যক্তির ব্যাংক ব্যালেন্সের স্ফীতি ঘটেছে মাত্র!
আমরা বিরোধী দল। অবশ্য বিএনপির মতো নয়। জামায়াতের মতো তো নয়ই। ওদের বিরোধিতা ডানপন্থা ও সাম্প্রদায়িকতার দিক থেকে। আমাদের (বামপন্থি ও প্রগতিশীলদের) বিরোধিতা হলো বাম অবস্থান থেকে। এই সরকারকে সরিয়ে আমরা নিজেরা সরকারে যেতে চাই। অনেকের প্রশ্ন, তাই যদি হয় তাহলে সরকারকে আগে-ভাগে বিদ্যুত্ সঙ্কট সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াটা কি সরকারের বিরোধিতা করার বদলে তাকে সহায়তা করার কাজ হয়নি? সঙ্কট সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে পরামর্শ দেয়া তো সেক্ষেত্রে আরো বড় সহায়তা দেয়ার কাজ হয়েছে।
বেশ মনে পড়ছে, এমন একটি অবস্থা হয়েছিল এরশাদের আমলে। আমি তখন বিশাল ও জঙ্গি ক্ষেতমজুর সংগঠন ও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছি। মঙ্গার মৌসুম শুরুর বেশ কিছু আগেই সেবার দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার লক্ষণ টের পেয়ে আমরা সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের আশংকা ঠেকানোর জন্য কতগুলো জরুরি পদক্ষেপের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন ও প্রচারণার মুখে সরকার দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর জন্য আগেভাগেই কিছু আপত্কালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এর ফলে মঙ্গায় যতটা মড়কের আশঙ্কা ছিল, পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি। সে সময় একটি বড় দলের শীর্ষ নেত্রী আমাকে অভিযুক্ত করেছিলেন এ কথা বলে যে, আমি আগেভাগে আন্দোলনে নামাতেই এরশাদ সময়মতো সতর্ক হয়ে দুর্ভিক্ষে ব্যাপক মানুষের অনিবার্য মৃত্যু অনেকটাই ঠেকাতে পেরেছে। আমি এভাবে না নামলে এরশাদ ভয়াবহ মঙ্গা ও অনাহারে মৃত্যু ঠেকাতে পারত না। তাহলে অনাহারে মৃত্যু ঘটতো এবং সেসব মৃত্যুর ইস্যু তুলে এরশাদ-বিরোধী আন্দোলন আরো চাঙ্গা করা সম্ভব ও সহজ হতো।
এ ধরনের ভাবনার অমানবিকতা (এবং অবৈজ্ঞানিকতা-যুক্তিহীনতা)-র বিষয়টি একবার ভেবে দেখুন! এ ধরনের ভাবনার অর্থ হল: প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তি যে ‘খারাপ’ ও ‘গণবিরোধী’ তা তাদের স্বাভাবিক কাজ দ্বারা প্রতিফলিত হবে কি-না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে! তাদের ‘খারাপত্ব’-কে আমরা বাতাস দিয়ে বাড়িয়ে না দিলে মানুষের কাছে তাদের ‘ভালোত্ব’ প্রকাশ পেয়ে যাবে। এ ধরনের ভাবনা কি গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ‘ভালোত্ব’ সম্পর্কে এক ধরনের ইলিউশন বা মোহগ্রস্ততার বিভ্রান্তি নয়? বুর্জোয়া-পেটি বুর্জোয়া শ্রেণীর দল ও ব্যক্তির মধ্যেই কেবল এ ধরনের ভাবনা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। একই বিভ্রান্তি ভিন্ন রূপ নিয়ে ‘অতি-বিপ্লবীদের’ মাঝেও লক্ষ্য করা যায়। তারা অনেক ক্ষেত্রেই ভাবে যে, দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো দাবিগুলো সংগ্রাম করে আদায় করতে পারলে বিপ্লব পিছিয়ে যাবে। তারা বলতে চায় যে, শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক দুর্ভোগ যত বাড়বে, বিপ্লব ততো এগিয়ে যাবে। তাই বিপ্লবীদের উচিত, শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য চেষ্টা করার বদলে তা বাড়ানোর কাজে সহায়তা করা। এসব কথার অর্থ দাঁড়ায়:শোষকরা যেন ‘দুর্ভোগ’ সৃষ্টিতে যথেষ্ট পারদর্শী ও দক্ষ নয়! শোষকদের ‘দুর্ভোগ’ জন্ম দেয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে এটি তাদের মনের মধ্যে সংগোপনে লালিত সন্দেহের প্রকাশ এবং প্রকারান্তরে শোষকদের সম্পর্কে মোহাচ্ছন্নতা নয় কি?
সাধারণ মানুষের ‘ধারণা’, ইংরেজিতে যাকে আমরা peoples perception বলি, (তা সেটি যৌক্তিক অথবা অযৌক্তিক যে কারণেই জন্ম নিক না কেন) এবং সেই সাথে সামাজিক মনস্তত্ত্ব (social psychology) বুঝতে পারাটা রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে ঠিকমতো বুঝতে পারার বিষয়টি একটি মনোজগতের মনগড়া বিষয় নয়। মনোজগতের বাইরের বাস্তব বহির্জগতে বিরাজমান বিভিন্ন উপাদানকে ভিত্তি করেই কেবল এর অনুধাবন সম্ভব হতে পারে। তবে বহির্জগতের সব উপাদান নয়, কিছু কিছু উপাদান সেক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ। সবাই কিন্তু এই বিশেষ উপাদানগুলোকে চিনে নিতে পারে না। কেবলমাত্র অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান মানুষই তা ধরে উঠতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষাপটে সমাজ বাস্তবতার সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ সিগনাল কোনগুলো, তা তাদের এন্টিনাতে সহজেই ধরা পড়ে যায়।
কথায় বলে, ‘জয়কালে মরণ নাই/মরণকালে ঔষধ নাই’। বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদকাল এখন শেষের পথে। হানিমুন পিরিয়ড শেষ করে আরো প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় ধরে এই সরকারকে মানুষ দেখেছে। একটা সময় পর্যন্ত সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি-অন্যায়-অপরাধ সম্পর্কে মানুষ বলতো, ‘এসব কিছু হোঁচট খাওয়ার মতো ঘটনা তো ঘটতেই পারে! এগুলো কোনো বড় বিষয় নয়। সামনে আরো কতো কাজ হবে, দেখি না! সরকার ভালই করবে আশা করি।’ কিন্তু ‘পরিমাণগত পরিবর্তন’ একসময় ‘গুণগত পরিবর্তনে’ রূপান্তরিত হয়। মহাজোট সরকারের ক্ষেত্রে সম্ভবত সেই সময়ের রেখাটি পার হয়ে গেছে। এখন সরকারের ভালো কাজ, ভালো কথা দু’একটি দেখলে/ শুনলেও মানুষ বলছে—‘এসব কতো দেখেছি! এসবের আসল উদ্দেশ্য যে কি তা আমরা জানি না মনে করেন? দেখলাম তো অনেক! যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। আর তো পারি না বাঁচতে।’ বিদ্যুত্ নিয়ে সরকারের কাজ-কর্মের অবস্থা সম্পর্কে মানুষের ধারণা এখন অনেকটাই এরকম।
বিদ্যুত্ নিয়ে সরকারের কায়-কারবারকে শুধু ‘তুঘলকি’ বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সরকার সুপরামর্শ গ্রহণ করেনি। সে চলেছে ‘কু-শক্তির’ কু-পরামর্শে। তা হবেই বা না কেন? সরকার তো দেশি-বিদেশি কু-শক্তিরই স্বার্থরক্ষাকারী, সেই অশুভ শোষক শ্রেণীরই সরকার। বিএনপির অবহেলার ওপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার প্রচেষ্টা, নিজেদের ব্যর্থতাকে তা দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা, ‘ভিশন’ অমুক/‘ভিশন’ তমুকের ডুগডুগি বাজিয়ে সঙ্কট লাঘবের আশু ও বাস্তব অগ্রগতি সাধনে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা, বাগাড়ম্বর, উদাসীনতা, খামখেয়ালিপনা ইত্যাদি ছিল বিদ্যুত্ সম্পর্কে সরকারি কাজের বৈশিষ্ট্য। একথা ঠিক যে, বিদ্যুতের পুরো চাহিদা আলাদিনের চেরাগে ঘষা দিয়ে সহসা এক ফুত্কারে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ৪০/৪২ মাসে সঙ্কটের তীব্রতা লাঘব না হয়ে তা বাড়বে, সেটি কেমন কথা? এই সরকারের আমলে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। তা যদি সত্য হয় তাহলে প্রশ্ন আসে, সে বিদ্যুত্ তবে গেল কই? এসব পরিসংখ্যান ও তথ্যের ভেতর আছে মারপ্যাঁচ। ৩ হাজার মেগাওয়াট নতুন উত্পাদন ক্যাপাসিটি তৈরি হলেও এবং বর্ধিত উত্পাদনকারী ইউনিটগুলো কোনো না কোনো সময় তা উত্পাদন করে থাকলেও বাস্তবে তার বড় অংশকে পালাক্রমে ও নিয়মিতভাবে উত্পাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে বাস্তব ক্ষেত্রে নতুন সাপ্লাই যুক্ত হচ্ছে সামান্যই। তাছাড়া পুরনো ইউনিটগুলো সব সময় আগের পরিমাণে বিদ্যুত্ সাপ্লাই দিতে পারছে না। তাই নতুন যুক্ত হওয়া ৩ হাজার মেগাওয়াটের বিষয়টি হয়ে উঠেছে ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, কিন্তু গোয়ালে নেই’-এর মতো ব্যাপার।
বিদ্যুত্ সঙ্কট লাঘবের জন্য অভিনব কত কিছুই না সরকার করল। একবার বলা হল যে, ১ ঘণ্টার বদলে এখন থেকে ২ ঘণ্টা পর পর ২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে। তাতে কাজ হলো না। উপদেষ্টা মহোদয় জোর দিয়ে বললেন, ‘দিনের আলো সাশ্রয়’ ফর্মুলায় বছরের অর্ধেক সময়কাল ঘড়ির কাঁটা একঘণ্টা এগিয়ে আনলেই বিদ্যুত্ সঙ্কটের তীব্রতা কমে আসবে। কাজ হলো না তাতেও। বলা হলো যে, শিল্প-কারখানায় এলাকা অনুসারে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিদ্যুত্ সরবরাহ করলে (staggard supply) লোডশেডিং-এর সমস্যা কমে আসবে। মার্কেটগুলো বন্ধ রাখার দিনকেও রোটেশনে পৃথক করে দেয়া হলো। একই সাথে বলা হলো যে, শিল্প-কারখানা-কৃষিতে বিদ্যুত্ দেয়ার জন্য শহরে লোডশেডিং মেনে নিতে হবে। এতে কোনো ক্ষেত্রেই কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো না। মাঝখান থেকে শিল্প-কারখানা-কৃষিতে বিদ্যুত্ সরবরাহ কমার পাশাপাশি একই সাথে শহরের লোডশেডিংও বাড়তে থাকলো। সমস্যা লাঘব হলো না মোটেও। অথচ তিন বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো পাঁচবার। তা আবার বাড়ানো হবে বলে ইতোমধ্যে পুনরায় ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুত্ নিয়ে সরকারের খামখেয়ালিপনা ও তুঘলকি কাণ্ড-কারখানার কথা অনেকদিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে। এই খাতে যে বিশাল লুটপাট চলছে, তা নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু এবার এমন একটি পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেছে যা এসব গতানুগতিক ‘অপরাধের’ বাইরে নতুন এক বিপজ্জনক ধারার উন্মোচন ঘটিয়েছে। সেটি হলো ‘বেশি দাম দিলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের’ পৃথক ব্যবস্থা চালু। ১ জুন থেকে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই পদক্ষেপ রাষ্ট্রের, এমনকি একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে এতদিনের দর্শন ও ধারণাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিষয়টি গুরুতর। তা নিয়ে সুযোগমতো আগামীতে লেখার চেষ্টা করব।
n লেখক :সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
E-mail : selimcpb@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন