রবিবার, ৩ জুন, ২০১২

পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরিবেশ সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে



 ড. শামছুল আলম সেলিম  
মা নুষ স্বভাবতই জানতে চায়। এই জানতে চাওয়া বা জানার কৌতূহল মানুষের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। একজনের সঙ্গে অপরজনের দেখা-সাক্ষাত্ কিংবা ফোনালাপ হলে ‘কেমন আছিস বা কেমন আছেন’ এই জিজ্ঞাসার মধ্যে জানতে চাওয়ার অন্তর্নিহিত অর্থ জড়িয়ে আছে। জানতে চাওয়ার মধ্যে সীমা-পরিসীমা নেই। ব্যক্তি মাত্রেরই নিজ এবং নৈকট্য ছাড়াও দূরের এবং বহির্বিশ্বের খবরা-খবরও জানার চাহিদা রয়েছে।  জার্মানীর জোহান গুটেনবার্গ ১৪১৪ সালে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের ফলে মানুষের জানার আগ্রহে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়।  বলা যায়, এই মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর ছেপে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হয়। সেই সময়ে (১৫ শতক থেকে) জার্মানী থেকে প্রচলিত ধরনের সংবাদপত্র প্রকাশ হতে শুরু করে। এর দেড় শ বছর পর ১৬৬৫ সালে ইংল্যান্ড থেকে সংবাদপত্র প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়। ১৭৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম দৈনিক প্রকাশিত হয় Pennsylvania নামে. কাছাকাছি সময়ে চীন থেকে Renmin Ribao নামে সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। জাপানের প্রথম সংবাদপত্র Yokohama Mainichi Shimbun প্রকাশিত হয় ১৮৭০ সালে। প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমাদের ভারতীয় উপ-মহাদেশে সংবাদপত্রের প্রচলন শুরু হয় আরো পরে। ভারতীয় উপ-মহাদেশে প্রচলিত সংবাদপত্রের প্রচলন শুরু হয়েছিলো মোঘল আমলে। রাজ্যের অভ্যন্তরে সংঘটিত ঘটনাবলী জানার জন্য মোঘল শাসকগণ স্ব স্ব রাজ্যে সংবাদ লেখক নিয়োগ করতেন। এই সংবাদ লেখকদের বলা হতো ওয়াকিয়ানভীস। জানা যায়, এ  সংবাদপত্রের নাম ছিলো আখবার বা বাংলায় যার অর্থ সংবাদপত্র। বাংলা-অঞ্চলে সর্বপ্রথম ১৮১৮ সালে স্থানীয় সাংবাদিকতার উদ্ভব ঘটে। একজন ইংরেজ বাংলা সাংবাদিকতার প্রচলন করেন। জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে মাসিক দিগদর্শন নামে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
একটি সংবাদপত্র হাতে পাওয়া মাত্রই পাঠক দেশ-বিদেশ সম্পর্কে পুরো তথ্য জানতে পারে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশ-বিদেশের এই তথ্য জানানোর দায়িত্ব পালন করছে একদল লোক, যারা সাংবাদিক নামে পরিচিত। সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক একে অপরের পরিপূরক। সাংবাদিকের লেখা ‘সংবাদ’ কাগজের পৃষ্ঠা ভরে সংবাদপত্রের রূপ লাভ করে।  একজন সাংবাদিক কে? এ নিয়ে তাত্ত্বিকগণ ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। আর ডি ব্লুমেনফেল্ড এর মতে, ‘যে ব্যক্তি সংবাদ সংগ্রহ করে এবং তাকে সংবাদ উপযোগী করে তৈরি ও প্রকাশ করেন তিনিই সাংবাদিক।’ টি এইচ এস স্কট বলেন, ‘একটি প্রদেয় লক্ষ্যানুযায়ী সাময়িক বিরতিতে লেখার মাধ্যমে যিনি জনমতকে প্রভাবিত করতে চান, তিনিই সাংবাদিক।’ দ্য টাইমস্ এর উইকহ্যামস্টিডের মতে, ‘একজন আদর্শ সাংবাদিক হচ্ছেন তিনি, যিনি আত্মীয়করণ করে নিপুণতা অর্জন করেছেন প্রাচীনের প্রাজ্ঞতা, অধিকতর আধুনিকের দর্শন, বৈজ্ঞানিকের জ্ঞান, প্রকৌশলীর যন্ত্রবিদ্যা, তার নিজের ও অন্যান্য সময়ের ইতিহাস, অর্থনীতির মূল শর্তাবলী, সামাজিক রাজনৈতিক জীবন, চিন্তা-ভাবনা ও তার উপলদ্ধি এবং চাহিদা অনুযায়ী তার সরবরাহ আর লক্ষ লক্ষ পাঠকের ইচ্ছা পূরণার্থে নীতিগতভাবে সেগুলো জ্ঞাত করা।’ Journalistpedia গ্রন্থে বলা হয়, ‘Journalist is a formal name for a newsman. More used in England than United States, where reporter and newsman seem to be preferred by those in the working press.
এই সাংবাদিকদের কল্যাণে সংবাদপত্রে দেশ-বিদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার চালচিত্র ফুটে ওঠে। এজন্য সংবাদপত্রকে অনেকে সমাজের দর্পণ আবার কেউবা সমাজের প্রতিচ্ছবি বলে থাকেন। এই তথ্য জানানোর যারা গুরু দায়িত্ব পালন করেন এবং ক্যামেরায় ধারণ করেন ‘খবরের ছবি’ বিভিন্ন সময়ে কাল-কালান্তরে তারা নিগ্রহ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিংশ শতকের শেষে উত্তর আধুনিক যুগে বিশ্বব্যাপী অবাধ তথ্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। এই তথ্য প্রবাহের উত্কর্ষ সাধনের সঙ্গে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কোনো রিপোর্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে গেলে তাকে তোপের মুখে পড়তে হয়। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যম ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন এবং প্রশাসনের মিডিয়া বিরোধী আচরণ নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
নিজ বাসগৃহ, রাস্তাঘাট কিংবা অফিসে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসী কর্তৃক মারধরের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে পুলিশেরও বেধড়ক পিটুনির শিকার হতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটা রাষ্ট্রের অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটি। রাষ্ট্র একটি প্রশাসনিক যন্ত্র। বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষার মূল দায়িত্ব পালন করে পুলিশ বিভাগ। সেই পুলিশ যদি নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তা দুঃখজনক বৈকি। আমরা এটাও জানি যে, বিভিন্ন সরকারের সময় পুলিশ এ ঘটনা ঘটাতে পারঙ্গম। এটা দেখতে দেখতে আমরা অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বরং আমাদের বিস্মিত করে, যখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের প্রধান পর্যন্ত পুলিশের নির্যাতনের পক্ষে সাফাই গাইতে চেষ্টা করে। সাংবাদিকদের নামে মামলা করতে  মন্ত্রীদের উত্সাহ দেন।
এবার বিগত এক দশকে সাংবাদিক নির্যাতনের একটি চিত্র তুলে ধরা যাক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান একটি পত্রিকায় তাঁর এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে মোট ১৫৪টি, যেসব ঘটনার শিকার হয়েছেন ২৮৮জন সাংবাদিক। এরমধ্যে ১০১জন সাংবাদিকই নির্যাতিত হন সংবাদ প্রকাশের জের ধরে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন ১১০জন সাংবাদিক। পাশাপশি সরকারি দলের কর্মকর্তা, কর্মচারি, ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার ৮৯ সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রত্যক্ষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৭জন সাংবাদিক। গত বছর খুন হয়েছেন দু’জন সাংবাদিক। এ বছরের গত চার মাসে মোট ৩২টি ঘটনায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৪জন সাংবাদিক। নিজ বাসভবনে খুন হয়েছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।’
২০১১ সালের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, মিডিয়া মন্ত্রীদের ব্যাপারে কোনো অসত্য খবর প্রচার বা প্রকাশ  করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দেবেন। কিন্তু তিনি বলেননি মন্ত্রীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে গণমাধ্যম যদি তথ্যনির্ভর খবর প্রকাশ বা প্রচার করে তাহলে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন। আমরা ধারণা করি, প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীদের দ্বারা প্রভাবিত এবং উত্সাহিত হয়ে উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন। মন্ত্রী পরিষদের ওই বৈঠকের একদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, দেশের মিডিয়া দেশটাকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য মন্ত্রীকে যেখানে সাংবাদিকদের ব্যাপারে সংযত হয়ে কথা বলতে পরামর্শ দেবেন, সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আরো উসকে দিচ্ছেন। এতে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন যে আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়, তা কী আর বলার অপেক্ষা রাখে?  গণমাধ্যম বিশ্লেষকগণ মনে করেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নরম হলে কিংবা মাটি না থাকলে সরকার এ ধরনের আচরণ করে। মিডিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। আমরা মনে করি সরকারের ভেতর এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। এখানে একটি বিদেশি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান সরকারকে ‘এ’ গ্রেড নম্বর দিলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। ওই প্রতিষ্ঠানের জরিপে সরকারের জনপ্রিয়তা সত্তর শতাংশ হলেও বাস্তবে এই চিত্র ভিন্ন। বর্তমানে মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ সরকার ইমেজ সংকটে ভুগছে। মে মাসের শেষ সপ্তাহটি সরকারের জন্য ভালো যায়নি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরে বাংলা নগরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের কিল, ঘুষি ও বেধড়ক লাঠিপেটায় প্রথম আলোর তিন ফটো সাংবাদিককে আহত করা, এরপর অনলাইন একটি সংবাদ সংস্থার মহাখালীস্থ অফিসে কতিপয় যুবক ভেতরে ঢুকে সংবাদকর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর এবং সবশেষে আদালত চত্বরে পুলিশ ক্লাবে এক মহিলাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা সরকারের ইমেজ সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের আইজি সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছেন। এবং ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে নয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থায় হামলার ঘটনায় কয়েকজন যুবক গ্রেফতার হয়েছে। আদালত চত্বরের ঘটনায় পুলিশের কয়েকজনকে সেখান থেকে প্রত্যাহার এবং কয়েকজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে জনসাধারণের কাছে এসবের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সাংবাদিক পেটানোর ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ‘পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন’ বক্তব্যে। গণমাধ্যমগুলো এ নিয়ে নানা ধরনের ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ করছে।   
পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন-এই কথা বলার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়তো বুঝতে পারেননি তিনি কী বলছেন। তাঁর এ কথার মধ্যদিয়ে পুলিশ ইতরবিশেষ প্রাণি  হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। ইতরবিশেষ প্রাণি থেকে মানুষ সংক্রণের আশংকায় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যখন বুঝতে পেরেছেন, তিনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অস্বীকার করতে চেয়েছেন। ‘যতো দোষ নন্দ ঘোষের’ মতো তিনি সাংবাদিকদের ওপর দায় চাপিয়ে বলেছেন যে, তিনি এ কথা বলেননি। সাংবাদিকরা তার বক্তব্য ‘টুইস্ট’ করেছে। বিপদে পড়ে গেলে কিংবা বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হলে বক্তব্য টুইস্ট করেছে-এ ধরনের ব্যাখ্যা জনসাধারণ বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না।
মে মাসের তিনটি ঘটনার মধ্যে সাংবাদিক পেটানো এবং মহিলাকে যৌন হয়রানির ঘটনাটি এড়ানো যেতো। এ দু’টি ঘটনায় সরকারের ইমেজে যে কালিমা লেপন হয়েছে, তা মুছে ফেলার উপায় কী? সরকার এসব ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে ভাবমূর্তি কিছুটা পুনরুদ্ধার হতে পারে। কিন্তু, বিষয়টি এতো সহজ নয়। পুলিশকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বা শিক্ষা দিতে সব সরকারেরই পিছুটান থাকে। একথা কেউ অস্বীকার করবে না যে, প্রতিটি সরকারের সময়ই পুলিশ লাইসেন্সধারী সরকারি পেটুয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করে। সুতরাং তাদেরকে যখন বলা হবে বিরোধী দলকে শায়েস্তা করতে, তখন তারা সরব ভূমিকা পালন করবে। এজন্য কোনো সরকারই চায় না, পুলিশকে পারতপক্ষে স্থায়ী শাস্তি দিতে। এজন্য পুলিশ প্রশাসনে সাময়িক বরখাস্ত এবং ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।   
প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁর সভাষদ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করতে বলেন সরকারেরই মঙ্গল এবং সাংবাদিকরাও থাকে নিরাপদ। সাংবাদিক পিটিয়ে কেউ ক্ষমতায় স্থায়ী হতে পারেনি এবং তথ্যও অপ্রকাশ থাকেনি। সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। যদি তা ব্যাহত হয় তবে সে ক্ষতি সরকারের।  
সরকার প্রধানের  পক্ষ থেকে যদি সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের নামে মামলা করার কথা বলা হয় তখন সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুব্যবস্থাটি নড়বড়ে হয়ে যায়।  এ অবস্থায় সাংবাদিকরা নিপীড়িত হলে বিচার চাইবার আদালত ছাড়া আর কেউ থাকে না। কিন্তু বিশ্ব সমাজ ব্যবস্থায় আমরা লক্ষ্য করছি যে, সাংবাদিক সরকারের সুহূদ। বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, জনসাধারণ এখনো শিক্ষক, চিকিত্সক এবং সাংবাদিকদের কথা শোনে এবং  বিশ্বাস করে। টি এইচ স্কট যথার্থই বলেছেন, সাংবাদিকরা লেখার মাধ্যমে জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে। এজন্য উন্নত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাংবাদিকরা বিশেষ সম্মানের অধিকারী এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। নেতিবাচক সংবাদের উল্টো দিক হলো ইতিবাচক। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই কমবেশি তোষামোদকারী। তারা সরকারের বা নিজের দুর্বলতা চেপে যান এবং অন্যকে তা অবহিত করেন না। গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে তা গোচরীভূত হয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং অপরাপর অস্থিতিশীল রাষ্ট্রগুলোতে এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃতপক্ষে সরকার যখন অসহিষ্ণু হয়ে উঠে, অস্থিরতায় ভোগে তখনই চড়াও হয় গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর। স্বাধীনতা পূর্ব থেকে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সরকারের সময় থেকে এই অবস্থা বিরাজ করছে। এই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। সময় গড়িয়েছে। কোনো কোনো রাজনীতিবিদের বয়সও হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির  গুণগত পরিবর্তন হয়নি। আমরা দাবি করতে পারি যে, রাজনীতির পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু সেটা পশ্চাদমুখী।  আগামীতে যে রাজনীতির উত্কর্ষ সাধন হবে, আমরা সে ব্যাপারে আশাবাদী  হতে পারছি না। এর কারণ, নতুন নেতৃত্বে আমরা সে রকম লক্ষণ  দেখছি না। এরপরও মানুষ যেহেতু স্বপ্ন দেখে,  স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। সুতরাং আমরাও স্বপ্ন দেখি, প্রত্যাশা করি আমাদের সরকার, রাজনীতিবিদ, নেতা-কর্মী, পুলিশ সকলেই সাংবাদিকদের ব্যাপারে সহনশীল হবেন। দায়িত্বশীল পদে থেকে ‘দায়িত্বশীল’ আচরণ করবেন।
++লেখকদ্বয়: অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,
e-mail: drshamsulalamgp@gmail.com
স্থানীয় সাংবাদিকতা বিষয়ক গবেষক
e-mail: asumanprju@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন