সোমবার, ২১ মে, ২০১২

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ কেবলই একটি স্লোগান নয়


ফাহমিদ-উর-রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনৈতিক স্লোগান হচ্ছে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্লোগান হচ্ছে জয় বাংলা। একই বাংলাদেশে বসবাস করে ও একই বাংলা ভাষায় কথা বলার পরও এই দুটি দলের রাজনৈতিক স্লোগানের ভিন্নতা শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়, সাংস্কৃতিক চেতনার তফাতের কারণে সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলতে বাংলাদেশের অধিকারভুক্ত এলাকা এবং এই এলাকার মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চেতনাকে প্রতিফলিত করে। জয় বাংলা বলতে বাংলাদেশের অধিকারভুক্ত রাজনৈতিক সীমানার বাইরেও ভারতের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল ও তার লোকজনকেও বোঝানো হয়ে থাকে। এ দেশে বাঙালি ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যে দ্বন্দ্ব তার ভিত্তি যত না রাজনৈতিক তার চেয়ে অনেক বেশি সাংস্কৃতিক। বাংলা ভাষায় আছে অনেক আরবি ফারসি শব্দ। এসব শব্দ কিছুটা এসেছে ধর্মীয় কারণে। কিন্তু অধিকাংশ আরবি শব্দ এসেছে ফারসি ভাষার মাধ্যমে। ফারসি এদেশের রাষ্ট্রভাষা ছিল ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত। এরপরে ইংরেজরা ফারসি বাদ দিয়ে ইংরেজি চালু করে। ভাষাতাত্ত্বিকরা মনে করেন, বর্তমানে বাংলা ভাষায় প্রায় তিন হাজার আরবি ফারসি তুর্কি শব্দ চালু আছে। এদেরকে বাংলা ভাষা থেকে কার্যকর অর্থে বহিষ্কার করা সম্ভব নয় এবং সেটা করতে গেলে বাংলা ভাষা প্রায় অচল হয়ে যাবে। এই কাগজ-কলমের মতো আরবি শব্দ বাংলা ভাষার সঙ্গে এত গভীরভাবে মিশে গেছে যে, এদেরকে আর ভিন্ন দেশীয় বলে মনেই হয় না। তেমনি জিন্দাবাদ শব্দটা হচ্ছে ফারসি। এটি রাজনৈতিক স্লোগানের আকারে বাংলা ভাষায় এসে মিশেছে। ইংরেজ আমলে আমরা বলেছি, ইনকিলাব জিন্দাবাদ। এ স্লোগানটা এক সময় কমিউনিস্টরা বেশি দিত। এর বাংলা করলে দাঁড়ায় বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। ফারসি ভাষায় ইনগিলাব মানে দ্রুত পরিবর্তন অথবা বিপ্লব। ফারসি শব্দ ইনগিলাব উর্দুতে হয়েছে ইনকিলাব। কলকাতার সাহিত্য সংসদের অভিধানে দেখা যায় জিন্দাবাদ, জিন্দিগি, জিন্দা, জান প্রভৃতি জীবন সংক্রান্ত শব্দগুলো বাংলায় ব্যবহৃত শব্দ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তাই একে এখন বিদেশি বলে ভাববার কারণ নেই। যারা এরকম ভাবেন তারা আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকেই অস্বীকার করতে চান। সৃষ্টি করতে চান রাজনৈতিক বিতর্ক। বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে সম্ভবত রাজনৈতিক বিতর্ক এড়ানোর জন্য বাংলাদেশ জিন্দাবাদ কথাটার তরজমা করেন বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। তরজমা হিসেবে এটা সঠিক হয়েছে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা শব্দের সাংস্কৃতিক তাত্পর্য অনেক সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন ওই শব্দের মূলানুগ তরজমা করে সাংস্কৃতিক তাত্পর্যকে বোঝানো সম্ভব নয়। যেমন আমরা অনেক সময় কমরেড শব্দটা ব্যবহার করি। এর বাংলা হচ্ছে বন্ধু। কিন্তু বন্ধু শব্দ দিয়ে কমরেড শব্দের সাংস্কৃতিক ব্যঞ্জনা ধরা সম্ভব নয়। ব্রিটিশ আমলে কংগ্রেসের একটা রাজনৈতিক স্লোগান ছিল—বন্দে মাতরম। এটি এখনও ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে। বন্দে মাতরম শব্দের অর্থ হচ্ছে দেশবন্দনা বা দেশপূজা। এখানে হিন্দুধর্মীয় ঐতিহ্য অনুকরণ করে দেশের প্রকৃতিকে মা দুর্গার এক বিশেষ ভঙ্গির সঙ্গে কল্পনা করা হয়েছে। মুসলিম নেতারা সে সময় এ স্লোগানের প্রতিবাদ করেছিলেন এ বলে যে, এ স্লোগানটি পৌত্তলিক ভাবধারায় পরিপুষ্ট। এ স্লোগানে দুর্গামূর্তিকে কেন্দ্র করে দেশপ্রেমের রূপ গ্রহণ করেছে। তাই মুসলমানরা স্লোগানকে ন্যাশনাল স্লোগান হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। এই সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে মুসলিম রাজনীতি সেদিন কংগ্রেস থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল এবং বন্দে মাতরম স্লোগান একটা বড় অনুঘটকের কাজ করেছিল। রবীন্দ্রনাথও এই ব্যাপারটা এক সময় কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন এবং বুদ্ধদেব বসুর কাছে চিঠি লিখে বলেছিলেন, বন্দে মাতরম স্লোগান নিয়ে কংগ্রেসের বাড়াবাড়িটা অনুচিত হয়েছে।
যাই হোক, এক সময় বাংলার মুসলমান এক বিশেষ ধরনের বাংলা ভাষায় কথা বলতেন। এই বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য ছিল আরবি, ফারসি শব্দের আধিক্য। এটাকে তাই বলা হতো মুসলমানি বাংলা। এই ভাষার একটা লিখিত রূপও ছিল। এই বাংলায় লিখিত বইগুলো পড়তে হতো উল্টো দিক থেকে। অর্থাত্ এখন বাংলা বইয়ের যা প্রথম পৃষ্ঠা এসব বইয়ের তা হলো শেষ পৃষ্ঠা। বাঙালি মুসলমানদের ওপর এই মুসলমানি বাংলার প্রভাব তখন এত বেশি ছিল যে, খ্রিস্টান মিশনারিরা তাদের ধর্ম প্রচারের জন্য এই মুসলমানি বাংলায় বাইবেলের তরজমা করে। খ্রিস্টান মিশনারি রেভারেন্ড গোল্ডস্যাক এই মুসলমানি বাংলায় একটা অভিধান সঙ্কলন করেন, যাতে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারে সহায়ক হয়। গোল্ডস্যাকের অভিধানে ছয় হাজার আরবি ফারসি তুর্কি শব্দের স্থান হয়, যা সেকালের মুসলমান সমাজে প্রচলিত ছিল। কিন্তু হিন্দু সমাজে অতি প্রচলিত ছিল না। সে সময় মার্জিত, রুচিশীল বাংলা বলতে আরবি-ফারসিবহুল বাংলাকেই বোঝানো হতো। ১৭৭৮ সালে হ্যালহেড সাহেব বাংলা ভাষার যে বিখ্যাত ব্যাকরণ প্রকাশ করেন, সেই বইয়ের ভূমিকায় তিনি বলেছেন, মার্জিত বাংলা হলো বাংলা ক্রিয়াপদের সঙ্গে অজস্র ফারসি ও আরবি বিশেষ পদযুক্ত বাংলা। বাংলা ভাষার এই যে বিশেষ ইতিহাস তা আজকে রাজনৈতিক কারণে একদল বুদ্ধিজীবী আড়াল করে রাখতে চাচ্ছেন। বাংলাদেশ যদি স্বাধীনতা না হারাত ও ইংরেজ অধিকারে না আসত তবে সম্ভবত এই মুসলমানি বাংলাকেই ভাবা হতো স্বাভাবিক বাংলা। আমরা এই ভাষাকেই মেনে নিতাম আমাদের আবেগ ও ভাবপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে।
ইংরেজ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। এই কলেজের কর্তাব্যক্তিরা ইংরেজের উত্সাহে বাংলা ভাষার মুসলমানি ঐতিহ্যকে সাফ-সুতরো করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন এবং সেই ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষার রূপই অনেকখানি বদলে ফেলা হয়। ভাষা ও সংস্কৃতি হচ্ছে একটা জাতির আত্মপরিচয়ের খুব শক্ত মাধ্যম। ইংরেজরা ক্ষমতা নিয়েছিল মুসলমানদের কাছ থেকে। সুতরাং তাদের তাত্ক্ষণিক প্রয়োজন ছিল বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয় ফুটোফাটা করে দেয়া, যাতে তারা আর মাথা না তুলতে পারে। এই কারণেই তারা ফোর্ট উইলিয়ামের পণ্ডিতদের দিয়ে এক সাংস্কৃতিক যুদ্ধ শুরু করে। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে সেই প্রথম আগ্রাসন শুরু হয়। ফোর্ট উইলিয়ামের এই ভূত কিন্তু আজও আমাদের ঘাড় থেকে নামেনি। বাংলা ভাষার এই মুসলমানি ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে আজও ক্রুসেড চলছে। মরহুমকে যারা প্রয়াত বানাতে চান তারা এই সাংস্কৃতিক ক্রুসেডকারীদেরই দলে।
দেশে এখন প্রমিত বাংলা ব্যবহারের জন্য খুব হৈচৈ চলছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে উপগ্রহ সংস্কৃতির ধাক্কায় বাংলা ভাষা আবার আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়েছে। ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার সরগরমে বাংলা ভাষা এখন পুনরায় তার মার্জিত রূপ হারিয়ে ফেলার শঙ্কার মধ্যে আছে। এর থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? বাংলা ভাষাকে রক্ষা করতে হলে বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাহিত্যিক, কবি, কথক, উপস্থাপক, শিল্পী সবাইকে আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের দিকগুলো নিয়ে সচেতন হতে হবে।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ ভারতের জয় হিন্দ স্লোগানের অনুকরণে এখানে জয় বাংলা স্লোগান চালু করে। কিন্তু বাংলাদেশ হওয়ার পর এদেশের মানুষ ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করে। একটা স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে তারা তাদের আত্মপরিচয় খোঁজার চেষ্টা করে। তারা বোঝার চেষ্টা করে তাদের পৃথক ইতিহাসের ধারাকে। বাংলাদেশের বাঙালি ও ভারতীয় বাঙালি একই ভাষায় কথা বললেও কার্যত তারা এক নয়। দু’জনের মনোলোক একই ধারায় প্রবাহিত নয়। দুই বাঙালির ধর্মবিশ্বাসও পৃথক। একটা জাতি গড়ে ওঠে ইতিহাসের নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে। একটি জাতি যদি আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় তবে তাকে অবশ্যই হতে হয় ইতিহাস সচেতন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছিল স্বাধীনতা আর ভারত চেয়েছিল তার আধিপত্য। ১৯৭১ সালে ভারত যুদ্ধে জড়ায় তার জাতীয় স্বার্থে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের চেয়ে চিরশত্রু পাকিস্তানকে ভেঙে দুর্বল করাই ছিল তার লক্ষ্য। একদিকে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার স্পৃহা, অন্যদিকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র—এর ভেতরে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয় কীভাবে ভারতের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। এদেশের মানুষ কখনও চায়নি বাংলাদেশ ভারতের উপগ্রহ হয়ে থাকুক। এই কারণেই বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগানের প্রয়োজন হয়েছে আমাদের পৃথক পরিচয় সুনির্দিষ্ট করার জন্য। মনে রাখতে হবে, বাঙালি মুসলমানরাই লড়াই করে একটা পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বাঙালি হিন্দুরা পারেনি বা তা করতে চায়নি। জয় বাংলা স্লোগানটা প্রথম চালু করেন বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী রাজনীতিকরা। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী রাজনীতি শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে। যে রাজনীতি পূর্ববঙ্গের পৃথক অস্তিত্ব মেনে নেয়নি। জয় বাংলা তাই বাংলাদেশের মানুষের আত্মপরিচয়ের কোনো সহায়ক স্লোগান নয়। এই স্লোগান কেন আওয়ামী লীগ ফিরিয়ে নিয়ে এল সেটা বুঝতে আমাদের একটু পেছনে ফিরতে হয়। আওয়ামী লীগ তৈরি হয় মুসলিম লীগ ভেঙে। মুসলিম লীগের বড় বড় নেতাই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী—এরা ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের বড় বড় নেতা। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ইতিহাসকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। একটি পর্ব হলো আওয়ামী মুসলিম লীগ পর্ব। এ সময় দলের আদর্শিক ভিত্তি ছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদ। এর পরের পর্ব আওয়ামী লীগ পর্ব। এর মধ্যে মুসলিম জাতীয়তাবাদের কিছুই নেই। এই পর্বে এসে আওয়মী লীগ মুসলিম জাতীয়তাবাদ স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পরিত্যাগ করে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা অস্বীকার করে। বিভাগপূর্বকালে কংগ্রেস যেসব যুক্তি দিয়ে মুসলিম জাতীয়তাবাদকে সমালোচনা করত, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবীরা সেই একই কায়দায়, একই যুক্তির ভিত্তিতে মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। এই পর্বে এসে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক চেতনার দিক দিয়ে কংগ্রেসের অনুগামী হয়ে পড়ে এবং ক্রমান্বয়ে ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আওয়ামী লীগের এই ভারত-নির্ভরতা আজও অটুট রয়েছে।
যারা জয় বাংলা স্লোগানের পক্ষপাতী তারা বাঙালি জাতিসত্তার অবিভাজ্যতায় বিশ্বাসী। তারা হয়তবা এখনও স্বপ্ন দেখেন, দুই বাংলা আবার এক হবে। দুই বাংলার পুনর্মিলন হয়ত সম্ভব হয়ে উঠবে। এরকম চিন্তা রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তিকর এবং আমাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার জন্য রীতিমত হুমকিস্বরূপ।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই একদল শিল্পী বুদ্ধিজীবী তারস্বরে বলতে থাকেন, ভারতের ও আমাদের সংস্কৃতি এক, ইতিহাসও এক। গান-বাজনা সেমিনারের মাধ্যমে বারবার একথা ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় বাংলা ভাগ, দেশ ভাগ ছিল মস্তবড় ভুল। ওপার থেকে বড় বড় বুদ্ধিজীবী এসে সবক দিয়ে যান, আমাদের অবিভাজ্যতার সারবত্তা নিয়ে। এসব প্রচার- প্রোপাগাণ্ডার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আমাদের জাতিসত্তা ও আত্মপরিচয় নিয়ে কুয়াশা ও সঙ্কট সৃষ্টি করা এবং জনগণকে মানসিকভাবে ভারতনির্ভর করে তোলা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের এই অবিভাজ্যতার তত্ত্ব মোকাবিলা করার জন্য মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের স্বতন্ত্র সত্তার কথা বলেন এবং বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগানটা জোরেশোরে জনপ্রিয় করে তোলেন। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শব্দ দুটি এখন একটা শুধু রাজনৈতিক দলের স্লোগান নয়। এটা আমাদের আত্মপরিচয় ও পৃথক অস্তিত্বের ঘোষণাও বটে। বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। এ দলটাকে শুধু রাজনীতি করলেই চলবে না। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পক্ষে যে সংস্কৃতি তাকেও বিকশিত করে তুলতে হবে। জয় বাংলা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের আড়ালে যে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অভিযান চলছে তাকে মোকাবিলা করতে হলে এদেশের মানুষের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদ যার অন্যতম ভিত্তি মুসলিম জাতীয়তাবাদ—তাকে এগিয়ে নিতে হবে। রাজনীতি ও সংস্কৃতি যদি হাত ধরাধরি করে না চলে তবে শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক আন্দোলনের ভেতর দিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া সম্ভব কিন্তু সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের মানসগঠন হয়, যা একটি জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণাকে শক্ত বুনিয়াদের ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন