॥ মো: মতিউর রহমান ॥
তৎকালীন ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এম মোর্শেদ ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজ্ঞ। আইনের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে তার জুড়ি মেলা ভার। বিচার জগতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বিচারপতি মোর্শেদের প্রাজ্ঞ রায়গুলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আলোকবর্তিতা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের আইন আদালতের বর্তমান হালহকিকত দেখে তার একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে গেল। উক্তিটি হলো No tyranny is worse than judicial arbitrariness and no misfortune is worse than judicial subservienceÑ তার উক্তিটি প্রথম অংশ সম্ভবত উচ্চ আদালত ও দ্বিতীয় অংশ নিম্ন আদালতকে ল করে করা।
মানুষের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হলো আদালত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অবিচার ও জুলুম-নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে সংুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আদালতের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সেখানে যদি বিচারকদের ন্যায়পরায়ণতার অভাব কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা দেখা যায়, তাহলে মানুষের প্রতিকার চাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না।
বিচার-আচারের নিরপেতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের সংবেদনশীলতা সংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনিক কোনো কোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা মামলা একভাবে দেখছি। অন্যগুলো দেখছি ভিন্নভাবে। বিচারপতিদের একজনের প্রতি অনুরাগ ও অন্যজনের প্রতি বিরাগ প্রদর্শিত হয় কি নাÑ এ প্রশ্ন অনেকের মনকে আলোড়িত করছে। গত ৩ মে একটি রিট মামলার শুনানির সময় বিশিষ্ট কলাম লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে একটি বেঞ্চ আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এতে তার আইনজীবী ড. কামাল হোসেন সংশ্লিষ্ট বিচারপতির মনোভাবকে ‘কর্তৃত্ববাদী মাইনসেট’ বলে তার ােভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
কখনো কখনো উচ্চ আদালতের বিচারকেরা কোনো মামলার শুনানিতে বিব্রত বোধ করেন। কিন্তু কী কারণে বিব্রত বোধ করছেন, তার কারণ ব্যাখ্যা বা উল্লেখ করেননি। সাধারণত মামলা সংশ্লিষ্ট কোনো প রক্তের সম্পর্কের হলে বিচারকদের বিব্রত বোধ করার প্রশ্ন উঠতে পারে, অন্যথায় নয়। আর যদি একান্তই বিব্রত বোধ করেন তাহলে তার কারণ উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় সংবিধান ও শপথ লঙ্ঘন করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. জহির মোশনের (শুনানি গ্রহণ না করে) সময় বিচারপতিদের দ্বিমত পোষণ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি বিভক্ত রায়ের আধিক্যের পরিপ্রেেিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (সংশোধন) আইন ২০০৯ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট মামলায় সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দেয়ায় আবেদনকারীর আইনজীবী বিচারপতি টি এইচ খান ‘বিভক্ত রায়ের বিস্ফোরণ’ ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন।
আবার সম্প্রতি ল করা গেছে, উচ্চ আদালতের কোনো কোনো বিচারক কখনো কখনো আদালতের বাইরের কোনো বিষয়কে আদালত অবমাননা বলে গণ্য করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে তার আদালতে তলব করেন। প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা সাধারণত এ ধরনের ঘটনার শিকার হন বেশি। আদালতের বাইরের এবং আদালত সংশ্লিষ্ট বিষয় সমর্থক হতে পারে না। লণীয় যে, এসব েেত্র শুনানিকালে তাদের আদালতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে প্রতিভাত হয়। এতেও ‘আদালতের কর্তৃত্ববাদী মাইনসেটের’ প্রকাশ ঘটছে, যা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব ভর করছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ বিচারকদের শুধু ন্যায়বিচার করলেই চলবে না, ন্যায়বিচার যে করেছেন তা প্রদর্শন করতে হবে। এটা বিচারব্যবস্থার মৌলনীতি।
এবার নিম্ন আদালতের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতিতে (অনুচ্ছেদ-২২) নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করার কথা থাকলেও তা আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য না হওয়ায় মাজদার হোসেন মামলাকে মোম অস্ত্র মনে করে মূল বিষয়বস্তু থেকে সরে গিয়ে সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয়, যার ফলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়ে যায়। উল্লেখ্য, মুন সিনেমা হলের মালিকানা সংক্রান্ত মামলায় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করলেও মুন সিনেমার মালিকানার সুরাহা এখনো হয়নি। এখানে ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগ ও বিশেষ মাইন্ডসেট কাজ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এখন প্রশ্ন হলোÑ বিচার বিভাগ পৃথক করায় জনস্বার্থ কতটুকু সুরা পেয়েছে?
বিচার বিভাগ পৃথক করলেও পুলিশ এবং পুলিশের মাধ্যমে সরকার বিবর্তনমূলক আইন ও ধারা প্রয়োগ করে। প্রতিপকে বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। সে েেত্র বিচার বিভাগের পৃথক-করণের পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ল করা গেছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জামিনে নিম্ন আদালতের সাহস ও নিরপেতার অভাব পরিলতি হচ্ছে। বিরোধী জোটের ৩৩ জন নেতাকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠানো আইনের শাসনের চরম অবমাননা বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। এ েেত্র বিচারকসুলভ মনোভাবের বদলে অন্য কোনো মনোভাব কাজ করছে বলে প্রতিভাত হয়। বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও বিচারকেরা স্বাধীন নন। এ কারণে বাধ্য হয়ে আসামিপকে উচ্চ আদালতে আগাম জামিন চাইতে হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উচ্চ আদালত অবরুদ্ধ এবং বিচার ও জামিনপ্রার্থীদের পথ রুদ্ধ করে রাখতে দেখা গেছে। তাহলে বিচারপ্রার্থীরা যাবেন কোথায়? বিচার পাওয়ার পথ রুদ্ধ হলে সহিংসতাকে তা উসকে দেয়। আর নিম্নœ আদালতে হাজির হতে না চাওয়ার অন্যতম একটি বড় কারণ হলো রিমান্ডের ভয়। আর রিমান্ড মানে নির্যাতন এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহ ও বাড়াবাড়ি যেমন রয়েছে তাদের ওপর সরকারের চাপও তেমন রয়েছে। উভয় েেত্র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারক সুলভ মনোভাব ও সৎসাহসের পরিচয় দিতে হবে এবং রিমান্ড ধারার অপপ্রয়োগ রোধ করতে হবে। তাদের শির থাকবে চির উন্নত, বশংবদ হলে ন্যায়বিচার হবে সুদূর পরাহত।
তাই, বিচারপতি এস এম মোর্শেদের অমর উক্তি স্মরণে রেখে সংবিধানে বর্ণিত শপথ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের বিচারকেরা ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে কিংবা স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের পরিচয় না দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের প্রতিকার প্রদান করবেন এবং নিম্ন আদালত বশংবদ না হয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন এটাই সবার কাম্য।
লেখক : সাবেক সচিব ও কলাম লেখক
তৎকালীন ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এম মোর্শেদ ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজ্ঞ। আইনের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে তার জুড়ি মেলা ভার। বিচার জগতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বিচারপতি মোর্শেদের প্রাজ্ঞ রায়গুলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আলোকবর্তিতা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের আইন আদালতের বর্তমান হালহকিকত দেখে তার একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে গেল। উক্তিটি হলো No tyranny is worse than judicial arbitrariness and no misfortune is worse than judicial subservienceÑ তার উক্তিটি প্রথম অংশ সম্ভবত উচ্চ আদালত ও দ্বিতীয় অংশ নিম্ন আদালতকে ল করে করা।
মানুষের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হলো আদালত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অবিচার ও জুলুম-নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে সংুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আদালতের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সেখানে যদি বিচারকদের ন্যায়পরায়ণতার অভাব কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা দেখা যায়, তাহলে মানুষের প্রতিকার চাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না।
বিচার-আচারের নিরপেতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের সংবেদনশীলতা সংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনিক কোনো কোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা মামলা একভাবে দেখছি। অন্যগুলো দেখছি ভিন্নভাবে। বিচারপতিদের একজনের প্রতি অনুরাগ ও অন্যজনের প্রতি বিরাগ প্রদর্শিত হয় কি নাÑ এ প্রশ্ন অনেকের মনকে আলোড়িত করছে। গত ৩ মে একটি রিট মামলার শুনানির সময় বিশিষ্ট কলাম লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে একটি বেঞ্চ আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এতে তার আইনজীবী ড. কামাল হোসেন সংশ্লিষ্ট বিচারপতির মনোভাবকে ‘কর্তৃত্ববাদী মাইনসেট’ বলে তার ােভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
কখনো কখনো উচ্চ আদালতের বিচারকেরা কোনো মামলার শুনানিতে বিব্রত বোধ করেন। কিন্তু কী কারণে বিব্রত বোধ করছেন, তার কারণ ব্যাখ্যা বা উল্লেখ করেননি। সাধারণত মামলা সংশ্লিষ্ট কোনো প রক্তের সম্পর্কের হলে বিচারকদের বিব্রত বোধ করার প্রশ্ন উঠতে পারে, অন্যথায় নয়। আর যদি একান্তই বিব্রত বোধ করেন তাহলে তার কারণ উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় সংবিধান ও শপথ লঙ্ঘন করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. জহির মোশনের (শুনানি গ্রহণ না করে) সময় বিচারপতিদের দ্বিমত পোষণ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি বিভক্ত রায়ের আধিক্যের পরিপ্রেেিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (সংশোধন) আইন ২০০৯ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট মামলায় সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দেয়ায় আবেদনকারীর আইনজীবী বিচারপতি টি এইচ খান ‘বিভক্ত রায়ের বিস্ফোরণ’ ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন।
আবার সম্প্রতি ল করা গেছে, উচ্চ আদালতের কোনো কোনো বিচারক কখনো কখনো আদালতের বাইরের কোনো বিষয়কে আদালত অবমাননা বলে গণ্য করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে তার আদালতে তলব করেন। প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা সাধারণত এ ধরনের ঘটনার শিকার হন বেশি। আদালতের বাইরের এবং আদালত সংশ্লিষ্ট বিষয় সমর্থক হতে পারে না। লণীয় যে, এসব েেত্র শুনানিকালে তাদের আদালতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে প্রতিভাত হয়। এতেও ‘আদালতের কর্তৃত্ববাদী মাইনসেটের’ প্রকাশ ঘটছে, যা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব ভর করছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ বিচারকদের শুধু ন্যায়বিচার করলেই চলবে না, ন্যায়বিচার যে করেছেন তা প্রদর্শন করতে হবে। এটা বিচারব্যবস্থার মৌলনীতি।
এবার নিম্ন আদালতের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতিতে (অনুচ্ছেদ-২২) নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করার কথা থাকলেও তা আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য না হওয়ায় মাজদার হোসেন মামলাকে মোম অস্ত্র মনে করে মূল বিষয়বস্তু থেকে সরে গিয়ে সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয়, যার ফলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়ে যায়। উল্লেখ্য, মুন সিনেমা হলের মালিকানা সংক্রান্ত মামলায় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করলেও মুন সিনেমার মালিকানার সুরাহা এখনো হয়নি। এখানে ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগ ও বিশেষ মাইন্ডসেট কাজ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এখন প্রশ্ন হলোÑ বিচার বিভাগ পৃথক করায় জনস্বার্থ কতটুকু সুরা পেয়েছে?
বিচার বিভাগ পৃথক করলেও পুলিশ এবং পুলিশের মাধ্যমে সরকার বিবর্তনমূলক আইন ও ধারা প্রয়োগ করে। প্রতিপকে বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। সে েেত্র বিচার বিভাগের পৃথক-করণের পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ল করা গেছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জামিনে নিম্ন আদালতের সাহস ও নিরপেতার অভাব পরিলতি হচ্ছে। বিরোধী জোটের ৩৩ জন নেতাকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠানো আইনের শাসনের চরম অবমাননা বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। এ েেত্র বিচারকসুলভ মনোভাবের বদলে অন্য কোনো মনোভাব কাজ করছে বলে প্রতিভাত হয়। বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও বিচারকেরা স্বাধীন নন। এ কারণে বাধ্য হয়ে আসামিপকে উচ্চ আদালতে আগাম জামিন চাইতে হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উচ্চ আদালত অবরুদ্ধ এবং বিচার ও জামিনপ্রার্থীদের পথ রুদ্ধ করে রাখতে দেখা গেছে। তাহলে বিচারপ্রার্থীরা যাবেন কোথায়? বিচার পাওয়ার পথ রুদ্ধ হলে সহিংসতাকে তা উসকে দেয়। আর নিম্নœ আদালতে হাজির হতে না চাওয়ার অন্যতম একটি বড় কারণ হলো রিমান্ডের ভয়। আর রিমান্ড মানে নির্যাতন এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহ ও বাড়াবাড়ি যেমন রয়েছে তাদের ওপর সরকারের চাপও তেমন রয়েছে। উভয় েেত্র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারক সুলভ মনোভাব ও সৎসাহসের পরিচয় দিতে হবে এবং রিমান্ড ধারার অপপ্রয়োগ রোধ করতে হবে। তাদের শির থাকবে চির উন্নত, বশংবদ হলে ন্যায়বিচার হবে সুদূর পরাহত।
তাই, বিচারপতি এস এম মোর্শেদের অমর উক্তি স্মরণে রেখে সংবিধানে বর্ণিত শপথ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের বিচারকেরা ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে কিংবা স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের পরিচয় না দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের প্রতিকার প্রদান করবেন এবং নিম্ন আদালত বশংবদ না হয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন এটাই সবার কাম্য।
লেখক : সাবেক সচিব ও কলাম লেখক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন